ভালোবাসাটা ছিল অবুজ

নিরবের মোবাইল বেজে যাচ্ছে।
–হ্যালো। বল।
–তুই বিকেলে বগুড়া আসতে
পারবি?
ওপাশ থেকে মিতু বললো।
–অবশ্যই পারবো। বান্দা এনিটাইম
হাজির। কখন আসতে হবে?
–বিকেল ৫ টার মধ্যে।
–ওকে। আইএম কামিং মাই ডিয়ার।
বিকেল পাঁচটা….বগুড়া সেন্ট্রাল শহীদ মিনার।
মিতুকে আজ বিষন্ন মনে হচ্ছে।
–মন খারাপ?
মিতুর কোনো জবাব নেই।
–কি হলো? কথা বল। উফ কি গরম
রে বাপ!! আইসক্রিম খাবি? নিয়ে
আসি?
মিতুর জবাব নেই।নিরব আইসক্রিম
নিয়ে হাজির।
–এই নে। খা। কিরে ধর!! কতক্ষণ ধরে
থাকবো? না খেলে বল, আমিই দুইটা
সাবাড়
করে দিচ্ছি।
হাঃ হাঃ হাঃ
–তুই আমার বাসায় আর আসিস না।
আমার
সাথে দেখা করার চেষ্টা করিস
না। ফোনে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা
করিস না।
গম্ভীর ভাব নিয়ে কথা গুলো বললো
মিতু।
নিরব তেমন পাত্তা দিলো না। এই আর
নতুন কিছু না। মিতু মাঝে মাঝেই
এমন করে। আবার
ঠিক হয়ে যায়।
–এই নে গল্পের বই। তোর জন্য এনেছি।
পড়া শেষে দিয়ে দিবি। বললো নিরব।
–না। নিবো না। আমি চাই না তুই
বইয়ের বাহানা ধরে আমার সাথে
কোনো প্রকারের দেখা করার
চেষ্টা করিস। আমি যাচ্ছি। একটা
রিকশা করে দে তো। নিরব কিছু বুঝে
ওঠার আগেই মিতু রিকশায় ওঠে, হুড
উঠিয়ে চলে গেলো। নিরব কিছুই বুঝতে
পারলো না। বুঝবে কি করে!!
বেচারা মিতুর কথাগুলোই যে
এখনো হজম করতে পারলো না। বাসে
বসে বসে ভাবছে এমন আচরণ করার
কারন কি? আমি কি কোনো ভুল
করেছি? কেনো এমন করলো? বাসায়
গিয়ে ফোন দেবো। সব ঠিক হয়ে
যাবে। ভাবতে ভাবতেই
শেরপুর চলে এলো।
রাত ৮ টা বাজে। জলদি বাসায়
যেতে হবে।
.
দুইদিন পর…
নিরবের বাবাঃ ওই মেয়ের সাথে তোর
ঘোরাফেরা বন্ধ। যদি না পারিস,
সোজা ঘর
থেকে বের হয়ে যাবি। আমার
সোজা কথা।
বলেই হনহন করে নিরবের রুম ত্যাগ করলেন।
নিরব কিছুই বুঝছে না। কি হচ্ছে এসব!!
২ দিন ধরে মিতুও ফোন ধরছে না।
কি হচ্ছে এসব! রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে
গেলো নিরবের। অবশ্য ইদানীং ঘুম তেমন
হচ্ছে না।
ওঠে আগে ডাইনিং রুমে গিয়ে
ফ্রীজ
থেকে এক বোতল শীতল পানি বের
করে ডগডগ করে খেয়ে নিলো।
নিজের রুমে এসেই ওয়ার ড্রব খুলে
মিতুর
একটা ছবি বের করে চোখের সামনে
মেলে ধরে। নিরবের চোখ বেয়ে
টপটপিয়ে পানি পড়ছে। আজ প্রায় ৬
মাস হলো মিতুর
সাথে নিরবের কোনো ধরনের
দেখাসাক্ষাৎ
কিংবা কথাবার্তা হয় না। নিরব অবশ্য
চেষ্টা করেছে। গতকালও ফোন
দিয়েছিল। ওপাশ থেকে কেউ সাড়া
দেয়নি।
কিছুদিন পর…..
নিরব হাঁটছে। এখন কোথায় তা তার
জানা নেই। সকাল থেকে থেমে
থেমে হেঁটেই
চলছে। এখন সন্ধ্যা প্রায়। পকেট থেকে
মিতুর সেই ছবিটা বের করে
দেখলো। একটু পরপরই
সে এই কাজটি করছে। কিছু
খেতে ইচ্ছে করছে। দোকানিকে
বললো, ভাই একটা কলা দেন। দোকানি বললো, শুধু কলা?
শুভ্রঃ হুম।
কলা হাতে নিয়ে পকেটে
হাত
দিয়ে দেখলো পকেট শূন্য। মনে
পড়েছে।
আরে আমিতো কোনো টাকাই
আনিনি। মনে মনে হাসলো সে।
মামা খাবো না। ফেরত নেন। পানি হবে?
দোকানিঃ হ হইবো। ওই যে ড্রাম
থ্যাইকা তুইলা গেলাসে ঢাইলা
খান।
শুভ্রঃ টাকা লাগে নাকি?
দোকানিঃ না ভাই।
শুভ্রঃ তাহলে দুই গ্লাস খাই?
দোকানিঃ খান। আইচ্ছা ভাইজান,
আপনে কই
যাইবেন?
শুভ্রঃ জানি না…..
দোকানিঃ কই থ্যাইকা আইসেন?
শুভ্রঃ কোথাও থেকে আসিনি।
কোথাও
যাবো না।
প্রায় দেড় মাস পর…
নিরবের বাবার ফোন বাজছে। হ্যালো।
ভাইয়া, নিরবরে পাওয়া গেছে।
গাইবান্ধার রেলস্টেশনে।
ও এখন হসপিটালে। ডাক্তার বলছেন
উন্নত
চিকিৎসার জন্য বগুড়া নিয়ে
আসতে। আমি আসছি। সাথে আমার এক
বন্ধুও আছে। আপনি চিন্তা করবেন না।
আমরা এম্বুলেন্স নিয়ে এখনই বগুড়ার
উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
এতক্ষণ কথাগুলো নিরবের ছোট চাচার
ছিল।
বগুড়া মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের
বেডে নিরব শুয়ে আছে। দাড়িগোঁফ
অনেক বড়
হয়ে গেছে। শরীরে হাড় ছাড়া আর
কিছুই
দেখা যাচ্ছে না। নিরবকে চেনার
কোনো উপায়
নেই। একি হাল নিরবের! দুর থেকে নিরবের
মা ছেলেকে দেখে কাঁদছেন।
মাকে সান্তনা দিচ্ছে নিরবের
ছোটবোন। রোগীর সুস্থ হতে সময়
লাগতে পারে। আপনারা চাইলে
বাসায়
নিয়ে যেতে পারেন। বাসাই তার
জন্য একমাত্র নিরাপদ আর ভাল
জায়গা।
একমাস হয়ে গেলো ছেলের কোনো
উন্নতি দেখছেন না তার বাবা মা।
কথা নেই বার্তা নেই।
খালি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে
থাকে। চোখের পলকও ফেলে না। এই
কোন রোগ!! এভাবে কতদিন যাবে?
বসে বসে ভাবছেন নিরবের মা।
নিরবরে, ও নিরব। কথা বল বাবা।
ছেলের মাথার পাশে বসে মা
এভাবেই বলছিলেন।নিরবের কোনো
সাড়া নেই। ফ্যালফ্যাল
চাহনি ছাড়া। আরো বেশকিছুদিন
পর…
নিরবের পাশে মিতু। বসে আছে। কিছু
বলছে না। নিরবের সেই ফ্যালফ্যালানি
চাহনি।
মিতু কাঁদছে। চোখের পানি তার
গাল টপকিয়ে নিরবের শরীরে পরার
আগেই ওড়না দিয়ে মুছে নিলো।
একি!! নিরবের চোখের কোনেও জল। চোখ
থেকে জল গড়িয়ে কান বেয়ে পড়ছে।
মিতু দেখে সহ্য করতে পারলো না।
হয়তো তাই না দেখার ভান করে ওঠে
চলে গেলো।
সেদিনই ছিল নিরব আর মিতুর শেষ
দেখা।
আজ বহুবছর পর…..
কারো জন্য কারো জীবন থেমে
নেই। সবাই
নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। প্রকৃতির
নিয়মেই সবার
জীবন চলছে নিজ গতিতে। নিরবের
বাবা মার বয়স বেড়েছে। বৃদ্ধই বলা
চলে। ছোটবোনটা স্বামীর সংসার
করছে। একটা ৮ বছরের মেয়ে আছে।
নাম আফরোজা। ক্লাশ থ্রি তে পড়ছে।,
মিতু আর তার স্বামী দুজনই
একটা বেসরকারি ব্যাংকে জব
করছে। তাদেরও দুটো সন্তান আছে।
বড়টি ছেলে। আর ছোটোটি মেয়ে।
ছেলের নাম রুদ্র।
মেয়ের নাম তন্দ্রা। ছেলে ক্লাশ
থ্রি তে পড়ছে।
আর মেয়েটার বয়স ৩ বছর। আজ সকাল
সকাল ঘুম থেকে উঠেই মিতু বাইরে
যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ তার
কোনো কাজ নেই। আজ সে মুক্ত। কাজ
থাকলেও আজকে সব বাদ। কারন আজ
আজ ২৫ ডিসেম্বর। নিরবের
মৃত্যুবার্ষিকী।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়