পিচ্চি বলতে কিছুই নেই,সবাই সব কিছু বোঝে..
০৫-০৭-২০১০
মেয়েটির নাম রিহা,সাদিয়া
রিহা। বয়সে আমার বছর তিনেক ছোট
হবে। ছোট মেয়েদের উপর ক্রাশ
খাওয়ার মত এত বড় বিড়ম্বনা আর নেই।
যেই মেয়েটি ভাইয়া ভাইয়া বলে
গলা ফাটায় তাকে কখনো
ভালোবাসার কথা বলা যায়?
তাকে ভালোবাসাটাও তো
অন্যায়। আর আমি সে অন্যায়ই
করেছিলাম। আজকে সেই গল্পই বলছি।
ভালো লাগতো খুব ওকে কিন্তু
কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি পাছে ওর
মনে একটা বিরূপ ধারনা জমে এই
ভেবে যে যাকে বড় ভাইয়া বলে
ভাবলাম এতদিন আজ সে ও
ভালোবাসার কথা বলছে!!! তাই আর
কখনো বলা হয়নি ভালোবাসার
কথা।
ওর সাথে প্রতিদিন দেখা হতো।
আমি রাস্তার মোড়ে চায়ের
দোকানে বসে থাকতাম,ও কলেজে
যেত। কিংবা আমি যখন বিকেলে
বাসার সামনের গলিতে ক্রিকেট
খেলতাম,ও কোচিং থেকে
ফিরতো। যতবার দেখা হতো ততবারই
কথা হতো। ও নিজে থেকেই বলতো।
এই যেমন "কি ভাইয়া,
আজকে কি হাফ সেঞ্চুরি হবে?"
অথবা "রেড টি শার্টে তো
আপনাকে দারূণ লাগে ভাইয়া।"
আমি ও হেসে উত্তর দিতাম।
মাঝেমাঝে মজা করতাম,এই যেমন,
"কি প্রতিদিনই কি তোমার
কোচিং থাকে? নাকি কারো
সাথে দেখা করতে যাও।"
ভালো একটা সম্পর্কই ছিল বলা চলে।
সম্পর্কটার কোন নাম কিংবা সঙ্গা
ছিল না তবুও খুব ভালো ছিল। আমি
প্রতিদিন কারনে অকারনে ওদের
বাসার নিচের চায়ের
দোকানটাতে বসে থাকতাম,ঠিক
কি যেন একটা আকর্ষন টেনে নিয়ে
যেত আমাকে। ও বিকালে
বারান্দায় আসতো। আমি
মাঝেমাঝে আড়চোখে তাকাতাম।
ও ও আড়চোখে তাকাতো। যখনি
চোখে চোখ পড়তো দুজনেই অস্বস্তি
তে পড়ে হেসে উঠতাম। এ কিসের
অস্বস্তি আমি জানি না। তখন হয়তো
ওই প্রথমে জিজ্ঞেস করতো, "কেমন
আছেন ভাইয়া?"। আমি উত্তর দিতাম,
"ভালো,তুমি?"। ও মিষ্টি হেসে উত্তর
দিত, "খুব ভালো"।
ভালো লাগার এই ছোট ছোট মুহূর্ত
গুলো একদিন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে
গেল। সেদিন বিকেলে হঠাৎ এসে
রিহা বললো.....
--ভাইয়া,আপনার সাথে কিছু কথা
ছিল।
--হুম বলে ফেল।
--ঠিক কিভাবে যে বলবো বুঝতে
পারছি না।
আমি মজা করেই বললাম...
--কি? লাভ কেইস নাকি?
--হ্যা।
একমনে ফোন টিপছিলাম।রিহার
ছোট্ট হ্যা শব্দটা কানে যেতেই হাত
স্থির হয়ে গেল। বুকের ভেতর খুব
গভীরে কোথায় যেন পাজড় ভাঙার
কষ্ট অনুভূত হলো...জিজ্ঞেস করলাম...
--ভালোবাসো কাউকে?
--হ্যা।
নিজের অজান্তেই চোখ দুটো
ঝাপসা হয়ে এলো। বললাম...
--কাকে?
--শিহাব কে।
শিহাব রিহার ক্লাসমেট,পাড়ার
ছোট ভাই। খুব ভালো ছেলে। আমি
হেসে বললাম...
--ভালো তো। ও খুব ভালো ছেলে
তো। প্রব্লেম কি?
রিহা চোখ দুটো বড় বড় করে অবাক
হয়ে তাকালো আমার দিকে।
বললো...
--আপনার চেয়েও কি ভালো?
বুকের ভেতরের চাপা কষ্টগুলোকে
আরো চেপে রেখে বললাম...
--হ্যা।
রিহা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো
আমার মুখের দিকে।কে জানে হয়তো
ভালোবাসার ইঙ্গিত খুজলো। আমার
মাঝে কোন ভাবান্তরই আসলো না
কারন নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করার
মত গুণ টা আমার সেই ছোটকাল
থেকেই। আমি সবসময়ই এরকম চাপা
স্বভাবের।
এরপর থেকে রিহার সাথে আর তেমন
একটা দেখা হতো না। আমিই যেতাম
না ওদের বাসার সামনে,রাস্তার
মোড়ের চায়ের দোকানটায় আর বসা
হতো না,গলির ভেতরে ক্রিকেট ও
খেলতাম না। রিহা কি এখনো
বিকেলে বারান্দায় আসে? প্রশ্নটা
মাঝেমাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে
উঠতো বাট নিজেকে সংযত রাখতাম
অতি যত্নে।
০৫-০৬-২০১৫
আজকে অনেকদিনপর আবার এসেছি
এই এলাকায়। প্রায় বছর পাচেকআগে
চলে গিয়েছিলাম এই এলাকা
ছেড়ে। আগের সবকিছু কেন যেন নতুন
নতুন মনে হচ্ছে। এই পাচ বছরে অনেক
চেঞ্জ এসেছে এলাকায়। রাস্তার
মোড়ের সেই চায়ের দোকানটি আর
নেই। গলিতে আগে যেসব ছোট ছোট
ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতাম
তাদের কয়েকজনের সাথে দেখা
হলো রাস্তায়। অনেক বড় হয়ে গেছে
সবাই। হাটতে হাটতে রিহাদের
বাসার সামনে চলে এলাম। ওদের সবুজ
রংয়ের বিল্ডিং টা আজ নীল রং
ধারন করেছে। মনের অজান্তেই প্রশ্ন
চলে আসলো,রিহার কি বিয়ে হয়ে
গেছে?!
রিহাদের গেইটের সামনে আসতেই
গেইট খুলে একটা মেয়েকে বের হতে
দেখলাম। নীল রংয়ের থ্রি
কোয়ার্টার হাতার কামিজের
সাথে পাকিস্তানি ঢোলা
পাজামা আর গলায় পেচিয়ে রাখা
ওড়না পরিহিত মেয়েটিকে প্রথমে
ঠিক চিনতে পারলাম না। একটু পরেই
দেখলাম বছর তিনেকের একটি
বাচ্চা টুকটুক করে হেটে গেইট দিয়ে
বেরিয়ে এসে মেয়েটির হাত
ধরলো। বাচ্চাটিকে সাথে করে
মেয়েটি একটু সামনে এগিয়ে
আসতেই চিনতে পারলাম রিহা কে।
পাচ বছরে সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে
গেছে,আরো অনেক সুন্দর এবং পরিণত
হয়েছে। রিহা আমার সামনে দিয়েই
হেটে চলে গেল,খেয়াল করলো না
আমাকে। কে জানে করলে ও হয়তো
চিনতে পারে নি। পেছন থেকে
ডাকার শখ টা কে অনিচ্ছাসত্ত্বে ও
গলা টিপে হত্যা করলাম।
--আচ্ছা আমি একটু ওনার সাথে কথা
বলতে পারি?
পুরনো বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর
বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। পেছন
থেকে হঠাৎ ই সেই চিরপরিচিত
কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেয়ে একটা
হার্টবিট যেন মিস করলাম।বন্ধুরা
আমাকে একা রেখে উঠে গেল।
ফ্রেন্ড সার্কেল আবার এই জিনিসটা
খুব ভালো বুঝে। মেয়েলি যে কোন
কেইসেই তাদের সাহায্য অবধারিত।
রিহা আমার সামনে এসে বসলো।
ঝাড়া মিনিট দুয়েক দুজনেই চুপ করে
থাকার পর আমিই প্রথমে বললাম...
--ভালো আছো?
--আপনি দেশে ফিরেছেন কবে?
--আমি যে দেশের বাইরে ছিলাম
তুমি কীভাবে জানলে?
--পাল্টা প্রশ্ন করার স্বভাব দেখি
এখনো যায় নি। আমি আগে যে প্রশ্ন
করেছি তার উত্তর দিন।
--দুইদিন আগে। এবার বলো।
--আন্টি বলেছেন। মানে আপনার আম্মু।
--আচ্ছা ভালো তো।
--আপনি এমন কেন?
--কিরকম?
--আপনি কি মানুষ?
--কেন? তোমার কি অন্যকিছু মনে হয়?
-- উফ!! ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবেন না
একদম!
--তুমি জানতে আমি বাহিরে
ছিলাম,আম্মুর সাথে তোমার কথা ও
হয়েছে তাহলে তোমার বিয়েতে
আমাকে দাওয়াত দিলে না কেন?
এত কিপ্টামি করো কেন?
--ঐ কি বলতে চান আপনি? বিয়ে
মানে? কিসের বিয়ে? সকালে ঐটা
আমার কাজিনের ছেলে ছিল
সাথে।
--তারমানে তুমি সকালে আমাকে
দেখেছ? তাহলে ডাক দিলে না
কেন?
--ইশ! আমি কেন আগে ডাক দিব? আপনি
ও তো আমাকে দেখেছেন,আপনি
ডাকলেন না কেন?
--আমি ভাবলাম তোমার বিয়ে হয়ে
গেছে, তাই?
-- তাই? তাই কি? আমার যদি বিয়ে
হয়ে যায় তাহলে ডাক দেয়া যাবে
না! আপনি তো বড় ভাইয়া!!!
--হ্যা,সেটাও ঠিক।ভুল হয়ে গেছে।
--ভুল তো সেই পাচ বছর আগেই
করেছেন।
--পাচ বছর আগে? কি ভুল?
--আহা রে! ছোট বাবু! কিছু জানে না!
পাচ বছর আগে যে ছোট বোন কে
লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবেসে
ফেলেছেন,তার প্রেমের কথা শুনে
কষ্ট পেয়ে এলাকা ছেড়েছেন এগুলা
কি ভুল না?
--মানে কি এসবের?
--মানে কি জানতে চান? আপনি
এখনো সেই গ্রেড ওয়ান আতেল ই রয়ে
গেছেন। মহাশয়, আপনি যে আমাকে
ভালোবাসেন সেটা এই এলাকার
লোকজন থেকে শুরু করে কাকপক্ষী
এমনকি বিদ্যুতেে পিলাররা পর্যন্ত
জানে। আর আমি জানবো না? কিন্তু
দেখুন আপনি কখনো কিছু বললেনই না।
সারাদিন শুধু হা করে তাকিয়ে
থাকতেন আর মাঝেমাঝে টুকটাক
কথা বলতেন। যখন বুঝতে পারলাম যে
আপনি নিজে থেকে কখনোই বলতে
পারবেন না তখন নিজেই গিয়ে
আপনার কাছে শিহাবের নাম
বলেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার
ভালোবাসার কথা শুনে আপনি
রিয়্যাক্ট করবেন আর আপনার
ভালোবাসার কথাটা ও বলে
দিবেন। কিন্তু আপনি এতটাই গাধা
যে কিছুই বললেন না। কি যে রাগ
হয়েছিল জানেন? তারপর একদিন তো
এলাকা ছেড়েই চলে গেলেন। অনেক
কষ্টে যাও আপনাদের নতুন ঠিকানা
জোগাড় করলাম,শুনি আপনি হ্যাজ গন
টু ডগ আই মিন বাহিরে চলে গেছেন।
সেই থেকেই একটা স্বপ্ন দেখছিলাম
যে আপনার সাথে যেদিন দেখা
হবে সেদিন এত মারবো,এত মারবো
যে একদম মেরে ফেলবো।
রিহার কথাগুলো শুনে আমার মুখ হা
হয়ে গেল। কি বলে এসব এই মেয়ে?
--তুমি এত চালাক কেন?
--আপনি এত বুদ্ধু তাই!
রিহা উঠে চলে যেতে লাগলো।
কোন সাতপাচ না ভেবেই পেছন
থেকে ওর হাতটা ধরে থামালাম।
--আমার কিছু বলার আছে।
--আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন?
--নাহ্।
--আপনার কোন ফিজিক্যালি
প্রব্লেম আছে?
--ধূর এসব কিছু না!
--তাহলে যা বলার বিয়ের পরে
বইলেন। এখন আমার ঘুম
আসতেছে,বাসায় যাবো। কালকেই
আঙ্কেল আন্টি কে নিয়ে আসেন।
আব্বু-আম্মুকে আগে থেকেই বলা
আছে। আজকে দরকার হলে আবার
বলবো নে..
-- কি বলবা?
--কি আর বলবো? বলবো যে ছোট্ট
আতেল বাবুটার হাত ধরার সাহস
হয়েছে, বিয়ে করার ও বয়স হয়েছে।
তার একটু আদর দরকার....
কথাটুকু বলেই রিহা চলে গেল!! আর
আমি ভাবছি "কি ঝানু মেয়ে রে
বাবা!! সেই পাচ বছর আগেই বুঝতে
পেরেছিল যে ভালোবাসি! আর
আমি ভেবেছিলাম মেয়ে তো
পিচ্চি!! আসলে পিচ্চি বলতে কিছু
নেই,সবাই সব বুঝে।।।।
তারপর......
itz been continuing since then.....
মেয়েটির নাম রিহা,সাদিয়া
রিহা। বয়সে আমার বছর তিনেক ছোট
হবে। ছোট মেয়েদের উপর ক্রাশ
খাওয়ার মত এত বড় বিড়ম্বনা আর নেই।
যেই মেয়েটি ভাইয়া ভাইয়া বলে
গলা ফাটায় তাকে কখনো
ভালোবাসার কথা বলা যায়?
তাকে ভালোবাসাটাও তো
অন্যায়। আর আমি সে অন্যায়ই
করেছিলাম। আজকে সেই গল্পই বলছি।
ভালো লাগতো খুব ওকে কিন্তু
কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি পাছে ওর
মনে একটা বিরূপ ধারনা জমে এই
ভেবে যে যাকে বড় ভাইয়া বলে
ভাবলাম এতদিন আজ সে ও
ভালোবাসার কথা বলছে!!! তাই আর
কখনো বলা হয়নি ভালোবাসার
কথা।
ওর সাথে প্রতিদিন দেখা হতো।
আমি রাস্তার মোড়ে চায়ের
দোকানে বসে থাকতাম,ও কলেজে
যেত। কিংবা আমি যখন বিকেলে
বাসার সামনের গলিতে ক্রিকেট
খেলতাম,ও কোচিং থেকে
ফিরতো। যতবার দেখা হতো ততবারই
কথা হতো। ও নিজে থেকেই বলতো।
এই যেমন "কি ভাইয়া,
আজকে কি হাফ সেঞ্চুরি হবে?"
অথবা "রেড টি শার্টে তো
আপনাকে দারূণ লাগে ভাইয়া।"
আমি ও হেসে উত্তর দিতাম।
মাঝেমাঝে মজা করতাম,এই যেমন,
"কি প্রতিদিনই কি তোমার
কোচিং থাকে? নাকি কারো
সাথে দেখা করতে যাও।"
ভালো একটা সম্পর্কই ছিল বলা চলে।
সম্পর্কটার কোন নাম কিংবা সঙ্গা
ছিল না তবুও খুব ভালো ছিল। আমি
প্রতিদিন কারনে অকারনে ওদের
বাসার নিচের চায়ের
দোকানটাতে বসে থাকতাম,ঠিক
কি যেন একটা আকর্ষন টেনে নিয়ে
যেত আমাকে। ও বিকালে
বারান্দায় আসতো। আমি
মাঝেমাঝে আড়চোখে তাকাতাম।
ও ও আড়চোখে তাকাতো। যখনি
চোখে চোখ পড়তো দুজনেই অস্বস্তি
তে পড়ে হেসে উঠতাম। এ কিসের
অস্বস্তি আমি জানি না। তখন হয়তো
ওই প্রথমে জিজ্ঞেস করতো, "কেমন
আছেন ভাইয়া?"। আমি উত্তর দিতাম,
"ভালো,তুমি?"। ও মিষ্টি হেসে উত্তর
দিত, "খুব ভালো"।
ভালো লাগার এই ছোট ছোট মুহূর্ত
গুলো একদিন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে
গেল। সেদিন বিকেলে হঠাৎ এসে
রিহা বললো.....
--ভাইয়া,আপনার সাথে কিছু কথা
ছিল।
--হুম বলে ফেল।
--ঠিক কিভাবে যে বলবো বুঝতে
পারছি না।
আমি মজা করেই বললাম...
--কি? লাভ কেইস নাকি?
--হ্যা।
একমনে ফোন টিপছিলাম।রিহার
ছোট্ট হ্যা শব্দটা কানে যেতেই হাত
স্থির হয়ে গেল। বুকের ভেতর খুব
গভীরে কোথায় যেন পাজড় ভাঙার
কষ্ট অনুভূত হলো...জিজ্ঞেস করলাম...
--ভালোবাসো কাউকে?
--হ্যা।
নিজের অজান্তেই চোখ দুটো
ঝাপসা হয়ে এলো। বললাম...
--কাকে?
--শিহাব কে।
শিহাব রিহার ক্লাসমেট,পাড়ার
ছোট ভাই। খুব ভালো ছেলে। আমি
হেসে বললাম...
--ভালো তো। ও খুব ভালো ছেলে
তো। প্রব্লেম কি?
রিহা চোখ দুটো বড় বড় করে অবাক
হয়ে তাকালো আমার দিকে।
বললো...
--আপনার চেয়েও কি ভালো?
বুকের ভেতরের চাপা কষ্টগুলোকে
আরো চেপে রেখে বললাম...
--হ্যা।
রিহা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো
আমার মুখের দিকে।কে জানে হয়তো
ভালোবাসার ইঙ্গিত খুজলো। আমার
মাঝে কোন ভাবান্তরই আসলো না
কারন নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করার
মত গুণ টা আমার সেই ছোটকাল
থেকেই। আমি সবসময়ই এরকম চাপা
স্বভাবের।
এরপর থেকে রিহার সাথে আর তেমন
একটা দেখা হতো না। আমিই যেতাম
না ওদের বাসার সামনে,রাস্তার
মোড়ের চায়ের দোকানটায় আর বসা
হতো না,গলির ভেতরে ক্রিকেট ও
খেলতাম না। রিহা কি এখনো
বিকেলে বারান্দায় আসে? প্রশ্নটা
মাঝেমাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে
উঠতো বাট নিজেকে সংযত রাখতাম
অতি যত্নে।
০৫-০৬-২০১৫
আজকে অনেকদিনপর আবার এসেছি
এই এলাকায়। প্রায় বছর পাচেকআগে
চলে গিয়েছিলাম এই এলাকা
ছেড়ে। আগের সবকিছু কেন যেন নতুন
নতুন মনে হচ্ছে। এই পাচ বছরে অনেক
চেঞ্জ এসেছে এলাকায়। রাস্তার
মোড়ের সেই চায়ের দোকানটি আর
নেই। গলিতে আগে যেসব ছোট ছোট
ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতাম
তাদের কয়েকজনের সাথে দেখা
হলো রাস্তায়। অনেক বড় হয়ে গেছে
সবাই। হাটতে হাটতে রিহাদের
বাসার সামনে চলে এলাম। ওদের সবুজ
রংয়ের বিল্ডিং টা আজ নীল রং
ধারন করেছে। মনের অজান্তেই প্রশ্ন
চলে আসলো,রিহার কি বিয়ে হয়ে
গেছে?!
রিহাদের গেইটের সামনে আসতেই
গেইট খুলে একটা মেয়েকে বের হতে
দেখলাম। নীল রংয়ের থ্রি
কোয়ার্টার হাতার কামিজের
সাথে পাকিস্তানি ঢোলা
পাজামা আর গলায় পেচিয়ে রাখা
ওড়না পরিহিত মেয়েটিকে প্রথমে
ঠিক চিনতে পারলাম না। একটু পরেই
দেখলাম বছর তিনেকের একটি
বাচ্চা টুকটুক করে হেটে গেইট দিয়ে
বেরিয়ে এসে মেয়েটির হাত
ধরলো। বাচ্চাটিকে সাথে করে
মেয়েটি একটু সামনে এগিয়ে
আসতেই চিনতে পারলাম রিহা কে।
পাচ বছরে সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে
গেছে,আরো অনেক সুন্দর এবং পরিণত
হয়েছে। রিহা আমার সামনে দিয়েই
হেটে চলে গেল,খেয়াল করলো না
আমাকে। কে জানে করলে ও হয়তো
চিনতে পারে নি। পেছন থেকে
ডাকার শখ টা কে অনিচ্ছাসত্ত্বে ও
গলা টিপে হত্যা করলাম।
--আচ্ছা আমি একটু ওনার সাথে কথা
বলতে পারি?
পুরনো বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর
বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। পেছন
থেকে হঠাৎ ই সেই চিরপরিচিত
কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেয়ে একটা
হার্টবিট যেন মিস করলাম।বন্ধুরা
আমাকে একা রেখে উঠে গেল।
ফ্রেন্ড সার্কেল আবার এই জিনিসটা
খুব ভালো বুঝে। মেয়েলি যে কোন
কেইসেই তাদের সাহায্য অবধারিত।
রিহা আমার সামনে এসে বসলো।
ঝাড়া মিনিট দুয়েক দুজনেই চুপ করে
থাকার পর আমিই প্রথমে বললাম...
--ভালো আছো?
--আপনি দেশে ফিরেছেন কবে?
--আমি যে দেশের বাইরে ছিলাম
তুমি কীভাবে জানলে?
--পাল্টা প্রশ্ন করার স্বভাব দেখি
এখনো যায় নি। আমি আগে যে প্রশ্ন
করেছি তার উত্তর দিন।
--দুইদিন আগে। এবার বলো।
--আন্টি বলেছেন। মানে আপনার আম্মু।
--আচ্ছা ভালো তো।
--আপনি এমন কেন?
--কিরকম?
--আপনি কি মানুষ?
--কেন? তোমার কি অন্যকিছু মনে হয়?
-- উফ!! ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবেন না
একদম!
--তুমি জানতে আমি বাহিরে
ছিলাম,আম্মুর সাথে তোমার কথা ও
হয়েছে তাহলে তোমার বিয়েতে
আমাকে দাওয়াত দিলে না কেন?
এত কিপ্টামি করো কেন?
--ঐ কি বলতে চান আপনি? বিয়ে
মানে? কিসের বিয়ে? সকালে ঐটা
আমার কাজিনের ছেলে ছিল
সাথে।
--তারমানে তুমি সকালে আমাকে
দেখেছ? তাহলে ডাক দিলে না
কেন?
--ইশ! আমি কেন আগে ডাক দিব? আপনি
ও তো আমাকে দেখেছেন,আপনি
ডাকলেন না কেন?
--আমি ভাবলাম তোমার বিয়ে হয়ে
গেছে, তাই?
-- তাই? তাই কি? আমার যদি বিয়ে
হয়ে যায় তাহলে ডাক দেয়া যাবে
না! আপনি তো বড় ভাইয়া!!!
--হ্যা,সেটাও ঠিক।ভুল হয়ে গেছে।
--ভুল তো সেই পাচ বছর আগেই
করেছেন।
--পাচ বছর আগে? কি ভুল?
--আহা রে! ছোট বাবু! কিছু জানে না!
পাচ বছর আগে যে ছোট বোন কে
লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবেসে
ফেলেছেন,তার প্রেমের কথা শুনে
কষ্ট পেয়ে এলাকা ছেড়েছেন এগুলা
কি ভুল না?
--মানে কি এসবের?
--মানে কি জানতে চান? আপনি
এখনো সেই গ্রেড ওয়ান আতেল ই রয়ে
গেছেন। মহাশয়, আপনি যে আমাকে
ভালোবাসেন সেটা এই এলাকার
লোকজন থেকে শুরু করে কাকপক্ষী
এমনকি বিদ্যুতেে পিলাররা পর্যন্ত
জানে। আর আমি জানবো না? কিন্তু
দেখুন আপনি কখনো কিছু বললেনই না।
সারাদিন শুধু হা করে তাকিয়ে
থাকতেন আর মাঝেমাঝে টুকটাক
কথা বলতেন। যখন বুঝতে পারলাম যে
আপনি নিজে থেকে কখনোই বলতে
পারবেন না তখন নিজেই গিয়ে
আপনার কাছে শিহাবের নাম
বলেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার
ভালোবাসার কথা শুনে আপনি
রিয়্যাক্ট করবেন আর আপনার
ভালোবাসার কথাটা ও বলে
দিবেন। কিন্তু আপনি এতটাই গাধা
যে কিছুই বললেন না। কি যে রাগ
হয়েছিল জানেন? তারপর একদিন তো
এলাকা ছেড়েই চলে গেলেন। অনেক
কষ্টে যাও আপনাদের নতুন ঠিকানা
জোগাড় করলাম,শুনি আপনি হ্যাজ গন
টু ডগ আই মিন বাহিরে চলে গেছেন।
সেই থেকেই একটা স্বপ্ন দেখছিলাম
যে আপনার সাথে যেদিন দেখা
হবে সেদিন এত মারবো,এত মারবো
যে একদম মেরে ফেলবো।
রিহার কথাগুলো শুনে আমার মুখ হা
হয়ে গেল। কি বলে এসব এই মেয়ে?
--তুমি এত চালাক কেন?
--আপনি এত বুদ্ধু তাই!
রিহা উঠে চলে যেতে লাগলো।
কোন সাতপাচ না ভেবেই পেছন
থেকে ওর হাতটা ধরে থামালাম।
--আমার কিছু বলার আছে।
--আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন?
--নাহ্।
--আপনার কোন ফিজিক্যালি
প্রব্লেম আছে?
--ধূর এসব কিছু না!
--তাহলে যা বলার বিয়ের পরে
বইলেন। এখন আমার ঘুম
আসতেছে,বাসায় যাবো। কালকেই
আঙ্কেল আন্টি কে নিয়ে আসেন।
আব্বু-আম্মুকে আগে থেকেই বলা
আছে। আজকে দরকার হলে আবার
বলবো নে..
-- কি বলবা?
--কি আর বলবো? বলবো যে ছোট্ট
আতেল বাবুটার হাত ধরার সাহস
হয়েছে, বিয়ে করার ও বয়স হয়েছে।
তার একটু আদর দরকার....
কথাটুকু বলেই রিহা চলে গেল!! আর
আমি ভাবছি "কি ঝানু মেয়ে রে
বাবা!! সেই পাচ বছর আগেই বুঝতে
পেরেছিল যে ভালোবাসি! আর
আমি ভেবেছিলাম মেয়ে তো
পিচ্চি!! আসলে পিচ্চি বলতে কিছু
নেই,সবাই সব বুঝে।।।।
তারপর......
itz been continuing since then.....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন