আড়ালের গল্প
১.পরিচয়ের শুরতেই কেউ"বাল" বলে
সম্মোদন করলে কারো ভালো লাগার
কথা না।আমার ভালো
লাগেনি,কিঞ্চিৎ অপমানিত বোধ
করেছি।নীরবে হজম করেছি,কারন
পেশাগত দিক দিয়ে আরিফ ভাই
মানুষটি আমার সাত বছরের সিনিওর।
কাজ করতাম একটি জেনারেল
হাসপাতালে, হাসপাতালে
প্রথমদিনে আমার কলিগ আরিফ ভাই
আমাকে দেখে বলেছিলেন"এই
বালটা আবার কবে আসল"?!!।সেই দিন
থেকে অপমানের শোধ নেওয়ার
তাড়া একেবারে মাথায় গেঁথে
বসছিল।শ্যামলা বর্ণের লিকলিকে
এপ্রই মানুষটির রুমমেট হওয়ায় স্বচক্ষে
দেখতাম উনি ব্রাশ করার সময় কখনো
পেষ্ট বেসিনে ফেলতেন না,কথা
বলতে বলতে আয়েশ করে গলাধঃকরণ
করতেন।ফোনে কথা বলার সময়
স্যান্ডো গেন্জির ফোটো দিয়ে কি
শৈল্পিকভাবেই না উনি নাভি
চুলকাতেন, কিংবা পাশাপাশি
বেডে বসে হয়ত,সমাজ, সংসার,
ক্যারিয়ার রাজনীতি বিষয়ে মৃদু
আরগুমেন্ট চলছে,আরিফ ভাই কথা
বলতে বলতে কখন যে পা চুলকাতে
চুলকাতে লুঙ্গী মিড থাইয়ের উপর
তুলে ফেলছেন তার কোন হিসেব বা
ভাবান্তর কোনটাই উনার মধ্যে নেই।
টিভি দেখতে বসলে এই অদ্ভুত
মানুষের রুচি উনার মতই অদ্ভুত। উনি
সবসময় স্থানীয় ক্যাবল চ্যানেলের
মান্না আর ডিপজল অভিনীত বাংলা
ছবির একনিষ্ট দর্শক,যেখানে মান্না
ডিপজলকে বলছে"এই শুয়োরের
বাচ্চা"উত্তরে ডিপজল মান্নাকে
বলছে"এই কুত্তার বাচ্চা "।সারাদিন
ডিউটি শেষে আমি আর আরিফ ভাই
পাশাপাশি বেডে হয়ত
ঘুমাচ্ছি,মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙ্গে
দারুণ এক মিউজিকের সুরে,বেডে বসে
দেখি আরিফ ভাইয়ের মোবাইলে
মিউজিক বাজছে "চিঠি লিখেছে বউ
আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে......"।
ভালো দিক যে একেবারে চোখে
পড়েনি তা না, আরিফ ভাইয়ের মধ্যে
বড় ভাই টাইপ একটা কেয়ারিং
রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায়
নেই।তারপরও সেই প্রথম দিন থেকে
আরিফ ভাইকে অসম্মান বা অপমান
করার একটা মিশন মনের মধ্যে খুব
তাড়া দিচ্ছিল,খোঁজ নিয়ে জানলাম
মানুষটি এখনো বিয়ে
করেনি,তাছাড়া এখনো কোনও পোষ্ট
গ্র্যাজুয়েশন কোর্সেও নাই,তাই
অপমান করার মিশনটাও আরও গতি
পেল.....
২.নির্ঘোম নাইট ডিউটির পর
হাসপাতালের পাশের টংয়ের
দোকানে নাস্তা করতে গেছি,সূর্য
উঠতে এখনো অনেক দেরি,হালকা
কুয়াশায় শীতের আমেজটা একটু একটু
টের পাওয়া যাচ্ছে। টংয়ের
দোকানে চুলোর আগুনের পরশ
সকালটাকে অদ্ভুত সুন্দর মনে হচ্ছে।
টংয়ের টিভিতে শাহরুখ আলিয়ার
ছবির ট্রেলার সহ গান চলছে,আলিয়া
সাগর,কাঁদাতে লাফালাফি করছে
আর মোটা বট গাছে চুমু দিয়ে বলছে
লাভ ইউ জিন্দেগী, চুলোর আগুনে
সকালের প্রথম তেলে ভাঁজা পরটা
আর ডিম ভাঁজা দেখে এক গামলা
রুচি নিয়ে যেই নাস্তা করতে
বসব,পাশ থেকে কানে ভেসে
আসল"কিরে বাল নাস্তা করতে
আসছিস"??।সাথে সাথে রুচি
কুয়াশার মত উধাও হয়ে গেল আরিফ
ভাই রিমোট নিয়ে চ্যানেল
পাল্টাতে পাল্টাতে বললেন" কি
বালছাল দেখস"জিন্দেগির মানি
কিছু বুঝছ?আমি তাচ্ছল্য করে উওর
দিলাম আপনার কাছে তো
জিন্দেগি মানেই টাকা,ডিউটি আর
এই হাসপাতাল। এরকম উওরে আরিফ
ভাই একটু অবাক হলেন,স্মিত হেসে
টংয়ের চুলার দিকে
তাকালেন,চুলাতে ডিম ভাঁজা
হচ্ছে,পিয়াজ মরিচ বেশি দিয়ে কড়া
ভাজাঁ।আরিফ ভাই,আমাকে বললেন,
বলতো একটা ডিম ভাজাঁ কে কয়ভাগ
করা যায়??তুই বাল কিচ্ছু জানস
না,একটা ভাঁজা ডিমকে ৬ পিছ করা
যায়।ছয় বছর আগে মেডিকেল পাশ
করেছি, আমরা পাঁচ বোন ও
আমি,বাবার একটা ভিটে আর এক টুকরু
জমি ছিল।সেই জমিতে আমাদের
পরিবারের আটজন মানুষের
তিনমাসের খাবার জুটত।বছরের বাকি
নয়টা মাস আমাদের তিনবেলা
খাবারের জন্য বাবা রাত দিন পরের
বাড়িতে কামলা খাটতেন।অভাব কি
জিনিস সেই হাফপ্যান্ট পরার বয়স
থেকে খুব ভালোভাবেই জানতাম।
এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে মা একটা
ডিমের ভিতর ভাত দিয়ে সেই ডিমকে
বড় করতেন,তারপর সেই ডিমকে ছয়ভাগ
করে আমাদের ছয় ভাইবোনকে
দিতেন।সাথে থাকত বাজারের সস্তা
দামের খেসারী ডাল।আমার
বোনগুলো নীরবে খেয়ে যেত,শুধু
আমার ঔটুকু ডিমে হতনা,প্রতি
বেলাই কোন না কোন বোন বলত আমি
ডিম খাবো না,আরিফকে দিয়ে দেও।
চোখের সামনে বড় হওয়া বোনদের
মলিন কাপড়ে অভাবের নানাবিধ রুপ
দেখতে পেতাম। বোনরা আমার
চেয়ে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অভাব
নামক বস্তুুটির কারনে প্রাইমারীতেই
পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল।শুধু আমার
পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার
নেওয়ার জন্য বড় বোন মায়ের সাথে
প্রায় সংগ্রাম শুরু করে এবং সফলও হয়।
যেদিন প্রাইমারীতে ট্যালেন্টপুলে
বৃত্তি পেলাম সেদিন থেকেই
মা,বোনরা আমায় নিয়ে একটু একটু
করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।
আশেপাশের মানুষের প্রশংসা
আমাকেও সেই স্বপ্নে আরো
মনোযোগী করে তুলল।সেই থেকে
আমার একাডেমিক সাফল্যে সবাই
খুশী হলেও একজন থাকতেন
ভাবলেশহীন,তিনি হলেন আমার
বাবা।আমার যতটুকু মনে পড়ে বাবা
আমার সাথে কথা বলতেন খুবই
কম,এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা
একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল।দেখতে
দেখতে মেডিকেল এডমিশনের সময়
চলে আসল। ফ্রম ফিলাপ করে দিলেন
এক মামা,প্রিপারেশন বলতে
বোনদের মাটির ব্যাংকের টাকায়
কিনা রয়েল গাইড আর দুই বছরের
একাডেমিক নলেজ,মজার ব্যাপার
হলো মেডিকেল পরীক্ষায় যে
সাধারন জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে তা
আমি জানতামই না,জেনেছি
পরীক্ষায় যাওয়ার মূহুর্তে বন্ধুর কাছ
থেকে।আমাদের মাটির ঘরে ছিল
পাশাপাশি দুটি রুম,রুমদুুটির
মধ্যখানে ছিল একটা মাটির দেয়াল।
সেই দেয়ালের মাঝখানের একটু অংশ
কেটে চল্লিশ পাওয়ারের একটা
বাল্ব লাগানো থাকত,যাতে দুটি রুমই
ঔ চল্লিশ পাওয়ারের বাল্ব কভার
করতে পারে।স্পষ্ট মনে আছে
পরীক্ষার আগের রাতে একটু আগেই
শুয়েছিলাম,কিন্তু পরিক্ষার টেনশনে
ঘুম আসছিল না।বাবা অনেক রাত করে
ঘরে ফিরছিলেন,হাতমুখ ধুয়েই মাকে
জিজ্ঞেস করলেন আরিফ কি ঘুমিয়ে
পড়ছে? মা হুম টাইপের কিছু একটা
বললেন,পাশের রুমে কাঁথামুড়ি দিয়ে
শুয়ে থাকা আমার শরীর দিয়ে
উত্তেজনায় ঘাম ঝরতে লাগল,না তা
পরিক্ষার টেনশনে না,আমার শুধুই
মনে হল জন্মের পর এই প্রথম বাবা
আমার নামটা ধরলেন,আমার সম্পর্কে
কিছু বললেন,চুপচাপ শুয়েছিলাম
আরেকটিবার বাবার মুখে কিছু শুনতে।
নীরবতা ভেঙ্গে বাবা মাকে বলতে
লাগলেন,ছেলেটিকে সাহস
দিও,এতবড় পরিক্ষা দেওয়ার
সৌভাগ্য সবার হয়না,পাশ করা না
করা পরের ব্যাপার,আমি অভাবের
লজ্জায় ছেলেকে কিছু বলতে
পারিনা,বাজার থেকে কিছু ভালো
চাল আর তেল এনেছি,সকালে
মুরোগটা কেটে ছেলেকে একটু
পোলাও করে দিও,এত বড় পরিক্ষা
ছেলেকে সাহস দিও আরিফের মা।
পরদিন সকালে পরিক্ষায় যাওয়ার
সময় বাবাকে পাইনি,অভাবের লজ্জা
আবার হয়ত বাবাকে আমার থেকে
আড়াল করল।পরীক্ষা দিয়ে এসে
যথেষ্ট হতাশই হলাম,পরিক্ষা একদম
মনমাফিক হয়নি,প্রতিটা প্রশ্নে
আমি ছিলাম কনফিউজড।রেজাল্টের
আগের দু'দিন একদম ঘর থেকে বের
হলামনা,দুপুরের দিকে হঠাৎ বাবা
এসে আমার পাশে বসলেন,আমার
পাশাপাশি বসার অভ্যাস না থাকায়
অন্যদিকে থাকিয়ে বললেন"তোমার
কাজ ছিল চেষ্টা করার তুমি তা
যথেষ্ট করেছ,বাকিটুকু উপরওয়ালার
কাজ,মনখারাপ করে বসে
থাকবেনা,দেখতে ভালো দেখায়
না"একথা বলেই বাবা উঠে চলে
গেলেন।ঐদিনই রেজাল্ট
দিল,উপরওয়ালার ক্রিপায় দেশের
প্রথম সারির মেডিকেলে চান্স
হল,মা বোনদের খুশী ছিল দেখার
মত,আমার পাহাড়সম ব্যক্তিত্বের
অধিকারী বাবা মূদু হেসে
প্রথমবারের মত আমাকে বলেছিলেন
"অনেক খুশী হয়েছি বাবা"।বাবা
ছাড়া পরিবারের সবার হাঁসিটা
বেশিদিন স্থায়ী হয়নি,যখন জানা
গেল মেডিকেলে ভর্তি ও বই কিনতে
প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার মত
লাগে।মা তো রুটিন করে সকাল
বিকাল আত্নীয় স্বজনদের বাড়ি
টাকার জন্য ধরনা দিতে
লাগলেন,পাড়াপড়শিরা মাকে
চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে
যাওয়ার পরামর্শ দিতে
লাগলেন,গ্রামের শিক্ষিত আবালরা
আমার চান্স পাওয়া আর অভাবের
বিষয়টি জাতীয় পত্রিকায় দেয়ার
তোড়জোড় শুরু করলেন।শুধু বাবা
ছিলেন নীরব,এদিকে আমার ভর্তির
ডেট চলে আসায় মা রাতে বাবাকে
এ বিষয়ে বললে,আমার পাহাড়সম
ব্যক্তিত্বের অধিকারী বাবা
বললেন"শোন আরিফের মা,ছেলে
আমার কারো কাছে ভিক্ষা বা নত
হয়ে ডাক্তার হউক তা আমি
চাইনা,আমার ছেলে এগ্রামের কাছে
গরিবের ছেলে,আমি এগ্রামের
কাছে গরিব বাবা,পত্রিকায় এসব
প্রকাশ করে আমি দেশের কাছে
অভাবী বাবা আর আমার ছেলেকে
দেশের কাছে গরিবের সন্তান
হিসেবে প্রকাশ করতে চাই না,আমার
ছেলের বিষয় আমিই দেখব"।যেদিন
মেডিকেলে ভর্তি হতে যাবো তার
আগের দিন বাবা শুধু আমাকে
বলেছিলেন,তৈরি থেকো তোমাকে
সকালে বের হতে হবে,।সকালে তৈরি
হয়ে বাবার কাছে বিদায় নিতে
গেলাম,বাবা আমার হাতে সাদা
প্যাকেটে মোড়ানো একটা বান্ডেল
দিতে দিতে বললেন,আরিফ এখানে
চার লাখ সত্তর হাজার টাকা
আছে,পুরো পাঁচ বছরে আরও কিছু
টাকা লাগবে তোমার। এটা শেষ হয়ে
গেলে জানাবে আমি ব্যবস্থা করবো।
আমি বাবার দিকে মুখ হা করে
তাকিয়েই ছিলাম,শুধু মনে পড়ে ঐদিন
বাবার ধমকে গাড়িতে উঠছিলাম।
মেডিকেলে এসে বুঝতে পারলাম
আমিই একমাত্র ছেলে যার বাবা
মেডিকেল লাইফের শুরতে
বিশ্বাসের সহিত হাতে তুলে
দিয়েছেন চার লাখ সত্তর হাজার
টাকা।একমাস পর ছুটিতে এসে মায়ের
কাছে জানতে পারলাম
বাবা,আমাদের একমাত্র ভাতের
জমিটি বিক্রি করে টাকাটা
আমাকে দিয়েছিলেন।ঢাকা শহরে
মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য চলা
কঠিন না,টিউশনির বাজার
ভালো,একবছরের মধ্যে বাবার
জমিটি ফিরিয়েছিলাম, ছুটিতে
বাড়িতে আসতে মা বোনদের জন্য
এটা সেটা নিয়ে আসতাম,এগুলোই
ছিল আমাদেরর জীবনের সবচেয়ে
দামী আনন্দের উপলক্ষ্য।জীবন
ভালোই চলছিল,দেখতে দেখতে শেষ
বর্ষে চলে এলাম,একদিন মেডিসিন
ওয়ার্ডে স্যার এনজাইনা আর
এমআইয়ের মধ্যে পার্থক্য
ধরেছিলেন,পারিনি।স্যার খুব লজ্জা
দিয়েছিলেন,দুপুরের দিকে
পার্থক্যটি দে্খছিলাম,হঠাৎ বড়
বোনের ফোন"বাবার বুকে খুব ব্যাথা
হচ্ছে, আমরা সদরে নিয়ে যাচ্ছি
তোকে খুব দেখতে চাচ্ছেন
তাড়াতাড়ি চলে আয়"।বোনের ফোন
রেখেই রওয়ানা দিলাম
হাসপাতালের দিকে,কেন জানি
পথের মধ্যে এমআইয়ের তথ্যগুলো
চোখের সামনে খুব
ভাসছিল,হাসপাতালে গিয়ে দেখি
আমার পাহাড়সম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন
বাবা দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য
করে আমাকে দেখেই বললেন"আরিফ
আসছিস,তোর জন্যই অপেক্ষা
করছিলাম বাবা,আমার কাছে একটু
আয়, কানের কাছে মুখ নিয়ে বাবা
আমার হাতটি ধরে বলেছিলেন তোর
বোনগুলোকে একটু দেখে রাখিস
বাবা,বোনগুলোকে বাবা কাছে
নিয়ে শুধু এটুকই বললেন তোরা
কাঁদছিস কেন?তোদের জন্য ডাক্তার
একটা ভাই রেখে যাচ্ছি।ঘন্টাখান
েকের মধ্যে আমাদের বাবা পৃথিবী
থেকে চলে গেলেন,বাবা চলে
যাওয়ার কয়েকদিন পরই পৃথিবীর
কঠিনতম বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম
আমি, আত্নীয় স্বজন পাড়াপড়শি
সবাই আকারে ইঙ্গিতে বুঝাতে
চাইলেন যে আমার বোনরা বুড়ো হয়ে
যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া
দরকার,আমি তখন মাত্র এমবিবিএস
পাশ করেছি,চোখে ঝাপসা দেখছি
বোনদের বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর
টাকা দরকার,প্রায় রাতে ঘুম ভাঙ্গত
বাবার শেষ কথাটি স্বপ্নে
দেখে"বোনদের দেখে রাখিস
বাবা"।আমার বন্ধুরা যখন বড় বড়
ডিগ্রীর স্বপ্ন দেখছে আমি তখন
ঢাকা ছেড়ে এসে উঠলাম এই
জেনারেল হাসপাতালে, বিগত ছয়টা
বছরের প্রতিটা দিনের চব্বিশটা
ঘন্টা এই হাসপাতালে আমি
কাটিয়েছি। প্রতিটা রাত কেটেছে
ইন্টারকমের শব্দে সাড়া দিয়ে,হ্যাঁ
ডাক্তার হিসেবে ছয় বছরে অনেক
টাকা পয়সা করেছি,আমার চারটা
বোনকে ডাক্তারের বোন হিসেবে
ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছি,আমার
গ্রামের বাড়িটিকে সমাজের মানুষ
যাতে ডাক্তারের বাড়ি ভাবে
সেভাবেই সাজিয়েছি।এসব করতে
গিয়ে আমার জীবন থেকে আমি হয়ত
মূল্যবান ছয়টা বছর হারিয়েছি তাতে
আমার বিন্দুমাত্র আফসোস হয় না,এখন
পর্যন্ত কোন কোর্সে ঢুকতে পারিনি
বলে আমি একটুও হীনমন্যতায়
ভুগিনা,কারন আমার কেন যেন মনে হয়
আমার বাবার কাছে আমি ডাক্তার
ছেলে হতে পেরেছি,যে বোনদের
ধার দেওয়া ডিমের অংশ খেয়ে বড়
হয়েছি তাদের কাছে ভাই হতে
পেরেছি,একজীবনে আর কি লাগে?
আমার কাছে এসবের মূল্য ডিগ্রীর
চেয়ে শত শত গুন বেশী।প্রতিটা দিনই
আমার কাছে উপরওয়ালার রহমতে
সাজানো দিন,শুধু যেদিনটাতে আমি
আমার পাহাড়সম ব্যক্তিসম্পন্ন
পিতাকে চিরদিনের জন্য শুয়ে
দিয়েছিলাম সেই দিনটা আমার
কাছে অসহ্য কষ্টের মনে হয়,এইদিনটা
আসলে আমি বাজারের সবচেয়ে
দামী পাঞ্জাবীটা পরে বাবার
কাছে যাই, বাবাকে যে দিকে মুখ
করে শুয়ে দিয়েছিলাম সেদিকে
সামনাসামনি বসি,কেন যেন মনে হয়
বাবা আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে
ওপর পাশ হয়ে শুয়ে থাকেন।আমি
ডাকি" বাবা,ও বাবা অভাবের
লজ্জাটা আমি তাড়িয়ে দিয়েছি
বাবা..........না, সাড়ে তিনহাত
মাটির নিচে আমার ডাক পৌছায়
না............................
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন