জ্যাকলিন টেন

Written by:Tanjina Akter Tania(হিমাদ্রির মেঘ)
.
.
নিজের তৈরী ফ্লাইয়িং যানটাতে করে প্রানপনে পালানোর চেষ্টা করছে ভিকি।তার নিজের তৈরী ফ্লাইয়িং যানটার নাম দিয়েছে সে এফ.জে. থার্টি টু।ভিকি এফ.জে. থার্টি টু'র গতি বাড়াচ্ছে আর বার বার আতংকভরা চোখে পেছন দিকে তাকাচ্ছে।তাকে ধাওয়া করেছে চারটি ড্রোন।বেশ কিছুদিন যাবৎই ড্রোনগুলো ওর পিছনে লেগেছে।ভিকি কিছুতেই বুঝতে পারছেনা যে কেন এই ড্রোনগুলো তাকে ধরতে চাইছে।কে পাঠাচ্ছে এই ড্রোনগুলো?তারতো কোন শত্রু নেই।
.
ভিকি চব্বিশ বছর বয়সের একজন উদীয়মান ইয়াং বিজ্ঞানী।এ পর্যন্ত ছোট খাটো অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছে সে।তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার করা এফ.জে. থার্টি টু।এটি অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন একটি ফ্লাইং যান।যার গতি ঘন্টায় সাতশো বিশ কিলোমিটার। ভিকি এই যানটা তৈরী করেছে ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে দীর্ঘ পথ স্বল্প সময়ে পারি দেয়ার জন্য এবং শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দ্রুত পালিয়ে যেতে।ভিকির সৃষ্টি এফ.জে. থার্টি টু আবিষ্কারের এক সপ্তাহের মধ্যেই সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।এই একটি মাত্র সৃষ্টি তাকে নিয়ে গেছে উচ্চতার মগডালে। কিন্তু ভিকি মনে হয় কল্পনাও করতে পারেনি কখনো যে তার এই সৃষ্টি আবিষ্কারের এক মাসের মধ্যেই এটি তার
নিজেরই পালানোর জন্য প্রয়োজন পরবে।
.
ভিকি অনেক চেষ্টা করেও পারলোনা।ড্রোনগুলো তার কাছে এসেই তার গায়ে বিষাক্ত ডার্ট ছুড়ে দিলো।তারপর তার আর কোন কিছু মনে নেই।অজ্ঞান হয়ে গেলো সাথে সাথে।
.
ভিকির যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে একটা আলোকসজ্জিত কক্ষে আবিষ্কার করলো।চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছে তার।কিছুতেই চোখের পাতি মেলে রাখতে পারছেনা।যতবারই চোখ খুলতে চেষ্টা করছে ততবারই চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।চোখ খোলে চার পাঁচ সেকেন্ডের বেশী থাকতে পারছেনা সে।ঠিক ঐ মুহুর্তে ভিকির চোখে মুখে অনেকটা পানি এসে পরলো।এবার ভিকি আস্তে আস্তে ভালো করে চোখ মেলে তাকালো।সে দেখলো তার সামনে একটি যান্ত্রিক রোবট দাড়িয়ে।রোবটটির হাতে একটি বালতি।ভিকি বুঝতে পারলো যে এই মাত্র তার চোখে মুখে এই রোবটটিই এক বালতি পানি ছিটিয়ে দিয়েছে।ভিকি দেখলো কক্ষটা অনেক বড়।কক্ষটার মধ্যে অনেকগুলো সেলফ,সেলফের ভেতর জার টেস্টটিউবসহ অনেক জিনিসপত্র।কক্ষটার মধ্যে বড় বড় চারটা টেবিল।বেশ সাজানো গোছানো।বুঝাই যাচ্ছে যে এটা একটা গবেষনাগার।ভিকি ভাঙা ভাঙা গলায় কৌতুহলী হয়ে রোবটটিকে জিজ্ঞাসা করলো
-কে তুমি?আমাকে ধরে এনেছো কেন?
-আমি জ্যাকোলিন টেন।আমি তোমাকে ধরে আনিনি।তোমাকে ধরে এনেছে আমার মনিব।
-তোমার
মনিব কে?
-বিজ্ঞানী জন নিকোলো।যাকে সবাই ডঃ নিকোলো নামেই চিনে।
-ওহ।সেই বিখ্যাতো বিজ্ঞানী নিকোলো?কিন্তু উনি আমাকে ধরে এনেছেন কেন?
-সাম্প্রতিক সময়ে মনিব একটি বিষাক্ত ভাইরাস তৈরী করেছেন।যেটা মানবদেহে প্রবেশ করালে মানুষ রক্তখেকো জন্তুতে পরিনত হয়।
-এরকম একটা খারাপ জিনিস উনি কেন তৈরী করেছেন?
-অষ্ট্রেলিয়ান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দশটি রক্তখেকো প্রানী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে।এই ধরনের প্রানী বিশ্বের কোন চিড়িয়াখানায় নেই।একেকটা রক্তখেকোর মূল্য অনেক বেশী।তাই আমার মনিব গবেষনা করে এই ভাইরাসটা তৈরী করেছেন দশজন মানুষকে রক্তখেকো বানিয়ে অষ্ট্রেলিয়ান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করবেন বলে।ইতিমধ্যে একজন মানুষের দেহে উনি এই ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে তাকে রক্তখেকো বানিয়েছিলেন কিন্তু মনিব তাকে খাঁচায় আটকে রাখতে পারেনি।খাঁচা ভেঙে পালিয়েছে।তাই রক্তখেকো তৈরী করতে আর তাকে আটকে রেখে অষ্ট্রেলিয়ান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের হাতে তোলে দিতে মনিবের আরেকজন সহযোগী প্রয়োজন।আর এই সাহায্যটা কোন সাধারন মানুষ বা রোবট করতে পারবেনা।এর জন্য আরেকজন বিজ্ঞানী প্রয়োজন।মনিব অনেককেই তার পার্টনার হতে প্রস্তাব করেছেন।কিন্তু মনিবের এই ঘৃন্য প্রস্তাবে কেউ রাজী হয়নি।তাই
তোমাকে উঠিয়ে এনেছে তাকে হেল্প করার জন্য।
.
জ্যাকোলিন টেনের কথা শেষ হতেই ভিকি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে বললো
-এতদিন জানতাম বিজ্ঞানীরা তাদের আবিষ্কার মানুষের কল্যানে ব্যবহার করে।মানুষের জীবন সহজ ও সুন্দর করতে বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন গবেষনা করে নানান কিছু আবিষ্কার করে।কিন্তু এখন দেখছি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী টাকার লোভে মানুষের জীবন নস্যাৎ করে দিচ্ছে।নিকোলোর এই কার্যকলাপ ফাঁস হয়ে গেলে সমগ্র সাইন্টিসদের বদনাম হয়ে যাবে।
.
প্রথম যে মানুষটিকে ডঃ নিকোলো রক্তখেকো বানিয়েছিলো,জ্যা
কোলিন টেন তার ভিডিও ফুটেজ দেখালো ভিকিকে।কি ভয়ংকর সে দৃশ্য!সিরিঞ্জের মাধ্যমে ছেলেটির দেহে ঐ ভাইরাস প্রবেশ করানোর বিশ মিনিটের মধ্যে মানুষটির চেহারা পরিবর্তন হতে লাগলো।ছেলেটির দাঁতগুলো,হাত পায়ের নখ,মাথার চুল,গায়ের লোম সবকিছু কিম্ভূতকিমাকার আকৃতিতে লম্বা লম্বা হয়ে যেতে লাগলো।মুখের আকৃতি পশুর মত হয়ে গেলো।একটা পুরুপুরি জন্তুতে পরিনত হবার পর এটার গায়ের শক্তি যেন দশগুন বেড়ে গেলো।বাঘের মত হুংকার দিতে লাগলো আর বড় করে হা করতে লাগলো।বিকটা আওয়াজ তোলে শব্দ করতে লাগলো তারপর খাঁচা ভেঙে পালিয়ে গেলো।ডং নিকোলো তখন ভয়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।জন্তুটা তখন কাছে থাকা জ্যাকোলিন টেনের উপর আক্রমন করলো।আর সাথে সাথে জ্যাকোলিন টেনের গলার কাছের একটা পার্টস ভেঙে গেলো।ভিডিওতে এই অংশটা দেখার সাথে সাথে ভিকি জ্যাকোলিন টেনের গলার দিকে তাকালো।হুম।ওখান
ে একটা পার্টস নতুন লাগানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।নিশ্চয়ই ডঃ নিকোলো মেরামত করে ফেলেছেন।
ঐ জন্তটাতো রক্তখেকো।তাই জ্যাকোলিন টেনের গলায় কামড় দিয়ে যখন বুঝতে পারলো যে এর গায়ে রক্ত নেই তখন ছেড়ে দিলো।
.
ভিডিও ফুটেজটা দেখে ভিকির গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।মানুষের এ কি বীভৎস রুপ দেখলো সে!ভিকি একটা আর্তনাদের স্বরে জ্যাকোলিন টেনকে জিজ্ঞাসা করলো
-এভাবে যে দশজন মানুষকে জন্তু বানানো হবে তোমার খারাপ লাগবেনা জ্যাকোলিন টেন?
.
ভিকির কথা শুনে যান্ত্রিক রোবটের চোখেও যেন পানি চলে এলো।সে বললো
-আমার অনেক খারাপ লেগেছে এটা ভেবে।আমি মনিবকে নিষেধ করেছিলাম এই ঘৃন্য কাজটা করতে।বলেছিলাম যে উনারতো অনেক টাকা পয়সা আছে।এই ঘৃন্য উপায়ে উপার্জন করার আর দরকার কি?মনিব আমাকে ডিরেক্ট বলে দিয়েছে যে যদি আমি উনার কাজে বাঁধা দেই তাহলে আমাকে ধ্বংস করে দিবে।এমনিতে অামি অামার খেয়াল খুশিমতন চলি।মনিব অামাকে নিয়ন্ত্রন করেন না।উনি সবসময় কোন না কোন কাজে ব্যাস্ত থাকেন।কিন্তু যদি কখনো উনার কাজের বিরোধীতা করি তাহলেই উনি রেগে যান।ভিকি জ্যাকোলিন টেনের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
.
টেবিলের দু পাশে বিপরীত হয়ে বসে আছে ডঃ নিকোলো আর ভিকি।ডঃ নিকোলোর হাতে একটা
জারের মধ্যে সবুজ কালারের কিছুটা তরল বস্তু।ডঃ নিকোলো ভিকিকে উদ্দেশ্য করে বললো
-জ্যাকোলিন টেন নিশ্চয়ই তোমাকে সব খোলে বলেছে যে,কেন তোমাকে উঠিয়ে এনেছি?এই হচ্ছে সেই ভাইরাস (জারটা দেখিয়ে বললো ডঃ নিকোলো)যেটা দিয়ে মানুষকে রক্তখেকো বানানো যায়।আমি এই ভাইরাসটার নাম দিয়েছি ট্রাইফার।তোমার বেশ কিছু কাজ অাছে তবে দুটো কাজ অাছে স্পেশাল।একটি হচ্ছে তোমার এফ.জে থার্টি টুতে করে ইয়াং পাঁচটি ছেলে আর পাঁচটি মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসা যাদেরকে আমি রক্তখেকো বানাবো।সবাইকে একদিনে আনতে হবেনা।প্রতিদিন একজন করে আনবে।একটা একটা করে রক্তখেকোগুলো আমি অষ্ট্রেলিয়ান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের হাতে তোলে দেব আর তারা দিবে আমাকে কারি কারি টাকা।হা হা হা....দাঁত বের করে অট্রহাসিতে ফেঁটে পরলো ডঃ নিকোলো ।ভিকির কাছে এই মুহুর্তে ডঃ নিকোলের হাসিটা রক্তখেকো সেই জানোয়ারটার মত লাগছে।হঠাৎই ডঃ নিকোলো হাসি থামিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে উঠলেন আর ভিকিকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-শুন,আমরা আরো এক মাস পর কাজ শুরু করবো। তোমাকে এক মাস সময় দিলাম এই এক মাসে এমন একটা ভেক্সিন আবিষ্কার করো যে ভেক্সিন দিলে রক্তখেকোর গায়ের জোড় এত কমে যাবে যে ইচ্ছে করলেই দু চারজন মানুষ এদের আটকে রাখতে পারবে।ভিকি মুখ ভার করে বললো
-আমি আপনার এই ঘৃন্য
কাজে সহযোগী হতে পারবোনা।
ভিকির কথা শুনে ডঃ নিকোলো আবার দাঁত বের করে হাসে।তারপর ভয়ংকর চেহারা করে দাঁত কিড়মিড়ি করে ভিকির থুতনিটা চেপে ধরে বললো
-যদি তুমি রাজী না হও তাহলে এই ট্রাইফার আমি তোমার উপর প্রয়োগ করতে বাধ্য হবো।কথাটা বলেই ডঃ নিকোলো গবেষনাগার কক্ষটা থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
ভিকি বসে কাঁদতে লাগলো।জ্যাকোলিন টেন তার মাথায় পরম মমতায় হাত রাখলো।ভিকি ঘুরে তাকালো তার দিকে।জ্যাকোলিন টেন বললো
-কেঁদোনা ভিকি।একজন বিজ্ঞানীর চোখে পানি শোভা পায়না।
-আমি এখন কি করবো জ্যাকোলিন টেন?
-তোমাকেতো মনিব রক্তখেকোর শক্তি কমাবার ভেক্সিন বানাতে বলেছে।তার জন্য এক মাস সময়ও দিয়েছে।তুমি এই সুযোগে মনিবের বলা ভেক্সিন বাদ দিয়ে এন্টিট্রাইফার ভেক্সিন বানানোর চেষ্টা করো।মনিবকে বলবে এটাই সেই ভেক্সিন যেটা সে বানাতে বলেছিলো।আর যখন তুমি রক্তখেকো বানানোর জন্য মানুষ আনতে যাবে তখন তাকে এই এন্টিট্রাইফার ভেক্সিন দিয়ে আনবে।এর পরে তার শরীরে মনিবার ট্রাইফার ভাইরাস ঢুকালেও আর কোন ফল হবেনা।ভিকির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ।সে অতি খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে জ্যাকোলিন টেনকে জড়িয়ে ধরলো।
.
ডঃ নিকোলো ভিকিকে পাহারা দেয়াসহ ভিকির যাবতীয় কাজে হেল্প করার জন্য জ্যাকোলিন টেনকে
নিযুক্ত করেছে।ভিকি আর জ্যাকোলিন টেন অবসর সময়ে খোশগল্প করে।জ্যাকোলিন টেন জানতে চায় এতো অল্প বয়সে কি করে ভিকি ফ্লাইং যান এফ.জে. থার্টি টু বানালো?ভিকি তার চিন্তাভাবনার গোড়া থেকে শুরু করে এফ.জে.থার্টি টু বানানোর শেষদিন পর্যন্তর গল্পটা তাকে শুনায়।জ্যাকোলিন টেন বায়না ধরে ভিকিকে তার এফ.জে. থার্টি টুতে করে ঘুরাতে হবে।ভিকিও কথা দেয় ডঃ নিকোলো তাকে মুক্ত করে দিলেই সে জ্যাকোলিন টেনকে নিয়ে তার ফ্লাইং যানে করে ঘুরতে যাবে।ভিকি জ্যাকোলিন টেনের নামটা ছোট করে রাখে জ্যাকো।জ্যাকোলিন টেন তার নতুন নামটা পেয়ে বেশ খুশি হয়।জ্যাকোও ভিকিকে ছোট করে একটা নাম দিতে চায়।কিন্তু পারেনা।কারন ভিকির নামটাতো এমনিতেই ছোট।এই ব্যাপারটা নিয়ে জ্যাকো আর ভিকি অনেক হাসে।জ্যাকো ভিকিকে চা,কফি,স্যান্ডউইচ করে খাওয়ায়।ভিকিও মাঝে মাঝে ভালোবেসে জ্যাকোর জন্য নুডলস,খিচুড়ি রান্না করে।জ্যাকো না খেতে পারলেও অনেক খুশি হয় এটা ভেবে যে কেউ একজন তাকে ভালোবেসে তার জন্য কষ্ট করে এসব বানায়।জ্যাকো ভিকির বানানো খাবারগুলো চামচ দিয়ে ঠোঁটের সাথে একটু একটু ছোঁয়ায় তারপর সেগুলো পরম মমতায় আবার ভিকির মুখে তোলে দেয়।মাঝে মাঝে জ্যাকো ঠোঁটে খাবার ছুঁইয়ে বলে
-ভিকি আজ নুডলসে লবন
বেশী
হয়ে গেছে,খিচুড়িতে তুমি পঁচা ডিম দিয়েছো,তাই খিচুড়ির স্বাদটাই নষ্ট হয়ে গেছে।কোন কোন দিন অবশ্য বলে আজ পারফেক্ট রান্না হয়েছে।ভিকি এসব শুনে ঠোঁট চেপে হাসে।আর ফিসফিসিয়ে বলে যার কিনা জিভেই নেই সে আবার টেষ্টও বুঝে। কোন কোন সময় ভিকির এই ফিসফিসানি কথা জ্যাকো শুনে ফেলে আর বলে কি বললে,কি বললে তুমি?আমার জিভ নেই বলে আমি টেস্ট নিতে জানিনা?বলেই জ্যাকো লাঠি নিয়ে ভিকিকে মারতে যায়।ভিকি পুরু রুম জুরে দৌড়ায় আর হাসে।ভিকি যখন ক্লান্ত হয়ে জিহ্বা বের করে হাঁপায় জ্যাকো তখন খুব মজা পায়।
.
মাঝে মাঝেই ভিকি হঠাৎ বিষন্ন হয়ে যায়।জ্যাকো এর কারন জানতে চাইলে বলে যে সে তার গার্লফ্রেন্ড রুজানার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।রুজানাও নিশ্চয়ই তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।একদিন মনিবেকে অনেক বলে জ্যাকো রুজানাকে ভিকির সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয়।দীর্ঘ আঠাশ দিন পর প্রেমিকাকে কাছে পেয়ে ভিকি তার কপালে চুম খায়।দুজনেই অনেক কান্নাকাটি করে।তাদের প্রেম দেখে জ্যাকোর মনেও যেন বেদনার উপস্থিতি দেখা দেয়।যন্ত্র মানবটা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকায়।রুজানা অনেক্ষন ভিকির বুকে মুখ লুকিয়ে রাখে।ভিকি তাকে আশ্বাস দেয় যে কিছুদিনের মধ্যেই সে মুক্তি পাবে।মুক্তি পেয়েই সে রুজানাকে
বিয়ে করবে।সুখের সংসার হবে তাদের।এবার রুজানা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভিকিকে।সেদিনের মত রুজানা চলে গেলো।যাবার বেলায় দু জোড়া চোখ আরো গভীরভাবে অশ্রুসিক্ত হলো।দুজন দুজনকে বিদায় দিতে চাইছিলোনা যেন।রুজানা চলে যাওয়ার ভিকি কান্নায় ভেঙে পরে।জ্যাকো আবারো পরম মমতায় ভিকির মাথায় তার যান্ত্রিক হাত বুলিয়ে দেয়।
.
পাকা ত্রিশদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ভিকি এন্টিট্রাইফার তৈরীকে সক্ষম হয়।কিন্ত ডঃ নিকোলো সেটাকে রক্তখেকোর শক্তি কমানোর ভেক্সিন রুপেই ধরে নেয়।সে আর সেটা পরীক্ষা করার প্রয়োজন মনে করেনি।
.
.
এ পর্যন্ত চার চারটি ইয়াং ছেলে মেয়ের দেহে ট্রাইফার প্রবেশ করানো হলো কিন্তু কেউই রক্তখেকোতে পরিনত হলোনা।ডঃ নিকোলোর মাথা প্রায় নষ্ট।এটা কি করে হতে পারে?প্রথম দিনতো কাজ হয়েছিলো তাহলে এখন কেন হচ্ছেনা।রাগে ডঃ নিকোলো তার গবেষনাগারের সবকিছু ভেঙে ফেলছেন।একটানা সাতদিন পানি ছারা আর কিছুই খান নি।ট্রাইফারকে উনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছেন।দেখছেন এতে কোন বারতি কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে কিনা যার দরুন এটা কাজ করছেনা।কিন্তু না।সেরকম কিছুই খুঁজে পেলোনা ডঃ নিকোলো।
.
রাতে শুয়ে শুয়ে জ্যাকো আর ভিকি আলাপ করছিলো।জ্যাকো বলছিলো
-তোমাকে যখন বাহিরে পাঠানো হয়
তুমি পালিয়ে কেন যাওনা?
-তোমার মনিব আমার ফ্লাইং যানে একটা রিমোট কন্ট্রোলিং ট্রেসার লাগিয়ে দিয়েছে ।আমি পালিয়ে গেলে উনি রিমোট চেপে দিবেন আর আমার এফ.জে.থার্টি টু ধ্বংস হয়ে যাবে।আমি যদি ট্রেসারটা খুলে নেই তবুও ডঃ নিকোলোর কম্পিউটার সেটা তাকে বলে দিবে।
-খুব ভালো করেছো সবার বডিতে এন্টি ট্রাইফার ঢুকিয়ে এখানে নিয়ে এসে।ব্যাটা এবার ট্রাইফার ভাইরাস মানবদেহে কাজ না করার শোকে পাগলই হয়ে যাবে।
-আস্তে বলো জ্যাকো। নিকোলো শুনতে পারলে কেলেংকারি হয়ে যাবে।
.
.
পরদিন সকাল বারোটার দিকে বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙলো জ্যাকো আর ভিকির।সেই বিকট আওয়াজ যেটা ভিকি ভিডিও ফুটেজে দেখা রক্তখেকোকে করতে শুনেছিলো।ভিকি আর জ্যাকো দৌড়ে গেলো শব্দটার দিকে।ডঃ নিকোলো তাদের দেখে হাসছে।ভয়ংকর হাসি হাসছে।খাঁচার দিকে চোখ যেতেই ভিকি আঁৎকে উঠলো।খাঁচার মধ্যে আস্তে আস্তে রক্তখেকো হয়ে উঠছে তার প্রিয়তমা রুজানা।চেহাড়াটা ক্রমশই বিভৎস হয়ে উঠছে।ভিকি দৌড়ে খাচার দিকে ছুটে যেতে লাগলো।জ্যাকো তাকে আটকালো।কারন খাঁচার কাছে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।জ্যাকোর অনুরুধে ভিকি কিছুটা রিলেক্স হলো।ডঃ নিকোলো ভিকিকে উদ্দেশ্য করে বললো
-আমার সাথে বেঈমানি করেছিস তোরা?দেখ এখন মজা কেমন।
.
ডঃ
নিকোলো এক সিরিঞ্জ ট্রাইফার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভিকির দিকে।জ্যাকো পেছন থেকে ডঃ নিকোলোকে জাপটে ধরে ভিকিকে বললো এফ.জে. থার্টি টু থেকে রিমোট কন্ট্রোলিং ট্রেসারটা খোলে ফেলতে আর পালিয়ে যেতে।ভিকি প্রথমে জ্যাকোকে বিপদে ফেলে যেতে রাজী হলোনা।কিন্তু জ্যাকোর প্রবল অনুরুধে রাজী হলো।পরদিন সকালে খবরের কাগজের হেডলাইন হলো "বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ নিকোলোর তৈরী রোবট জ্যাকোলিন টেন মানবকুলের জন্য ক্ষতিকর আশংকা করে সেটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে ডঃ নিকোলো" জ্যাকোলিন টেনের ধ্বংশ হয়ে যাওয়া বডির একটা ছবিও ছাপা হয়ে পেপারে।ওটা কেবলই পুড়া ছাই।ভিকি একবার সেই ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে দিলো।আজ ওর জন্যই শেষ হতে হয়েছে জ্যাকোকে।একসাথে প্রেমিকা আর বন্ধু জ্যাকোকে হারিয়ে ভিকি পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলো।আস্তে আস্তে সে শোক কাটিয়ে উঠলো।সে সিদ্ধান্ত নিলো রুজানার মুখ অবয়ব স্ক্যান করে সে একটি রোবট তৈরী করবে যার নাম দিবে জ্যাকোলিন টেন।আর সেই রোবটে টার্মিনেটর প্রোগ্রাম সেট করেই সে হত্যা করবে ডঃ নিকোলোকে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়