আবেগের ভালোবাসা
সকাল সকাল আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। বাবা নাকি মস্ত বড় একটা রুই মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন বাসায়। এটা এখন দেখতে যেতে হবে।
- রাসেল, আয় দেখে যা তোর বাবা কত বড় মাছ এনেছে।
- যাও আসছি আমি।
.
বিছানা থেকে উঠতে যাব এই মূহুর্তে ইভার ফোন।
- এই কি করো?
- ঘুম থেকে উঠলাম। তুমি?
- বড়ই আচার খাই
- শোনো, হয়েছে কি জানো?
- কি?
- বাবা নাকি ইয়া বড় মাছ নিয়ে এসেছে বাসায়।
- হুম, আমার একটা ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।
- বলো
- বিকালে সেন্ট্রাল গার্ডেনের পাশে দেখা করো, তোমার দেয়া আংটিটা নিয়ে যেও।
- কেন?
- বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
- সত্যি?
- হুম, খুশিঁ হয়েছ তুমি?
- তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আমি খুশিঁ হবো?
- কিছুই করার নাই রাসেল।
.
কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না, ফোন রেখে দিল ইভা। আম্মু আবার ডাকতে এলো আমাকে, পিছন পিছন বাবাও।
- কিরে চল, মাছটা দেখবি
- বাবা আমার ভাল লাগছে না।
- ভাল লাগছে না কিরে, চল
.
বাবার জোড়াজোড়িতে মাছ দেখতে যেতেই হলো। কিন্তু আমার কিছুই ভাল লাগছে না। বাবা মন খারাপ করলেন। আমি নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।
.
ইভা আমাকে ২৯৯ টা চিঠি লিখেছে। সব কয়টা নিয়ে বসেছি। রুমে আগুন জ্বালিয়ে আর একটা বেনসন সিগারেট জ্বালিয়ে একটার পর একটা চিঠি পুড়ছি আমি। একটা প্যাকেটে ওর হাসিমাখা ছবি দেখে আর পুড়তে পারলাম না। এই মেয়েটিকে আমি বিগত ৫৯৬ দিন জীবনের সবচেয়ে বেশী ভালবেসেছি।
.
আম্মু আমার রুমে এসে এসব পোড়ানো কাগজ দেখে একপ্রকার কান্না শুরু করে দিলেন। আমার হাতে ইভার পোড়া ছবি, স্নিগ্ধ ঠোটেঁর আভা এখনো ঝলমল করছে। আম্মু বিষয়টা বুঝে কিছুটা সান্ত্বনা গোছের কথাবার্তা বললেন। কিন্তু মনে মনে ইভার উপর আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল।
.
আমি রাগ করে বেশীক্ষন থাকতে পারিনা। রাগটা তখনি ঝারতে হয়। ইভাকে ফোন দিলাম, সব রাগ উগড়ে দিব আজ।
- হ্যা বলো রাসেল
- কি করো
- ও ফোন দিছিলো। কথা বললাম।
- ও টা কে?
- যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
- ঐ ব্যাটা তোমাকে ফোন দিবে কেন?
- এটা কেমন কথা রাসেল?" ও তো ফোন দিতেই পারে।
- না, বলবা বিয়ের পরে যেন ফোন দেয়।
- পারবো না। ফোন রাখো।
.
মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলাম বিকালে গিয়ে আংটিটা নিয়ে আসবো, কোনো কথা বলবো না।
.
বিকাল ৪ টা, ইভা লাল সাদা একটা শাড়ি পড়েছে। সাধারণত সে শাড়ি পড়ে না, আজ কেনো পড়লো বুঝতে পারলাম না।
- শাড়ি পড়েছো কেন?
- ও পছন্দ করে।
- উনি পছন্দ করে বলে পড়েছো। আর আমি যে প্রতিদিন বলি, সেটা তো শুনো না।
- তোমার কথা শুনবো কেন?
- ইভা ২৯৯ টা চিঠি কি মিথ্যা?
- চিঠি? এগুলো ছিল পাগলামি।
- পাগলামি? তুমি এমন বলতে পারো না।
- রাখো তো তোমার প্যাচাল, এই নাও।
- কি এটা?
- এখানে তোমার দেয়া আংটিটা আছে আর একটা চিঠি। এই আমার ৩০০ তম চিঠি।
- আবার চিঠি কেন?
- ৩০০ চিঠি পূর্ণ করলাম।
- আচ্ছা আমি যাই, আমার ভাল লাগছে না।
- যাবা? যাও।
.
বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে ইভার দেয়া বাক্সটা খুললাম। একগাদা গোলাপের পাপড়িতে ভরা বাক্স। চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে বসলাম।
.
“এই যে আমার বোকা বাবু, আমি বললাম আমার বিয়ে ঠিক। আর তুমি সেটাই বিশ্বাস করে নিলে। আমার ভালবাসা কি এতই সস্তা? আমি ভালবাসি তোমাকে, বুঝেছ বোকাবাবু? আমি একটা পরীক্ষা করলাম। আমার বিয়ের কথা শুনে তুমি যদি আমার চিঠিগুলো পুড়িয়ে ফেলো তবে মনে করবো তুমি আমাকে ভালবাসনি। ভালবাসার মানুষের স্মৃতি ধরে রাখাটা ভালবাসার একটা অংশ। আমি আসছি চিঠি গুলো দেখতে।
”
.
আম্মু আমাকে ডাকছে।
- রাসেল, কি করিস?
- কিছুনা।
- ইভা আসছে, হাতে গোলাপ অনেকগুলো।
- যাও আমি আসছি
.
আমি ঘামছি। উঠে দাড়িয়ে আবার বসে পড়লাম, হাত পা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে। ইভা চলে এলো আমার রুমে।
- ইভা তুমি?
- হ্যা আমি, আমার চিঠিগুলো কই?
- হাতে থাকা চিঠিটা ইভার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।
- আরো বাকি ২৯৯, নিয়ে আসো
.
আমি অবাক বিস্ময়ে ইভার দিকে তাকিয়ে আছি। তবে কি আমি ইভাকে ভালবাসিনি?" ইভা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। “রাসেল এটা ভালবাসা না, এটা আবেগ। ভালবাসা হচ্ছে মনের ভিতর পুষে রাখা আকুতি। নিরবে ভালবাসার মানুষটির সুখ কামনা করা। রাগের বশবর্তী হয়ে তুমি যেটা করলে সেটা ভালবাসা হতে পারে না।
.
আমি কিছুই বলতে পারছি না, মনের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। আমি বুঝতে পারছি, আমি ইভা কে ভালবাসতে শুরু করেছি, যেটা শুধুই ভালবাসা। এখানে আবেগের স্থান খুব অল্প। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ইভা চলে যাচ্ছে, এই বুক খালি করে দিয়ে দূরে, অনেক দূরে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন