অপেক্ষা শুধু বর্ষণের

-কিরে কই তুই?(সাথি)
--অামি তো বাড়িতে!(আমি)
-তাড়াতাড়ি অামার বাড়ির সামনে অায়!
--তোর বাড়ির সামনে?এতো রাতে কেনো?কয়টা বাজে দেখছিস?
-মাত্র দশটা বাজে। তাড়াতাড়ি অায়। না হয় খুব খারাপি অাছে।
--কি খারাপি অাছে? যত খারাপি থাক।অামি অাসবো না।
-হ্রামি তাড়াতাড়ি অাসবি। সময় মাত্র ১৫ মিনিট।
--২৫ মিনিটের রাস্তা পনের মিনিটে কেমনে অাসবো?
-কেমনে অাসবি জানিনা। তবে না অাসলে খবর আছে।
.
কিছুক্ষণ পরসাথি আবার ফোন দিলো আমাকে-
.
-কিরে এত লেইট করছিস কেনো?
--জ্বী মহারাণী আসছি
-তাড়াতাড়ি অায়। না হয় আমি একাই চলে যাব।
--আচ্ছা
কখন থেকে সাইকেল চালাচ্ছি কিন্তু এখনো পৌঁছাতে পারলাম না।একঘন্টা হয়ে গেছে মনে হয়।সাথি এবার আমার নাক কান সব ছিড়ে ফেলবে মনে হচ্ছে।অবশেষে পৌছালাম। কিন্তু সাথি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
--কিরে সাইকেল অানলি কেনো?সাইকেল ছাড়া কি চলতে পারিস না।
-না পারি না।তোর কি তাই!
--আমার কিছু না বাট সাইকেলের সাথে তোকে বিয়ে দিবো!
-এ্যাহহ আমার পিছে কত মেয়ের লাইন জানিস...
--হুম জানি জানি।চল যাই!
-যাই মানে? কোথায় যাব?
--নদীর দিকে যাবো।
-তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? এই রাতের বেলা নদীর পাড়ে যাবি।অামি যেতে পারবোনা!
--তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে। রাত মাত্র ১০টা বাজে। দেখছিস কত সুন্দর চাঁদ? চারদিকে চাঁদের অালো ঝলমল করছে। উফ কত ভালো লাগছে। অামি এরকম চাঁদনী রাতে ঘরে বসে থাকতে পারবোনা। তাই নদীর পাড়ে গিয়ে এই জ্যোৎস্না ভরা রাতটাকে উপভোগ করতে চাই আর গাছের পাতার ফাকে ফাকে টিপটিপ করে জ্বলতে থাকা জোনাক পোকা ধরতে চাই।
-তুই কর গিয়ে উপভোগ। অামি গেলাম।
--যা দেখি তোর কত বড় সাহস। অামি চিৎকার করে লোক ডাকব। অার বলবো তুই অামার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস।
-উফ অাচ্ছা যাচ্ছি। তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারবনা।
.
-সাথি চল এবার বাসায় ফেরা যাক।কয়টা বাজে দেখেছিস? ১২টা বাজে চল।
--অারে দাঁড়া না।এতো তাড়া কিসের। তুই তো দেখছি মেয়েদের মতো ভয় পাস। অামি যদি ছেলে হতাম তবে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াতাম।
-এই জন্যই তুই মেয়ে। হাহাহা।অাচ্ছা বাড়ি চল এবার।
--দাঁড়া ঐ দিকটাই যাই। ঐ দিকটাতে যাওয়া হয়নি।
-অারে কই যাস। ঐদিকে যাসনা গর্ত আছে
--দেখ কিছুই নাই।বাট কত্তো কত্তো জোনাকি
-পড়লে বুঝবি
-রআআআআআহাদ(চিৎকার করে)
--সাথি.........
.
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম।ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে কিন্তু তাও ঘামছি।রান্নাঘর থেকে আম্মা চলে এসেছে
--কিরে চিৎকার দিলি কেনো?
-চিৎকার দিয়েছি?
--চিৎকার দিয়েছিস মানে। কার নাম ধরে খুব জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলি।কয়টা বাজে জানিস? ৮:৩০ বাজে।
-কিহ? তুমি অারও অাগে ডাক দাওনি কেনো মা? অামার অফিস।
--তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়েনে। অামি নাস্তা দিচ্ছি।
-ওকে যাও মা।
.
এই স্বপ্নটা আজকে অাবার দেখলাম। যে মানুষটি লাইফ থেকে চলে গেছে, তাকে অাজও মনে পড়ে। সাথি অামার বেস্ট ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড বললেও ভুল হবে। অামি ফ্রেন্ডের বাহিরেও বেশি কিছু ভাবতাম। হ্যাঁ সেটা ভালবাসা। তার প্রতি সবসময় অামার অনুভূতিটা কাজ করতো। তবে বুঝাতে পারতাম না।তার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূরন করতে খুব ভালো লাগতো। অাজ যে স্বপ্নটা দেখলাম। অাসলে এটা যে স্বপ্ন তা নয়,সত্যি সত্যি সাথি প্রায় এমন করতো। মাঝ রাতে,সন্ধ্যা রাতে অামাকে ফোন করতো। যেনো তাকে নিয়ে ঘুরি।একদিন গর্তে পড়েছিল। সেইদিন অনেকটা কষ্টে তাকে গর্ত থেকে তুলেছিলাম সাথে অনেক বকা দিয়েছিলাম। সাথি কিছুই বলছিলো না।হালকা ফুপিয়ে আমার বুকে মাথা গুজেছিলো।সেদিন বুঝেছিলাম আমি সাথিকে কতটা ভালবাসি।
.
আমার সাথে সাথির কথা + দেখা হয়নি প্রায় ৩ বছর। এমনকি কোথায় অাছে তাও জানিনা। খুব ভালোই চলছিলো অামাদের দিনকাল। হঠাৎ একদিন সাথি অামাকে বলে ভার্সিটির কোন এক বড় ভাইয়ের সাথে তার রিলেশন অাছে। এই কথাটা শুনার পর অনেক কষ্ট হয়েছিলো। তবুও হাসি মুখে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম।
.
খুব কষ্ট হতো ।সাথির মুখে অন্য ছেলের কথা শুনলে।প্রতিটা দিন সাথি ছেলেটার সুনাম বলতো অামার কাছে। কষ্ট পেতাম।তাই তার থেকে দূরে যাওয়ার জন্যে অামি মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করি।অামার অন্য এক বান্ধবির সাথে প্লান করে, তার সামনে প্রেমের অভিনয় করি।ঠিক তখন থেকেই অামাদের দূরত্বটা বেড়ে যায়। অার কমেনি। কিন্তু সাথির অজানাই থেকে গেলো অামি যে তাকে ভালবাসতাম। অার এখনো ভালবাসি।
সাথির কথা ভাবলেই মন খারাপ করে।খেয়ে-দেয়ে অফিসে গেলাম।
অফিসে কাজ করছি কিন্তু কাজে মন বসছে না।অফিসের কলিগ বললো
--আজকে আবার মন খারাপ নাকি।
-হুম খারাপ একটু।
--ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যান।
-দেখি বসকে বলে।
আজকে তাড়াতাড়ি অফিস ছুটি নিয়ে চলে আসলাম। গোসল করে মাথায় হালকা তেল দিলাম।হালকা বাতাস যখন আমার চুলে লাগে তখন হালকা হালকা ভালো লাগে। আজ বিকেলে সাইকেল নিয়ে বের হলে কেমন হয়! যেমন কথা তেমন কাজ।
বিকেলে সাইকেল নিয়ে বের হলাম।রাস্তায় সুখীর সাথে দেখা হলো।সুখীর ফোকলা দাঁতের হাসি দেখলেই মনে হয় সুখী আসলেই অনেক সুখী।
-কিরে লাল গোলাপ এনেছিস নাকি?
--হ ভাইজান আপনের ফেবারিট লাল গুলাপ
-দে সবগুলা।
--হ নেন।
লাল গোলাপ আমার খুবই পছন্দের। ফুলগুলো সাইকেলের সামনে রেখে দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছি। হঠাৎ ফোনটা বাজতে লাগলো।ফোন বের করে দেখি অফিসের কলিগ ফোন দিয়েছে।
-জ্বী হাসিব সাহেব বলুন।
--কি অবস্থা তোমার?মন ঠিক আছে তো?
-হ্যা এখন একটু ভালো লাগছে।আপনি কি অফিসে?
--অফিস ছুটি হলো একটু আগে।এখনো বাসায় যাই নি।
-ঠিক মত বাসায় যান।
হঠাৎ ই সামনে স্কার্ফ বাধা কেউ একজন দাড়ানোর জন্য সাইকেল থামাতে হলো।
-আচ্ছা তাহলে আমি রাখ....
কথাটা শেষও করতে পারলাম না। স্কার্ফবাধা মেয়েটা এসে আমার কান টেনে দিলো।চরম অবাকতায় আমার ভ্রু জড়ো হয়ে গেল।কিছু বলতে যাওয়ার আগেই মেয়েটা বললো
--সেই কখন থেকে খেয়াল করছি আপনি সাইকেল চালাতে চালাতে কথা বলছেন।এটা ঠিক না।
আমি এতটাই অবাক হয়েছি যে কি বলবো বুঝতে পারছি না।রাগে মনে হচ্ছে কান দিয়ে ঝাল বের হচ্ছে। শুধু চোখ ছাড়া মেয়েটার আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। কি বলবো কি বলবো ভাবছি।
-তাই বলে কি অপরিচিত একজনের কান ধরে টেনে দিতে হবে?
--কেনো আগে বুঝি কেউ কান টেনে দেয়নি?
মেয়েটার চোখে দুষ্টুমির হাসি।একে কি আমি চিনি? কন্ঠ চোখ সবই পরিচিত।কিন্তু কে হতে পারে....ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি মেয়েটা সামনে নেই।একি গোলাপগুলো কোথায়?পিছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আমাকে ক্রস করে খানিকটা দূর চলে গেছে।আর তার হাতে দোল খাচ্ছে গোলাপগুলো।
সাইকেল চালিয়ে গেলাম মেয়েটার সামনে
-এই মেয়ে একে তো আপনি আমার কান টেনে দিছেন আবার আমার ফুল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
--তুই কি কোনোদিন কিছু বুঝবি না রাহাদ?
মেয়েটির মুখে নিজের নাম শুনে অন্তরে কেমন জানি খোচা লাগলো।পরক্ষণে একটা শব্দই উচ্চারিত হলো
-সাথি.....?
প্রশ্নটার কোনো উত্তর আসলো না।কেবল মৃদু হাসির শব্দ শুনলাম।আকাশে মেঘ ডাকছে।মেঘের শব্দ আর সাথির মৃদু হাসির শব্দ আমার কাছে অদ্ভুদ ভালো লাগছে।আর কোনো কথা না বলে সাথি চলে যাচ্ছে। ওকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। যতক্ষণ বৃষ্টি হলো ততক্ষণ ভিজলাম। কিছু একটা নেই। হুম কিছু একটা নেই। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। জ্বর এসে গিয়েছে। কাথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
জ্বরের ভিতর সাথির অস্তিত্ব অনুভব করছি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সাথি। কিন্তু এখানে সাথি আসলো কোথা থেকে।আম্মার স্পর্শ আমি চিনি। এটা সাথির স্পর্শ ছাড়া আর কারো স্পর্শ হতে পারে না।চোখটাও মেলতে পারছি না।
.
টানা চারদিন পর আমার জ্বর সারলো।আম্মার কাছে শুনলাম জ্বরে ঘোরে শুধু সাথির নাম বলছিলাম। আম্মা নিজে গিয়ে সাথিকে নিয়ে এসেছে।তাহলে জ্বরের মধ্যে সাথির অস্তিত্ব ঠিকই ধরেছিলাম।
-সাথিকে কেনো এনেছিলে আম্মা?
--তুই তো সাথিকে ভালবাসিস রাহাদ।আর সাথিকে দেখে বুঝলাম মেয়েটাও তোকে ভালবাসে।
-ও আমাকে ভালবাসে না মা।
--মানুষ চিনতে আমি ভুল করি না।তুই ওকে বলে দেখ। তোকে দেখতে সাথি আজকেও বিকেলে আসবে।
মায়ের কথায় কিছু বললাম না।সাথির আসার অপেক্ষা শুধু।
.
সাথি এসে একটা কথাই বললো
--রাহাদ চল ঘুরতে যাই।
-চল।
আজকে আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন।টানা পনের মিনিট ধরে হাটছি কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই।সাথে সাইকেল এনেছি। অন্যবার সাথি বকা দেয় কিন্তু আজ কিছুই বলছে না। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম
-কেমন আছিস?এখানে কবে আসলি!
--এসেছি অনেকদিন।স্কার্ফ বেধে চলাচল করি। তোকে প্রায়শই দেখি কিন্তু তুই হয়তো খেয়াল করিস নি।
হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়লাম।তুই হয়তো খেয়াল করিস নি কথাটা কানে বাজছে।সাথিকে কিছু বলা উচিত। হুম এখনই বলা উচিত।বলেই ফেললাম
-আমি তোকে ভালবাসি সাথি।
সাথি কিছু বলছে না।ও কি এবার আমাকে গল্পের মত থাপ্পড় দিবে? তারপর বলবে এই কথাটা বলতে এত টাইম নিলি কেনো হাদারাম? কিন্তু সাথি কিছুই বলছে না।ওর চোখের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম ওর চোখে পানি টলমল করছে। ওর চোখে পানি দেখে আমার চোখেও পানি চলে এসেছে।
আকাশে মেঘ ডাকছে।মনে প্রাণে চাচ্ছি যেন বৃষ্টি নামে! আমার চোখের পানি যেনো ও না দেখে।আকাশজুড়ে মেঘ ডাকছে।সাথির আর আমার চোখে পানি টলমল করছে! এখন অপেক্ষা শুধু বর্ষণের।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়