সুইসাইড
,
ভাবনার চরম পর্যায়ে এসে অন্য কিছুই আর ভাবা যায় না। তবে আমি এই মুহূর্ত্বে একটা ভাবনার চরম পর্যায়ে এসে বসে আছি। ভাবনাটা শেষ না করতেই আরেকটা ভাবনা আমার মাথায় চারপাশে ঘুরছে। ঠিক ঠাক মত জায়গা খুজে না পাওয়ার কারণে মাথায় ভিতর ঢুকতে পারছে না। তবে এই ভাবনার বিষয়টা খুবই জটিল তাই মাথার ভিতরে থাকা স্বল্প পরিমাণ জায়গায় তাকে স্থান দিতে পারছি না,,,,
ভাবনার বিষয় বস্তুটা আমাকে নিয়ে না আমার পরিবারকে নিয়েও না। আমার আশেপাশের কিছু মানুষকে নিয়ে যারা নিজেদের নিয়ে অনেকটা ডিপ্রেশনে আছে। ওনাদের মাঝে অনেকেই এটা ভাবে যে ওনাদের জীবনে আর কোনো কিছুই নেই সব কিছু শেষ। জীবনের অন্তিম পর্যায় চলে আসছে তাই নিজেকে নিয়ে এখন আর ওনারা তেমন একটা ভাবে না। ভাবার বিষয়টা খুবই জটিল তবে এই মুহূর্ত্বে আমার কাছে বিষয়টা কেমন একটা জটিল না।
,
আজকের ভাবনার বিষয়টা হচ্ছে "সুইসাইড"। মানুষ কেনো সুইসাইড করে?? কতটা কষ্ট পেলে সুইসাইড করে?? কতটা দুঃখ পেলে সুইসাইড করে?? কতটা একাকিত্বে থাকলে সুইসাইড করে??
এইসব কিছু কথা আমার মাথায় ঘুরছে গত কয়েক দিন যাবত। এর ঠিকঠাক সমাধান আমি দিতে পারছি না বা এই প্রশ্ন গুলোর উওর ও আমি খুজে পাচ্ছি না। বিষটা নিয়ে ভাবার কোনো সময় পাচ্ছি না গবেষণা তো দূরের কথা,,,,
গত কয়েক দিন আগে আমার ফেসবুক পরিচিক এক সিনিয়র ভাই ওনার ওয়ালে পোষ্ট দিলেন। যে ওনি সুইসাইড করবেন তাও বিষ খেয়ে,,,
পোষ্টটা দেখার পর থেকে আমার মাথায় এসব প্রশ্ন ঘুরছে। কি এমন কারণ হতে পারে যার জন্য ওনি সুইসাইড করছেন?? কি এমন হয়েছে যার জন্য ওনার জীবনের প্রতি মায়া চলে গেছে?? কতটা একাকিত্বে ভুগছেন ওনি??
ওনার পোষ্টে অনেক লোক কমেন্ট করেছেন অনেক মেয়ে ছেলে উভয়। সবার মুখে একটাই কথা "ভাইয়া এমন করবেন না কি হয়েছে আপনার কেনো মরতে চাইছেন?? "ব্লা ব্লা আরও অনেক কমেন্ট কেউ আবার বলছে "ভাইয়া বক্সে আসেন কথা বলি মনটা হালকা লাগবে এমন পাগলামি করবেন না "।
,
ওনার কমেন্ট বক্সের কমেন্ট গুলা পড়ে আমার খুব হাসি পেলো তারপরেও নিজের হাসিটা আটকে রেখে পোষ্টে লাইক কমেন্ট না করে বেরিয়ে আসলাম। তারপর সুইসাইড নিয়ে একটা গবেষণা করার জন্য ঠিক ঠাক সময় খুজতে শুরু করলাম। যদিও আমি ব্যাচেলার আর সবার মতামত অনুযায়ী ব্যাচেলারদের কোনো কাজ নাই তাই প্রচুর সময় তাদের হাতে। তবে আমার দিকে এটা একদম উল্টা কারণ আমি সারাদিন ভাবনার মাঝে ডুবে থাকি তাই এই বিষয়টাকে নিয়ে গবেষণা করার মত সময় আমার হয়ে উঠছে না।
আমার মতে ভাবনার বিষয় গুলা এমন হওয়া উচিত যা রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে না হলে সেই ভাবনাকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার হাতে একদমই নেই।
ঘড়িতে সময় রাত ৩টা বেজে ৪৫মিনিট বহু কষ্টে আজ এই মাঝ রাতের সময়টা খুজে বের করলাম সুইসাইড নিয়ে গবেষণা করার জন্য।নিজের রুম থেকে বের হয়ে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছি ছাদে। আজ জোছনা রাত আকাশ ভরতি তারার মেলা এমন জোছনা রাতে ঘুমানো যায় না । খোলা আকাশের নিচে দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশটাকে উপভোগ করতে হয় না হলে পাপ হবে পাপ,,,,
,
গবেষণার মূল বিষয় হচ্ছে মনে করেন আপনি আমার পাশে বসে আছেন আমি আপনার অপর পাশে বসে আছি। হাতে একটা ইয়া লম্বা ছুড়ি আপনার দু হাত পা বাধা ইয়া মোটা একটা রশি দিয়ে। আমি আপনার সামনের চেয়ারটাতে বসা ছুড়িটা আপনার নাকের ডগার সামনে দিয়ে বার বার ঘুরাচ্ছি এবং আপনাকে ভয় দেখাচ্ছি। হঠাৎ কেচ করে আপনার দুটা হাত শরির থেকে আলাদা করে দিলাম তারপর আপনার পা দুটাও কেটে দিলাম। কাটা স্থান থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়ছে আপনি বার বার আমার কাছে আকুতি করছেন "প্লিজ আমাকে মেরো না আমি বাচতে চাই আমি মরতে চাই না প্লিজ আমাকে বাচতে দাও??? "।
একবার কি ভেবেছেন এখন যদি আমি আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আসি আর ডাক্তাররা আপনাকে প্রাণ পন চেষ্টা করে বাচিয়ে দিলো তাতে কি হলো??
আপনি তো আর জীবনে কোনো দিন কোনো কাজ করতে পারবেন না চলাফেরা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া এমন কি আপনার এক নাস্বার দু নাম্বার কাজটা করার জন্য হলেও অলটাইম একটা লোক আপনার পাশে থাকতে হবে। রাতে যখন ঘুমাবেন তখন আপনার গায়ে কাথাটা জড়িয়ে দেওয়ার জন্য হলেও একটা লোকের দরকার হবে। যখন মাঝ রাতে কোনো দূর স্বপ্ন দেখে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠবেন তখন কিন্তু আপনার মুখের সামনে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও একটা লোকের দরকার হবে,,,,,
,
একবার কি ভেবে দেখেছেন এই লোকটার হাত পা না থাকার পর উনি কতটা কষ্ট এবং যন্ত্রণা সহ্য করেও মরতে রাজি না বাচতে চায় এই পৃথিবীতে। একবার কি এটা ভেবে দেখেছেন ঐ হাত পা বিহীন লোকটা কতটা একাকিক্ত্বে ভুগছে?? নিজের প্রিয় টিভি চ্যানেলটা দেখার জন্য রিমোট ঘুরিয়ে সেই চ্যানেলটা এনে দেওয়ার জন্য হলেও ওনার একটা লোকের দরকার।পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকার পরও লোকটা পেট ভরে খেতে পারছে না কারণ যে ওনাকে খাইয়ে দিচ্ছে তিনি এটা ভাবছেন "কম খেলে বাথরুমে কম যাবে বেশি খেলে বেশি যাবে "।এমন কি খাবার পর পানিটাও ঠিক মত খেতে দিচ্ছে না। না জানি কখন আবার আপনি হিসু করার জন্য ওনাকে ডেকে বসেন,,,,
,
হয় তো সবাই ভাবছেন আমি বদ্ধ উন্মাদ পাগল নাকি?? পাগল না হলে আপনাদের এসব কি বলছি?? আবার এটাও ভাবছেন "পাগলের হাতে ফোন আসলো কোথা থেকে?? "।আমি পাগল না আপনাদের একটা ছোট উদাহরণ দিলাম শুধু মাএ,,,,,
আচ্ছা এটা বলুন তো আপনি যে সুইসাইড করতে যাচ্ছে কেনো যাচ্ছেন?? কি কষ্ট আপনার আর সেই কষ্টের পরিমাণটা কতটা??
হুইল চেয়ারে বসে থাকা লোকটার চাইতেও বেশি?? যার বেচে থাকাটা নিজের কিছু প্রিয় মানুষের কাছে বিষের মত লাগে তার থেকেও বেশি?? যে লোকটাকে দিনের মাঝে কমপক্ষে ১০ বার উনার নিজের ছেলে গালি দেয় তার থেকেও বেশি?? হুইল চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় যখন লোকটা নিজের কানে শুনতে পায় পাশের ঘর থেকে ওনার ছেলে চেচিয়ে বলছে "মরে গেলে বেশি ভালো হতো নিজেও ভুগছে আমাদেরও ভোগাচ্ছে "তার থেকেও বেশি??
আমি তর্কে বিশ্বাসী না যদি আপনার কথায় যুক্তি থাকে তাহলে আমি আপনার সাথে তর্কে লিপ্ত হতে রাজি আছি অন্যথায় রাস্তা মাপুন,,,
,
আচ্ছা আপনি যে সুইসাইট করছেন সেটা এই জুকারের দুনিয়াতে বলছেন কেন?? এখানে আপনার পরিবারে কেউ আছে?? মনে হয় না যদিও থাকে তাহলে হয় তো এখন ওনার চোখে এই সুইসাইড পোষ্টটা নাও পড়তে পারে আর যখন চোখে পড়লো তখন হয় তো আপনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন না হলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
আচ্ছা আপনার কি একবার মনে হলো না যে মাএ সেদিন আপনি ফেসবুক নামক ভার্চুয়ালে আসছেন। আসার পর কাউকে না দেখে বা কাউকে দেখে একটু পরিচিত হয়েছেন আর আপনি আপনার মরার সুখবর টা ওনাদের আগে দিচ্ছেন,??
আরে ভাই একবার কি আপনার জন্মদাতা মা বাবা ভাই বোন তাদের সাথে বলেছেন যে "আমি এখন সুইসাইড করছি বিষ খেয়ে "।
বলেননি তো তাই না? আচ্ছা মেনে নিলাম বলেন নাই ফেসবুকে তো বলেছেন তাই না? আপনার মরার পর কে ফেবুতে এসে আপনার আইডিতে ডুকে সবাইকে জানাবে যে "এই আইডির মালিক মারা গেছে "? হয় তো আপনার কাছের কোনো বন্ধু আপনার ওয়ালে এসে আপনার মৃত্যুর সংবাদটা দিয়ে যাবে। তারপর হাজার লোক আপনার ওয়ালে পোষ্ট করবে যে লোকের হাজার ফলোয়ার সেই লোকও আপনার ওয়ালে এসে একটা ছোট পোষ্ট করে যাবে।
আচ্ছা আপনার জানাযার জন্য ভার্চুয়াল থেকে কে কে যাবে?? সবার বাড়ি অনেক দূরে বা কাছেই জানতে পারলো অনেক পর তখন কেমন করে যাবে??
,
আপনি তো মারা গেছেন তাই না তার মানে আপনার যে সমস্যাটার জন্য আপনি সুইসাইড করলেন সেই সমস্যাটা তো শেষ তাই না? আচ্ছা আপনার লাশটা পুলিশ নিয়ে গেছে এটার ময়না তদন্ত হবে তারপর আপনার শরিরের কিছু ভালো জিনিস পএ ওনাদের বাপের সম্পদ মনে করে রেখে দিবে তারপর খালি ঠুলটা বাড়িতে ফেরত পাঠাবে মাটি চাপা দেওয়ার জন্য। আপনার বয়স্ক বাবা যার নিজেই আর কিছুদিন পর মারা যাবার কথা উনি নিজেই এখন নিজের সন্তানের লাশ কাধে নিয়ে কবর স্থানের দিকে যাচ্ছে। এর চাইতে কষ্ট আর কিছু আছে? আমার মনে হয় নাই,,,,,
জানাযা শেষ করে যখন আপনার বাবা বাড়ি ফিরছেন তখন রাস্তার লোকজন বলা বলি করছে "কি জানি আকাম কুকাম করছে তাই ফাঁসি লইছে বা বিষ খাইছে "।এই কথাটা শোনার পর আপনার বাবার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন একবার??
আপনি কেমন করে বুঝবেন আপনি তো মারাই গেছেন আপনি কথা গুলোর মর্মই বা কেমন করে বুঝবেন,,??
আপনি তো মরে গেছেন সো আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আপনার মারা যাবার পর যে সমস্যা গুলো সৃষ্টি হচ্ছে তার সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে বা এই সমস্যা গুলো সম্পর্কে আপনি অবগত ছিলেন?? আপনার বয়স্ক বাবা মা যারা তারা দিন রাত বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে এর মুখে এটা শোনছে ওর মুখে ওটা শোনছে। কি শুনছে জানেন?? আপনি যে সমস্যাটার জন্য সুইসাইড করছেন সেটা না বা অনেকর ক্ষেএে আবার সেটাও বা কিছু মিথ্যা বানানো গল্প বলছে। আপনার বাবা মা আর কত মুখ বুঝে সহ্য করবে?? অবশ্য সহ্য না করেই বা কি উপায় আপনি তো ওনাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। মানুষের সামনে দাড়িয়ে মুখের উপর দুটা কথা বলার মত সাহস আপনি রাখেননি,,,,
,
আচ্ছা আপনি যে সমস্যাটার জন্য সুইসাইট করছেন বা যে ভয়টার জন্য আজ সুইসাইটা করবেন বলে ভাবছেন কখনও সেই সমস্যাটার ফেইস হইছেন?? বা কখনও এটা ভেবেছেন যে "দেখি এই সমস্যাটার বা ঝামেলাটার শেষ কই?? "।বা দেখি এটার কোনো সুষ্ঠ সমাধান খুজে পাই কি না,,,?
যখন আপনি সব দিক থেকে হতাশা গ্রস্থ হয়ে বিছানায় চিত হইয়া শুয়ে আছেন আপনার মাথার উপরে থাকা ফ্যানটা অনবরত ঘুরছে । আপনি এক দৃষ্টিতে ফ্যানের দিতে তাকিয়ে আছেন আর মনে মনে এটা ভাবছেন "এর চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভালো। মরার সাথে সাথে ঝামেলা শেষ,, "।
ঘরের কোনে পর থাকা রশিটা আজ হঠাৎ কাজে লাগাচ্ছেন বা মেয়ে হলে লজ্জা নিবারণের উড়নাটা কাজে লাগাচ্ছেন। ফ্যানের সাথে একটা প্যাচ দিয়ে আরেকটা প্যাচ নিজের গলার সাথে দিয়ে ব্যস ঝুলে পড়লেন। বাহ এক কৌটা বিষ খাইয়া বিছানাতে পুটি মাছের মত লাফ দিচ্ছেন,,,,
আরে ভাই বিষ খান বা ফাসি নেন এতে কিচ্ছু হবে না বরং এই সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন তাড়াতাড়ি আর জাহান্মাের বাসিন্দা হচ্ছেন। তাছাড়া কিছুই না তার চাইতে বরং বিষয়টা মা বা বাবা বা কাছের কোনো মানুষের কাছে শেয়ার করুন। আপনার পরিবারে কি এমন কেউ নেই যে আপনার দুঃখটা বুঝবে বা আপনার কথা গুলো একটু মন দিয়ে শোনবে??
,
যদি নাই থাকে তারপরও একবার সবার সামনে লজ্জার মাথা খেয়ে বলে ফেলুন তারপর যা হবার হবে দেখা যাবে। আপনাকে তো আর মেরে ফেলবে না মেরে ফেলার হলে জন্মের পরই মেরে দিতো এতদিন লালন পালন করে বড় করে তুলে আপনাকে এই জঘন্যতম অপরাধ করার মত উপর্যুক্ত করে তুলতো না,,,,
সর্ব শেষ একটা কথাই বলতে চাই সুইসাইড কোনো সমস্যার সমাধান না। যদি সমাধান দিতে পারতো তাহলে মানুষ অযথা চিন্তা করে স্ট্রোক করে মরতো না সুইসাইড করতো,,,,
,
,
বি : দ্রি : সুইসাইডের মত জঘন্যতম অপরাধ করার আগে নিজের সমস্যাটাকে সমাধান করার চেষ্টা করুন। যদি সুষ্ঠ সমাধান খুজে না পান তাহলে আপনার অতি ঘনিষ্ঠ বা কাছের লোকের সাথে বিষয়টা শেয়ার করেন আশা করি কোনো না কোনো সমাধান অবশ্যই পাবেন।
যেহেতু সমস্যা আছে সেহেতু সমাধানও অবশ্যই আছে তাই চেষ্টা করুন আপনি পারবেন
,
,
লেখা : SK Himadro (সাইকাইটিস),,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন