"ভাঙা রাজবাড়ি"
লেখক:-
*****Md Nahid Hasan Mnh (অপ্সরির রাজকুমার)*****
.
উৎসর্গঃ আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মাতা আর আমার প্রিয় বন্ধুটিকে...
.এটি একটি ভৌতিক উপন্যাস!
উপন্যাস টি একবারে পুরোটা প্রকাশিত হয়নি! ধীরে ধীরে খন্ড খন্ড ভাবে প্রকাশিত হয়েছে!
উপন্যাসটি সংগ্রহে আমি:- *মারুফ হাসান*
(marufhassan72@gmail.com)
★ ভাঙ্গা রাজবাড়ি ★
-নিহাদ হাসান.
১ম পর্ব
.
প্রথমেই পরিচয় দিয়ে নিই।আমি নাহিদ, শহরের এক নামকরা কলেজের অঘা ছাত্র। ভুত-প্রেতে একদম বিশ্বাসী ছিলাম না,আর যে বিশ্বাস করতো হেরে তো মুই……………থাক কইলাম না। ঘটনা শুরু করা যাক
.
জীবনে গ্রামের দিকে যাই না,আসলে ভালো লাগে না।গরমে ভাবসা আবহাওয়া,বর্ষা তে সারাদিন বৃষ্টি আর শীত এ তো ঠাণ্ডার জ্বালায় লেপের তল থেকে উঠাই জাই না।তাই যাই না।তবুও এস এস সি পরীক্ষার পর সময় কাটছিল না।তাই গেলাম গ্রামে ঘুরতে।
.
টানা ১২ ঘণ্টার জারনি।তাই ক্লান্ত থাকার কারনে বাড়ি যেয়েই ঘুম।বিকালে ঘুমাইছি আর পরের দিন সকালে উঠছি। খাওয়া দাওয়া করে ভাই বোন দের সাথে আড্ডা দিলাম কিচুক্ষন।
.
তারপর গেলাম পুকুরে গোসল করতে।আমি আর আমার ছোট ভাই রবি গেলাম। কিছুক্ষণ গোসল করার পর হটাৎ মনে হলো আমাকে কেউ বাঁশ বাগান থেকে ডাকছে,”ফিরে যাও নাহিদ,ফিরে যাও।বিপদ তোমার পিছনে আসছে”।পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি এক লোক বাঁশ বাগানের মাঝে চলে গেল।আমি তো পুরাই টাস্কি।এত ঘন জঙ্গলের মাঝে যাচ্ছে কার এত বুকের পাটা।আমাদের পুকুরের ২ পাশে বাঁশ বাগান।তখন রবি আমার কাছে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে?? বললাম
আমিঃবাশ বাগানের মধ্যে কে যেন ঢুকল
ও তো আমার কথা শুনে বিশাল জোরে হেসে উঠল। বলল মনে হল কৌতুক সুন্তেছে
.
রবিঃ ভাইয়া ওই জঙ্গলে কেউ যাই না।আগে ওঁটা একটা কবরস্থান ছিল আমাদের বংশের।
আমিঃকি বলিশ?আমাদের কবরস্থান তো বাড়ীর পশ্চিম পাসে।
রবিঃহুমম।আগে এই খানে ছিল
আমার তো ওর কথা শুনেই অবস্থা খারাপ,কইতাছে কি পলা,আগে জানলে আসতাম না গোসল করতে।
তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে বাড়ি চলে গেলাম।তারপর আড্ডা দিতে দিতে সব বেমালুম ভুলে গেলাম বিকেলেই।
.
হটাৎ মনে পড়ল আমাদের প্রায় মাঝে অবস্থিত এক পোড়ো রাজবাড়ির কথা।
বোন মিলি কে জিজ্ঞাসা করলাম
আমিঃ ওই ছেমড়ি ,আমাদের গ্রামের সেই পোড়া বাড়ীর খবর কি?
মিলিঃ ক্যান রে,তুই কি ওখানে বাসর ঘর করার ইচ্ছা জাগলো নাকি রে??
আমিঃআর এ নাহ।ভাবতেছি ওই খানে যাব এই বার
মিলিঃপাগল নাকি তুই? ওই খানে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবি নাহ
আমিঃকেনো?আমি যাব
মিলিঃহবে নাহ।সবাই বলে ওঁটা নাকি ভুতের বাড়ি ।ওখানে গেলে তার মৃত দেহও পাওয়া যাই না
আমিঃবাদ দে তো,সব ফাউ কথা।আমি যাব।বাজি?
মিলিঃ না ভাই,জাস না।
আমিঃ২০০ টাকার বাজি।কাল সকালেই যাব
মিলিঃ আমরা যাব না
রবিঃহুমম,গেলে আর ফেরত আসতে পারব না।অনেক ভয় করে ওই বাড়ি টাকে।
আমিঃ আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে যাস।
মিলিঃআচ্ছা জামুনে।কিন্তু আমরা দুই জন বাইরে থাকবো
আমিঃ আচ্ছা
জীবনের সবচেয়ে বর ভুল করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা তিন জন।তখন জানতাম না,জানলে হয়তো ক্ষতি টা হত না আমাদের.....................
পরের দিন সকালে খেয়ে দেয়ে পানির পট টা হাতে নিয়ে তিন জন বের হলাম ভাঙা বাড়ীর উদ্দেশ।..
২য় পর্ব:
.
ওই ভাঙা রাজবাড়িতে যেয়ে আমি ওদের বললাম
আমিঃ ওই তোরা(মিলি,রবি) বাড়ি ফিরে যা,আমি আইতাছি
মিলিঃনা,যাব না। আমরা বাড়ি গেলে তুই যে ওই ভাঙা বাড়ি ঢুকছিস তার তো কোন প্রমান থাকবে না,তুই তো নাউ যাইতে পারিস
আমিঃ আরে আমি ঢুকবানে,তোরা যা
রবিঃভাইয়া আমাকে কেমন যেন ওই বাড়ি টা আকর্ষণ করছে
মিলিঃ ঠিক বলেছিস রে রবি,আমাকেও কেমন যেন আকর্ষণ করছে বাড়ি টা
আমিঃআচ্ছা তাহলে চল,ভয় পেলে কিন্তু আমার দোস না
মিলিঃআচ্ছা,ভয় পাব না আমরা।তুই চল
আমিঃআচ্ছা চল,দেখেই আসি বাড়ি টা।কতগুলো ভুত আছে ওখানে দেখেই আসি।সব কয়টার ঘাড় মটকাবো আজ।
.
মিলিঃ আইছে আমাদের বীরপুরুষ। তোর ঘাড় মটকায় কিনা তাই দেখ।
তারপর আমরা তিন জন মিলে বাড়ি টার চার পাশ থেকে ঘুরে দেখলাম একবার।জানালা গুলো কাঠের , কালের বিবর্তনে এগুলো সব প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।দেয়াল গুলো থেকে ইট ২-১ জাইগায় খসে গেছে,আর সিমেন্ট খুব অল্প জায়গাতেই বিদ্যমান রয়েছে। হটাৎ করেই বাড়ীর দরজার দিকে নজর পড়ল আমার।একটা রশি দিয়ে বাধা আছে।তবে দেখে মনে হল হাল্কা টান দিলেই ছিঁড়ে যাবে।মিলি আর রবি কে বললাম চল ভিতরে যাওয়া যাক।
.
গ্রামের লোক বাড়ীর চার পাশ দিয়ে বাউন্ডারি করে দিয়েছে,এই বাউন্ডারির ভিতরে কেউ সহসা প্রবেশ করে না কখনই। বাড়ি টা কিন্তু অনেক বড়।কোনো এক জমিদার এককালে থাকতেন এখানে। তাই বিশাল এরিয়া।
.
তিনজনই বাড়ীর বাউন্ডারি পার হলাম।ঠিক তখনই ঝড় শুরু হল।বাইরে তো কোন মেঘ ছিল না,তাহলে এই ঝড় কোথা থেকে এল??? তিনজনই দিলাম ভো দোড়।যদিও ঝড়ের কারনে খুব বেশি এগুতে পারছিলাম না,তবুও চেষ্টা করছিলাম খুব দ্রুত এগুতে।কারন বৃষ্টি ও শুরু হয়ে গেছিলো। ভিজে যাচ্ছিলাম আমরা।
.
হটাৎ করেই মনে হল দূরে একটা বাড়ি দেখতে পারলাম,তার মানে আমরা ঠিক দিকেই এগুচ্ছি।মিলি আর রবি কেউ আমার পিছনেই থাকতে বললাম,কারন ওরা হারিয়ে জেতে পারে।আর হারিয়ে গেলেই বিপদ।
.
বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা,তারপর ভালমতো চারিদিকে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমাদের তো হৃদপিণ্ড ৭০ এর যাইগায় ৯০ করে পাল্স রেট দিতে শুরু করেছিলো।r
.
সুধু মাত্র ওই বাড়িতেই বৃষ্টি হচ্ছে,বাইরে হচ্ছে না।তারমানে......!!!! আমরা ফেসে গেছি।আমাদের তিন জনের হাত পা শিহরিয়ে উঠল।কি দেখছি আমরা এটা??!!আর তখন ফিরে আসারও কোন পথ নেই,কারন তখন খুব জোরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। ঝড়ের তীব্রতা এত যে বাড়ি থেকে বের হতে গেলে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যে কোথায় ফেলবে তার ঠিক নেই।হয়ত আর কোনদিন আমাদের খোজ নাও পাওয়া যেতে পারে।আমি মনে একটু সাহস সঞ্চার করার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম ঘরের ভিতরে ঢোকা ছাড়া কোন উপায় নেই
আমিঃ রবি,মিলি চল এখানে দাড়িয়ে না ভিজে ঘরের মধ্যে যায়
মিলিঃ ভাই আমারা পুরোপুরি ফেঁসে গেছি (কান্নার স্বরে)
রবিঃ হ ভাই, আমরা পুরা শেষ।
আমিঃআরে ধুর বোকা আমি আছি তো,কিচ্ছু হবে নাহ
মিলিঃ ভাইয়া বাবা-মার কথা খুব মনে পরছে।আর হয়ত.....................
(মাঝ পথে থামিয়ে দিলাম)
আমিঃআমি থাকতে ইনশাআল্লাহ্ তদের কিচ্ছু হবে নাহ।আচ্ছা তোরা আমার পিছনে আয়।
যদিও আমার ভয়ে পাল্স রেট কম করে ৯০ হবে,তবুও বাইরে প্রকাশ করলাম না। যেহেতু আমি ওদের মাঝে সবচেয়ে বড় তাই ভয় কন্ট্রোল করলাম।যা হবার হবে,আল্লাহ ভরসা।
.
এই বলেই ঘরের দরজায় হাত দিলাম, রশিতে হাল্কা টান পড়তেই ওটা ছিঁড়ে গেলো। বুঝলাম অনেক পুরানো রশি ।যখন আমরা ঘরের ভিতরে পা দিবো ঠিক তখনই বাইরে প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়লো। তিনজনই তাই হাত দিয়ে খুব দ্রুত মাকড়শার জাল সরিয়ে ফেল্লাম।কি পুরানো রে বাবা।কত কাল যে কেউ ঢোকে না তার ঠিক নেই।ঘরের ভিতরে ঢুকেই যা দেখলাম তার জন্য আমরা মোটেও ভালোভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।
.
অনেকগুলো কঙ্কাল পড়ে আছে সেখানে,সাথে বিচ্ছিন্ন কিছু হাড়ও।প্রচন্ড ঘৃণাতে মিলি তো বমি করে দিলো। কঙ্কাল গুলো দেখে মনে হল এগুলো অনেক আগের।হয়ত শত শত বছর আগের।রবি মিলির মুখ পরিষ্কার করে দিলো বাইরে থেকে পানি এনে।
.
এরপর তিনজন বাড়ীর ভিতর টা ঘুরে দেখতে থাকলাম।তবে তিনজন তিনজনের হাত ধরে রাখলাম।এতে ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। হটাৎ মনে হলো আমার মাথায় তরল জাতীয় কিছু পড়ল। আমি মাথায় হাত দিলাম। কিন্তু কিছুই পেলাম না। ভাবলাম হয়তো টেনশন এর কারনে এমন হচ্ছে।
.
একতলা পুরো ঘুরেও আকর্ষণীয় কিছুই পেলাম না আমরা। কিছু কঙ্কাল এর ভাঙা পুরনো যুগের কিছু চেয়ার টেবিল।এই চেয়ার টেবিল গুলোই এই বাড়ীর রাজকীয় ভাবের পরিচয় দিচ্ছে।
.
এবার আমরা তিনজনই দুই তলায় উঠলাম। ভাবলাম যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে হয়তো কষ্ট সার্থক হবে।
.
তিনতলায় যেয়েই প্রথমেই একটা তৈলচিত্রের উপর আমার নজর পড়লো। একটা মেয়ের ছবি। সম্ভবত এই বাড়ীর বউ ছিল সে।অসম্ভব সুন্দরি ছিল সে। টানা টানা চোখ দুটো সবার মন কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে।অলঙ্কার বিহীনই তাকে স্বর্গের অপ্সরির চেয়েও সুন্দরি লাগছিল।আমার তো মনে হচ্ছিল এই মেয়ে যদি এখন আমার সামনে বেচে থাকতো তাহলে হয়তো আমিই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম।কিন্তু সে তো বেচে নেই।এই সব আযাইরা কল্পনা করতেছিলাম দাড়িয়ে দাড়িয়ে।
.
তিনজনেই কতক্ষন ছবির ওখানে দাড়িয়ে ছিলাম তা বলতে পারব না। হটাৎ করেই আবার মনে হল আমার মাথায় ক্রমান্বয়ে তরল জাতীয় কিছু পরছে।কি পড়ছে বঝার জন্য আমি আবার আমার মাথায় হাত দিলাম।হাতে যা দেখলাম তা দেখার জন্য অত সুন্দর একটা মোমেন্টে আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না,আমি তো অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম ...................
৩য় পর্ব
.
হাত নামিয়ে দেখি হাতে রক্ত।আমার তো মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।আর বাকি দুইজন তো হা করে উপরের দিকে দেখছে।আমিও ওদের দেখাদেখি উপরের দিকে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে আমার মধ্যে আমি থাকলাম না কিছুক্ষণের জন্য। দেখি মাথার উপরের কাঠ থেকে রক্ত পড়ছে ।রবি তো ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।আমি আর মিলি তাড়াতাড়ি ওকে ধরে নিচে নিয়ে আসলাম। ভাবলাম বৃষ্টির পানি ওর মুখে ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরাবো।কিন্তু নিচে এসে দেখি বিধি বাম।দরজা খোলা যাচ্ছে না।আমি আর মিলি অনেক্ষন টানাটানি করার পরও কোন কাজ হল না।
.
তখন ভাবলাম আগে রবির জ্ঞান ফেরানো দরকার। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে ভেজা শার্ট দিয়ে ওর জ্ঞান ফেরানোর চিন্তা মাথায় এল। ভেজা শার্ট খুলে মোচড় দিলাম।এতে কিছু পানি পাওয়া গেলো। ওটাই রবির মুখে ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরালাম।কিন্তু ও স্বাভাবিক হতে পারছিলো না। ওকেই বা কি দোষ দেব??আমি আর মিলি ও কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছিলাম।
.
যেমন আমি ওকে ডানে যেতে বললে ও মাঝে মাঝে বামে যাচ্ছিলো। আমি আবার ২য় তলায় যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমিঃ মিলি চল, উপরে যাব আবার
মিলিঃ কেন?( মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে কথা টা শুনে)
আমিঃ রক্ত পড়ার রহস্য উদ্ঘাটন করবো আমি...........................
মিলিঃ তোমার কি এখনও এই ফালতু শখ শেষ হয় নি??
আমিঃ নাহ। রহস্য টা আমার জানাই লাগবে,কি আছে এখানে?
মিলিঃ না ভাই আমি যাব না
রবিঃভাই আমি সিউর, এই বার গেলে আর ফিরতে পারবো না।তুই যাস না দয়া করে
আমিঃ আমি তোদের মত ভিতু নই, যা হবার হবে
মিলিঃ বেশি সাহস দেখাতে গিয়েই তো আজ আমাদের এই অবস্থা
রবিঃ হুমম।ভাই বাদ দে। চল এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজি
আমিঃ নাহ।আমি যাব, তোরা না যেতে চাইলে আসিস না
মিলিঃ আমি তোমাকে একা ছাড়বো না। চলো আমি যাবো
রবিঃ তোরা গেলে আমি একা থাকবো কিভাবে এখানে।চল তাহলে আমিও যাবো
আমিঃ আচ্ছা চল
আমরা তিন জন আবার দোতলায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি তে পা দিলাম। হটাৎ রবি সিঁড়ি ভেঙ্গে পড়ে গেলো। অবশ্য ও শেষে ছিল বলে প্রথম সিঁড়ি তে ছিল।এই জন্য বেশি ব্যাথা পায় নি।কিন্তু আমি কিছু অশুভোর ইঙ্গিত পেলাম।
যাই হোক আমরা উপরের তলায় গেলাম। ওখানে যে ছবি টা ছিল ওটার চার পাশ দিয়ে ঘুরতে থাকলাম। কারন ওখানেই রক্ত পড়েছিল আমার মাথায়। কিন্তু সঠিক যাইগা টা মনে নেই আমার। শুধু যে আমার মাথায় রক্ত পড়েছিল টা নয়।আসেপাশেও কিছু ছিটকে পরেছিল।কিন্তু সেখানে রক্তের বিন্দু মাত্র নিদর্শন নেই। সামান্য কিছু ধুলো ময়লা ছাড়া কিছুই নেই।
.
হটাৎ পাশের ঘর থেকে ঘুঙুর এর শব্দ কানে ভেসে এলো।কিন্তু এই মানবহীন ভয়ঙ্কর বাড়িতে নৃত্য করছে কে!!! আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম।ভয়ে আমার হাত পা কাপা শুরু হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে বুকের মাঝে বাড়ী দিচ্ছে।এক অজানা আকর্ষণ আমাকে টানছিল ওই ঘরের দিকে যেখানে ঘুঙুরের শব্দ হচ্ছে।আমি মিলি আর রবির দিকে তাকালাম,দেখি ওরা মন্ত্রমুগ্ধের মত ওই ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আমি ওদের টেনে ধরার চেষ্টা করলাম।কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না দেখে দুইজনের গালে চড় বসিয়ে দিলাম।তারপর ওরা সম্বিত ফিরে পেল।
.
আমিঃকিরে তোরা অমন করে কোথায় যাচ্ছিলি?
রবিঃকই আমরা তো তোমার সাথেই দাড়িয়ে আছি
বুঝলাম ওদের কিচ্ছু মনে নেই। ঘোরের মাঝে এই কাজ করছিল ওরা।h
রবিঃ ভাই,ওই শব্দ আমাদের টানছে,মনে হচ্ছে কতো দিনের চেনা.................................
আমিঃআমার্ব ওই রকমই মনে হচ্ছে।যাবি ওই ঘরের দিকে?
মিলিঃ হুম,চল। যেয়েই দেখি।
আমি মিলির এই পরিবর্তনে একটু অবাক হলাম বটে।
.
ও আর একটা কথা তো বলাই হয় নি।আমাদের বংশ জমিদার বংশ ছিল।কোনো এক অজানা কারনে আমার দাদার দাদা অর্থাৎ আমার প্র প্র পিতামহ এই জমিদারি ছেড়ে দিয়েছিলেন।আমার দাদা এই কারন জানতো। কিন্তু কাউকেই কারন টা বলেন নি। জানতে চাইলেই বলত সময় আসে নি।সময় আসলেই বলবেন।এই কথা বলার সময় যদি মিলি উনার সামনে থাকতো তাহলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো দাদা।আমার দাদা ছোট বেলায় জ্যোতিষ বিদ্যা রপ্ত করেছিলেন।কিন্তু কাউকেই তিনি ভবিষ্যৎ বলতেন না।বলতেন ভবিষ্যৎ বলা খারাপ কাজ।এতে নাকি বিপদ হয়।
.
যাই হোক আমরা ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।দরজার গোঁড়ায় যেয়ে বুঝলাম আসলেই কেউ একজন ভিতরে নৃত্য করছে।আস্তে আস্তে দরজা খুললাম আমি।এক সুন্দরী নৃত্য করছে।আমি তো দেখেই পুরা টাস্কি।এত সুন্দর কেউ হয়!!!!!! নৃত্যও সেই মানের সুন্দর।কিন্তু এই ভাঙা বাড়ী তে কে নৃত্য করছে? খটকা লাগলো আমার। হটাৎ মনে পড়লো আরে এই তো সেই মেয়ে যাকে আমি ছবিতে দেখেছিলাম। এই মেয়ে এখনও বেচে আছে নাকি?নাকি ভুত দেখছি আমি? সর্বনাশ হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি মিলি আর রবির হাত ধরে খুব জোরে টান দিলাম।দিয়েই বললাম “পালা,এটা একটা ভুত”
.
আমার কথা শুনে ওরা তো পুরো অবাক।আমার পিছনে ওরাও দৌড় লাগালো। দোতলার সিঁড়ির কাছে যখন আমরা পৌঁছে গেছি ঠিক তখনই ওই মেয়ে টা আমাদের সামনে এক ভয়ঙ্কর রুপ নিয়ে আবির্ভূত হল। জিব্বহা বাইরে ঝুলছে, চোখ তো না,যেন আগুনের গোলা হয়ে বাইরে বের হয়ে আস্তে চাচ্ছে।
আমাদের বলল “কোথায় পালাচ্ছ বাচ্চারা,আমার খিদে পেয়েছে।বহুকালের খিদে।আজ তোমাদের খেয়ে আমি আমার খিদে মেটাবো। হা হা হা।“
আমরা ওর কথা শুনে পাগলের মত হয়ে গেলাম।যে যেদিকে পারে ছুট দিলাম।কিন্তু বাড়ী টা গোলক ধাধার মত লাগছে। যতই দৌড়াচ্ছি মনে হচ্ছে একটুও এগুতে পারছিনা।আর বারবার ওই ভয়ঙ্কর মূর্তি আমাদের সামনে আসতে থাকলো। এভাবে কতক্ষন গেছে সঠিক বলতে পারবো না।ভয়ে তখন আমরা পিপাসা খুধা সব ভুলে গেছি।এখন শুধু একটাই চিন্তা,কি করে এখান থেকে বের হবো?
.
হটাৎ করেই আমি বাড়ীর দরজা দেখতে পেলাম।রবি আর মিলিকেও ডাক দিলাম আমার কাছে আসার জন্য। ওরা কাছে এলেই আমিও দরজার দিকে খুব জোরে দৌড় দিলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই পিছন থেকে একটা আর্তনাদ শুনতে পেলাম। “ভাই আমাকে বাচা।“ পিছনে ফিরে তাকালাম।কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ হয়ে গেছে...........
৪র্থ পর্ব
.
পিছনে ফিরে দেখি ওই ভয়ঙ্কর রুপী মেয়েটা মিলিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।আর মিলি আর্তনাদ করছে “ভাই আমাকে বাচাও, এই মেয়ে আমাকে খেয়ে ফেলবে,রবি আমাকে বাচা”।
-
রবি মিলিকে ধরার জন্য দৌড় দিতে গেলো। কিন্তু আমি চিন্তা করলাম এতে বিপদের সম্ভবনা রয়েছে।হয়ত মিলির জন্য রবিকেও হারাতে হতে পারে।হয়ত মিলির মতো রবিকেও ধরে নিয়ে যেতে পারে।তাই আমি রবিকে পিছন থেকে টেনে ধরলাম।রবিতো প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছে। প্রচণ্ড কানতে শুরু করলো।
রবিঃ ভাইয়া, আমাকে ছাড়ো। আমার আপুকে ওই খারাপ মেয়েটা নিয়ে গেছে
আমিঃ যাস না ভাই। তোকেও নিয়ে যেতে পারে......যাস না তুই
রবিঃ আমার যা হয় হোক, আমার বোন কে ও নিয়ে যাচ্ছে...আপু আমি আসছি.................. (প্রচণ্ডy চিৎকার করে।)
আমিঃ (জোরে চেপে ধরে রবিকে) আমাদের এখন এখান থেকে বের হতে হবে
রবিঃ আমি যাব না।ওই মেয়ে আমার আপু কে নিয়ে গেছে।খেয়ে ফেলবে ওকে। আমি যাব না ভাইয়া
আমিঃ কিচ্ছু হবে না তোর আপুর,এখান থেকে বের হয়ে সবাইকে খবর দিব।তখন সবাই এসে তোর আপুকে নিয়ে যাবে
রবিঃ না,আমি আপুকে না নিয়ে যাব না। আপু তুই কোথায়??
আমিঃ চল ভাই চল
রবিঃ আপু..................
প্রচণ্ড চিৎকার করে ও অজ্ঞান হয়ে গেল।আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।ওকে কোলে তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। দরজা আটকানো দেখে জোরে লাথি দিতে লাগলাম। তিনটা লাথি দেয়ার সাথে সাথে দরজা ভেঙ্গে গেলো। বাড়ির বাইরে এসে দেখি ঝড় হাল্কা এখনও হচ্ছে।তখন আমার এমন অবস্থা যে এই সব ঝড় পুরো তুচ্ছ আমার কাছে।সব ভেদ করে বাড়ির বাইরে চলে এলাম।কিন্তু যখন আমি বাড়ির বাউন্ডারির একদম কাছে ঠিক তখনই আমার মাথায় পিছনে কে যেন খুব জোরে কাঠ দিয়ে আঘাত করলো। রবি আমার কোল থেকে পড়ে গেলো,ও আগেই অজ্ঞান থাকার কারনে হয়ত ওকে আর মারে নি।আমিও জ্ঞান হারাতে লাগলাম আস্তে আস্তে।
-
জ্ঞান হারানোর আগে আবছা আবছা দেখতে পেলাম কিছু ভয়ঙ্কর দৃশ্য। ওই ভয়ঙ্কর মেয়েটা মিলির দেহটা খুচিয়ে খুচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। আর ওর শরীরের গোস এবং হাড় গুলো চিবিয়ে খাচ্ছে। ওই মেয়ের মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। বীভৎস একটা সময়।এইভাবেই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখার মাধ্যমে অজ্ঞান হয়ে গেলাম আমি।
-
হটাৎ করেই আমি মুখে পানির ছিটা অনুভব করলাম।আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি সবাই আমার সামনে। চারিদিকে তাকিয়ে বুঝলাম এটা হসপিটাল।মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলাম।কি হয়েছিল আমার??? হঠ্যাৎ মনে পড়ল আমি ওই ভাঙ্গা বাড়ি থেকে আসার সময় আমার মাথায় আঘাত করা হয়েছিল।
রবি কোথায়?কথাটা মনে হতেই বুকের মাঝে হাহাকার করে উঠলো। রবির আব্বু মানে আমার মেজ কাকা কে জিজ্ঞাসা করলাম
আমিঃকাকা রবি কোথায়?
কাকাঃও অন্য কেবিনে আছে
আমিঃকেমন আছে ও?
কাকাঃভাল। বাবা মিলিও কি তোমাদের সাথে বেরিয়েছিল?
আমি আতকে উঠলাম...কি জবাব দেব আমি??
আমিঃকাকা আমার মাথা...............
এই কথা বলেই আবার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলেও দেখি শুধু দাদা আমার পাশে বসে আছে।
উনি আমাই বললেন
দাদাঃ মিলি মারা গেছে,তাই না?
আমিঃ................................. ( নিশ্চুপ)
দাদাঃ জানতাম এটাই হওয়ার ছিল। সবই কুকর্মের ফল রে দাদু কুকর্মের ফল
এর অর্থ আমি কিছুই বুঝলাম না।আমি তখনই জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছিলাম কিসের কুকর্ম?কিন্তু তখনই ওই ভয়ঙ্কর মেয়েটাকে আমার সামনে দেখতে পেয়ে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম আমি।
হসপিটাল থেকে দুই দিনের চিকিৎসার পর আমাকে জানানো হল যে আমার মাথায় একটা ছোট হেমারেজ হয়েছে, এটার চিকিৎসা এখানে হবে না।
-
তার তিন দিন পরে আমাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়া হল। ওখানে প্রায় ১ মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলাম।তারপর ২ বছর আর যাওয়া হয় নি গ্রামে। শুনেছি রবি আর কোনোদিন কথা বলতে পারে নি। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে ড্যাব ড্যাব করে। ঘটনা যদি এখানে শেষ হত তাহলে হয়ত আমি বেচে যেতাম।যদিও আমি মরি নি কিন্তু আধমরা হয়ে রয়েছি।
যাইহোক, আমার চাচাত বোনের বিয়ে ছিল তখন।সেই জন্যই ২ বছর পর গেলাম গ্রামে। বাড়ি যেয়ে আমি প্রথমে মিলির ঘরে ঢুকলাম। কতো স্মৃতি রয়ে গেছে মিলির। কয়েক ফোটা অশ্রু নিজের অজান্তেই চোখ থেকে বেরিয়ে এলো। এরপর দেখতে গেলাম রবি কে ওর ঘরে। রবির অবস্থা দেখে আমি আর নিজেকে কোনোমতেই সামলাতে পারলাম না,কেদে দিলাম।হাসিখুশি ছেলেটি আজ হুইল চেয়ারে বসা এক পঙ্গু আমার জন্য,আমার ভুলের জন্য। আর মিলি তো আমার জন্যই মারা গেল।
-
কি দরকার ছিল আমার জেদ করে ওখানে যাওয়ার।আজ আর কেদে কি হবে?সবই তো নিজের হাতে শেষ করে দিয়ে এসেছিলাম।
-
মোটামুটি ভাল অবস্থা সম্পন্ন পরিবার হওয়াতে একটা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করা হল। গ্রাম থেকে এটা একটু দূরে ছিল। মাইক্রো ভাড়া করা হল ৩ টা।আর কয়েকজন বাইক নিয়ে যাবে।বিকালে আমি সবার আগে বের হয়ে গাড়িতে বসে ছিলাম।কিন্তু বাকি লোক যখন বের হতে শুরু করলো আমি তখন একটু টয়লেট যাবার প্রয়োজন বোধ করলাম
-
কাউকে কিছু না বলেই টয়লেট চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আসে দেখি বাড়ির মেইন গেইটে তালা দিয়া।বুঝতে বাকি থাকল না আমকে থুয়ে সবাই গেছে।আর আমার ফোন টাও আম্মুর ব্যাগে থেকে গেছে।উপায় না পেয়ে অগত্যা আমি ঘরে চলে গেলাম। মাগরিবের আজান দিয়ার পরেই হটাৎ করে কারেন্ট চলে গেলো। এখন আমার পক্ষে হারিকেন বের করা সম্ভব? এখানে এসে কোনোদিন কাউকে হারিকেন ধরাতে দেখি নি
-
মনে পড়ল মিলি ঘরে আমি ৪ টা মোমবাতি দেখেছিলাম। ওখান থেকে একটা আনার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি...উপরে মিলির ঘরের ভিতর গেলাম। ম্যাচটা হাতে নিয়েই গেছিলাম অবশ্য। শরীরে হাল্কা ঝিরঝিরে বাতাস অনুভব করলাম।বাইরে আবার বাতাসও বইছে??বাহ ভালো।হঠ্যাৎ মনে হল পিছন থেকে যে যেন দৌড়ে গেল।আমি তাড়াতাড়ি করে পিছনে তাকালাম............
৫ম পর্ব
.
মনে হল পিছন থেকে কে যে যেনো দৌড়ে গেল।আমি তাড়াতাড়ি করে পিছনে তাকালাম। তারপর মনে হল ডান পাস থেকে কেউ দৌড়ে গেলো। ওদিকে ফিরেও কেউকেই দেখতে পেলাম না। ভাবলাম হয়তো আমার ভুল।কিন্তু এবার আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার পিছন দিয়ে কেউ দৌড়ে গেছে। ওখানে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পেলাম না।এভাবেt অনেক্ষন চলার পর আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হল ঘরের এক পাসের দেয়ালে।
.
সেখানে মনে হচ্ছে এক সুন্দরি দাড়িয়ে আছে।আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।কারন ফাকা বাড়িতে কে ঢুকবে। এখানে তো আমি ছাড়া আর কেউ থাকার কথা না।তাহলে কে এটা?? ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে,আর হাত পা তো ঠাণ্ডা বরফ.........চাদের আবছা আলোতে একটু ভালো করে দেখতেই বুঝলাম এটা মিলি। সর্বনাশ, মিলি তো মারা গেছে, ও এখানে কি করে আসবে।!!!!
.
আমি ওটার কাছে গেলাম খুব সাহস নিয়ে।কিন্তু সাহস কি আর টেকে। দৌড় দিতে গেলাম। কথায় আছে না “বিপদ আসলে ১২ দিক থেকে আসে”। দরজা তো বন্ধ। অগত্যা কোন রাস্তা না পেয়ে ওই জিনিষ টাকে ভালো ভাবে লক্ষ করার জন্য এগিয়ে গেলাম।
.
মানুষ হলে তো নড়াচড়া করত। কিন্তু এটা তো স্থির।কাছে যেয়ে হাত দিতেই বুঝলাম এটা মিলির ছবি। বড় করে বাঁধানো হয়েছে। যাক বাবা,হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বাপ রে একা ঘরে এভাবে কেউ ভয় পেলে হয়তো মরেই যেতো। আমার তো কপাল ভালো।মনে মনে চিন্তা করলাম “কতো সাহসী আমি!!”
.
আমি তখন মোমবাতি নিলাম বাক্সের উপর থেকে। ভাবলাম ২ টা নিয়ে যাই,পরে যদি আবার লাগে তাহলে এই ভুতুড়ে ঘরে আসবে কে।হাতে নিলাম মোমবাতি দুই টা। তারপর যখনই ঘর থেকে বের হব ঠিক তখনই আবার সেই ঘুঙুরের শব্দ পেলাম। এই শব্দ টাই আমি এর আগে কোথায় যেনো শুনেছি মনে হল,খুব চেনা চেনা লাগলো। .
.
কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মনে পড়ল এই শব্দ টা আমি সেই রাজবাড়ীতে শুনেছিলাম। অসম্ভব একটা আকর্ষণ অনুভব করলাম আমি। নিজের স্নায়ু গুলো নিয়ন্ত্রনে রাখার সর্বচ্চ চেষ্টা করছিলাম,কিন্তু পারছিলাম না।বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত হেরে গেলাম আমি একটা অজানা আকর্ষণের কাছে। ওই শব্দ টার প্রতি এই আকর্ষণের কারনেই আমি হেটে চলছিলাম। ও আর একটা কথা তো বলাই হয় নি।মিলি কিন্তু অসম্ভব সুন্দর নাচতে পারতো। স্কুলের সব অনুষ্ঠানেই ওর নাচ থাকতো। ফাস্ট প্রাইজ টা সব সময় ওই নিতো। শোকেস ভর্তি প্রাইজ আছে ওর ঘরে।
.
তিন তলার গোডাউন বা ষ্টোর রুম থেকে শব্দ টা আসছিলো। ওই দিকেই হেটে যাচ্ছিলাম আমি। দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম আমি। আমাকে তখন একটা রোবট বলা চলে,কারন অন্যের কথায় কাজ করছি।দুই তলার সিঁড়ি দিয়ে কিছু দূর যেতেই একগাদা বাদুড় মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো। মুহূর্তের মধ্যে বাড়ি টা একটা ভুতুড়ে পরিবেশ পেয়ে গেলো।
.
বাইরে তাকালাম আমি,দেখি ওই দিনের মতই (মিলি যেদিন মারা যায়) শুধু আমাদের বাড়িতেই বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে। বিকট এক বজ্রপাতের শব্দে আমার হুস ফিরল।
কি করছি আমি??উপরে কেন যাচ্ছি??!! দৌড় দিয়ে পালাতে গেলাম।কিন্তু আবার সেই শব্দের মোহিনী মায়াতে আবদ্ধ হয়ে পড়লাম। পারলাম না আর নিজেকে আটকে রাখতে। দোয়া দুরুদ তো দূরে থাক,মুখ নাড়ানোর ক্ষমতাও আমার নেই। পুরোটায় যেন এক অদৃশ্য শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিলো।
.
আস্তে আস্তে তিন তলার ষ্টোর রুমে চলে গেলাম।দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। ঘরে ঢোকার পর দরজা নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেলো। ভিতরে ঢোকার পর কে যেন আমাকে বলল “মোমবাতি দুইটা ধরাও,খুব অন্ধকার”। আমি বাধ্য ছেলের মতো মোমবাতি দুইটা ধরিয়ে একটা ভাঙ্গা চেয়ারের উপর রাখলাম।
.
বাইরে আবার সেই খুব জোরে বজ্রপাত হল। আর তাতেই আমি আবার নিজের মধ্যে ফিরে এলাম। আমি চারপাশ খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। হঠাৎ পিছন থেকে খুব জোরে হাসির শব্দ ভেসে এলো। আমি তাড়াতাড়ি ১ টা মোমবাতি ওই দিকে ধরলাম,একটা সুন্দরি মেয়ে হাসছে।
.
অন্ধকারে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না।কাছে গেলাম আমি। তারপরে হটাৎ করেই পিছনে ফিরে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলাম
কারন ওটা ছিলো মিলি। নৃত্যকারের বেশে বসে বসে হাসছে ও। তখন ও নিজেই বলল
মিলিঃ কিরে চিনতে পেরেছিস?দৌড় দিয়ে লাভ নেই, তুই এখন আর আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় পারবি না
আমিও দেখলাম ফাউ দৌড়াচ্ছি।একটুও এগুতে পারছি না।তাই দৌড় বন্ধ করে ফিরে দাঁড়ালাম
মিলিঃ হা হা হা,ছেলের সুবুদ্ধি হয়েছে
আমিঃ মা..নে??(ভয় পেয়ে)
মিলিঃআমাকে ফেলে সেদিন চলে এসেছিলি কেন??
আমিঃ.................
মিলিঃ বল
আমিঃ জানি না
মিলিঃ জানি না বললেই হল??(ধমক দিয়ে)
আমিঃ সত্যি বলছি আমি জানি না
মিলিঃ জানিস তোরা যদি সেদিন দুই তলায় যেতিস তাহলে আমাকে বাচাতে পারতিস, কিন্তু তোরা তো তা না করে ওখান থেকে চলে এলি
আমিঃ আমরা গেলে ছেড়ে দিতো কেন?? (ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম)
মিলিঃও দেখতে চাইছিলো আমাদের মাঝে বন্ধন টা কেমন…তাই আমি এখন তোকে মেরে ফেলব,প্রতিশোধ নেবো……….
আমিঃআমাকে ছেড়ে দে,দয়া কর
মিলিঃ তোরা করেছিলি?আমি কতো জোরে জোরে চিল্লালাম তাও তুই আসলি না বাচাতে
আমিঃ বাচাও আমাকে, বাচাও…………….
মিলিঃ কোন লাভ নেই,কেউ শুনবে না,কেউ নেই এখানে,আমি এখন এক অতৃপ্ত আত্মা। মেরে ফেলবো সবাইকে
আমিঃ ছেড়ে দে আমাকে,আমার ভুল হয়ে গেছিলো
তারপর মিলি হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। বলল “গুড বাই ভাইয়া”।সে আমাকে টেনে হিঁচড়ে ঘরের বারান্দায় নিয়ে আসল। তারপর বিধাতাকে স্মরণ করতে বলে তিনতলা থেকে ফেলে দিলো……………………
৬ষ্ঠ পর্ব
.
তিনতলা থেকে ফেলে দেবার পর আমার আর কিছুই মনে নেই,জানি না কি হয়েছিল। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিস্কার করেছিলাম হাসপাতালের বিছানাতে।
.
শুনেছিলাম তিন দিন জ্ঞানহীন অবস্থায় ছিলাম আমি। এই ঘটনার পর আমার চিকিৎসা করার জন্য আবার সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়।কারন আমার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে।এতে করে আমি কোমা তে চলে গিয়েছিলাম। আট মাস আই সি ইউ তে চিকিৎসা চলার পর আমি সুস্থ হয়ে যায়।তার প্রায় দুই মাস পর আমি দেশের মাটিতে পা রাখি।
.
তারপর আমার দাদা আমাকে দেখার জন্য আমাদের বাসায় এসেছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম না,তাই বেড রেস্টে ছিলাম।একদিন আম্মু আর আব্বু আমাকে বাসায় রেখে কেনাকাটা করতে মার্কেটে যায়।
শুয়ে শুয়ে বিরক্ত লাগছিলো আমার। তাই ভাবলাম দাদার সাথে একটু গল্প করে আসি। আস্তে আস্তে বারান্দায় গেলাম আমি।দেখি দাদা আরাম কেদারাতে বসে আছেন চোখ বুজে। আমি গিয়ে দাদার পাশে বসলাম।
উনি আমাকে দেখে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।তারপর আবার আগের মতো চোখ বুজে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর দাদা নিজেই নিরবতা ভেঙ্গে বললেন
দাদাঃকিরে এখন কেমন আছিস?
আমিঃভাল আছি,আপনি কেমন আছেন?
দাদাঃ ভালো, দাদুভাই তোমাকে আজ একটা জমিদারের গল্প শোনাবো, শুনবে?
আমিঃ অবশ্যই শুনবো
দাদাঃ আচ্ছা তাহলে শুরু করি,
একদেশে এক জমিদার ছিলেন,বিশাল এলাকার মালিক ছিলেন তিনি। পুরো গ্রাম তার কথায় যেমন চলত তেমনি পাশের গ্রামের জমিদাররাও তাকে অনেক ভয় পেত।শুধু একজনই তাকে ভয় পেত না একটুও।সে হলো তার ছোট ছেলে।জমিদার মশাই অনেক সখ করে নাম রেখেছিলেন তার ছোট ছেলের “মির মুনশি”।ভেবেছিলেন ছেলেটা হয়ত তার বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
.
অনেক ভালবাসতেন তিনি তার ছোট ছেলেকে।বেশি আদরের ফলে ছেলেটা তার বেয়াড়া হয়ে গিয়েছিলো। আস্তে আস্তে যখন সে বড় হয়ে উঠলো তখন গ্রামের লোকজন তার জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এই বুঝি কারোর ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিল,অথবা কারোর ঘরের মেয়েটাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো।আবার মাঝে মাঝে পাশের গ্রামের জমিদারের সাথে গণ্ডগোল বাধিয়ে দিতো সে।জমিদার সাহেবও খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন,কি করে একে ভালো করা যায়??
.
অনেক ভেবে চিন্তে তিনি ছেলের বিয়ের ব্যাবস্থা করলেন।ভেবেছিলেন হয়তো বিয়ে দিলে ছেলেটা তার সুপথে ফিরে আসবে।তাই তিনি এক জমিদার কন্যার সাথে তার ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন।বেশ ধুম ধাম করেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে যায়।কিন্তু বিধি বাম
.
ছেলে ঠিক হওয়ার বদলে আরও বেকে বসলো,কোথা থেকে মাথায় এলো বাড়িতে একটা নৃত্য ঘর বানাতে হবে।আদেশ জারি করা হল।এদিকে মির কোথা থেকে এক মেয়েকেও ধরে নিয়ে চলে আসলো। মেয়েটাকে আনা হল নৃত্যকার হিসেবে। একমাসের মধ্যেই ঘর তৈরি হয়ে গেল।তারপর সেখানে প্রায় প্রতিদিনই নৃত্য প্রদর্শন করতে হতো মেয়েটাকে। মেয়েটার বিশাল এক ছবিও সেখানে ঝোলানো হলো।এর প্রায় এক বছরের মাথায় মিরের স্ত্রী অন্তসত্তা হয়ে গেলো। ততোদিনে মির আরও দুই জন নৃত্যকার নিয়ে এসেছিলো ওখানে।তারা পালা করে নৃত্য করত। একদিন সেই প্রথম মেয়েটা নৃত্য করছিল,তখন মির মদ্য পান করে পুরো মাতাল হয়ে গিয়েছিলো। নৃত্যের এক পর্যায়ে মেয়েটার একটু তাল মিলাতে ভুল হয়ে গিয়েছিল বলে মিরের মাথা এটা দেখে গরম হয়ে গেল।সে উঠে যেয়ে মেয়েটাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলল সেখানেই।
.
সেদিন তার রেগে যাওয়ার কারনও ছিল যথেষ্ট ।তার ছেলের নাম রাখা হয়েছিল সেদিন এবং অনেক জমিদার এসেছিলেন মিরের নৃত্য ঘর দেখতে।অনেক জমিদারের সামনে তার মান ইজ্জত নষ্ট হওয়াতে তিনি মুলত রেগে গিয়েছিলেন
.
এই ঘটনার পর থেকেই মিরের জীবনে শুরু হয় এক কালো অধ্যায়।প্রতিদিন রাতে মেয়েটা তার সপ্নে এসে তাকে বলে যেতে লাগলো “নির্বংশ করে দেবো তোর বংশকে,তোর বংশের কোন মেয়েকে আমি আর বাঁচতে দেব না”
এতে করে মিরের স্বাস্থ্য দিন কে দিন ভেঙ্গে যেতে লাগলো।অনেক কবিরাজ দেখিয়েও কোন কাজ হলো না।একদিন এক কবিরাজ মির কে তার পুরো পরিবার সহ এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলল।তারা সমস্ত প্রস্তুতি নিলেও মিরের আর যাওয়া হলো না। ওই দিন রাতেই মির মারা গেল।কিন্তু পরের দিন সকালেই মিরের স্ত্রী তার সন্তান কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এই কারনেই তার স্ত্রী আর সন্তান সেদিন বেচে গিয়েছিলো।
.
আমি এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলাম। তারপর দাদা কে জিজ্ঞাসা করলাম এর পর কি হলো?সেই বংশে কি আর কোন মেয়ে বেচে থাকে নি?? দাদা তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
দাদাঃ মিলি তো বেচে থাকল না.........
আমি তো এই কথা শুনে পুরো থ মেরে গেলাম। বললাম
আমিঃ এটা আমাদের পরিবারের কাহিনি?
দাদাঃ হুমম
আমিঃ তাহলে তুমিই মিরের সন্তান?
দাদাঃ হুমম
আমিঃ তার মানে মিলি মারা যাবে তুমি এটা আগে থেকেই জানতে?
দাদাঃ হ্যাঁ দাদুভাই,আমি জানতাম।কিন্তু এখানে কিছুই করার ছিল না আমার
আমিঃ এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কি কোন পথ নেই?
দাদাঃ আছে দাদু ভাই,কিন্তু সেটা অত সহজ না
আমিঃ যত কঠিনই হোক আমি পারবো দাদা।আমাকে আপনি বলে দিন
দাদাঃ এতে তোমার প্রাননাশের সম্ভাবনা আছে।হয়ত আর ফেরত আসতে পারবে না তুমি
আমিঃ একটা প্রানের বিনিময়ে যদি হাজার টা প্রান বেচে যায় তাহলে সেটাই ভাল।তুমি আমাকে বল এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?
দাদঃ তুমিই পারবে দাদুভাই,তুমিই পারবে।তোমাকে আমি অবশ্যই বলবো............
৭ম পর্ব
.
দাদাঃ তুমিই পারবে দাদুভাই,তুমিই পারবে।তোমাকে আমি অবশ্যই বলবো। ভেবে দেখো,অনেক কষ্ট কিন্তু
আমিঃ পারব আমি
দাদাঃ আচ্ছা শোন তাহলে,
ওই নৃত্যঘরে একটা মহিলার ছবি আছে,দেখেছ?
আমিঃ হুমম অনেক সুন্দরি তো উনি
দাদাঃ উনার সুন্দর চেহারা আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।যাই হোক, ওই ছবিটার পিছনে দুইটা গর্ত আছে।একটা তে লাঠি চিহ্ন দেয়া আর অন্য টা তে একটা চাবির চিহ্ন দেয়া।
আমিঃ দুইটাই নিবো আমি?
দাদাঃ নাহ যেকোনো একটা
আমিঃ কোনটা?
দাদাঃ তা তো আমিও জানি না।তবে যেকোনো একটা সঠিক।তোমাকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে।যদি ভুলটা ধরো তবে তুমি ওখানেই শেষ। মেয়েটা তোমাকে মেরে ফেলবে
আমিঃ কি বলছেন আপনি?!!!!
দাদাঃ হুম........... (দীর্ঘশ্বাস)
আমিঃতারপর কি করব?
দাদাঃএই জায়গা থেকে সঠিক বস্তু তুলে নিয়ে তোমাকে নৃত্যঘরে যেতে হবে,জমিদার সাহেব যেখানে বসতো সেখানে একটা সিংহাসন এর মতো চেয়ার আছে। ওই চেয়ারটার ডান হাতলের তলায় একটা তরবারি আছে,সেটা তোমাকে নিতে হবে।
আমিঃ আমি প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। বললাম,তরবারি দিয়ে কি করব?আমি তো তরবারি চালাতে জানি না?
দাদাঃ ওটা দিয়েই তোমাকে মেয়েটার সাথে যুদ্ধ করতে হবে।
আমিঃকিভাবে?
দাদাঃ সেটা তোমার বিষয়।আমি শুধু নিয়ম টায় জানি।
ওই ঘরের মাঝে একটা চাদর বিছানো থাকে। ওটা উঠিয়ে ফেললে তুমি একটা গর্ত খুজে পাবে,সেই গর্তের উপরের ধাধা টা সমাধান করতে পারলেই তুমি যেতে পারবে সেই গর্তের ভিতরে।ওখানেই মেয়েটাকে মারতে হবে
ঠিক তখনই আমার ফোন টা বেজে উঠলো। একটুও ইচ্ছা করছিল না ফোন ধরতে।তবুও অনিচ্ছা শর্তেও ফোন টা ধরলাম।গ্রাম থেকে ফোন এসেছে। ধরার সাথে সাথেই মেজো কাকার কান্নার আওয়াজ পেলাম আমি
কাকাঃ কে,বাবা নাহিদ......বাবা রে তোর দাদা কই? (কান্নার স্বরে)
আমিঃ পাশেই আছে। আপনার কি হয়েছে কাকা? কাদছেন কেন?
কাকাঃ বাবা রে..আমার সোনার টুকরো ছেলেটা................. (বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ)
আমিঃ কি হয়েছে রবির? (অল্প কেদে দিয়ে)
কাকাঃ তোর ভাই টা মারা গেছে রে, মারা গেছে আমার রবি সোনা।
আমি আর কিছু শোনার মতো অবস্থায় থাকলাম না। বড় ধরনের একটা শক খেলাম আমি।দাদার কাছে ফোন দিয়ে আমি আমার ঘরে চলে আসলাম। মনে মনে ভাবলাম “কি হলো এটা? রবিও মারা গেল?”
.
আমি তাড়াতাড়ি আমার ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। মানি ব্যাগ খুলে দেখলাম যথেষ্ট টাকা আছে।দাদাকে বললাম মা বাবা আসলে তাদের সাথে যেতে।আমি আগে আগে রওনা হলাম আবার সেই অভিশপ্ত গ্রামের দিকে।
হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল রবির লাশটা আমাদের জন্য। যেহেতু ১২ ঘণ্টা সময় লাগে যেতে।
আমি বাড়ি আসলাম রবির কবর দেয়া হয়ে গেলে।একটা জিনিস আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলল। তা হলো রবির মাথা বাদে অন্য কোন অঙ্গের কোন ক্ষতি হয় নি। বাড়ির লোক বলছিল তিন তলার ছাদ থেকে নাকি পড়ে গেছিলো। তাহলে তো হাত পা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা।আমি এই রহস্যের জাল ছেড়ার জন্য ভাবলাম কাল সকালে একবার ছাদে যাবো।
.
যেই ভাবা সেই কাজ।পরের দিন সকালে ছাদে চলে গেলাম। যদি কোন ক্লু পাই,এই আসায়। অনেকক্ষণ খোজার পরেও কোন ক্লু না পেয়ে চলে জাচ্ছিলাম।কিন্তু যাওয়ার সময় হটাত করে পায়ের তলায় একটা কাগজ পড়লো।অনেক মোটা কাগজ,এখন সচরাচর এই কাগজ গুলো ব্যবহার হয় না।তাই একটু আকর্ষণ অনুভব করলাম।
.
একটা ভাজ খোলার পর সেখানে আমার নাম লেখা ছিল,তাই আমি দ্বিগুন আকর্ষণ অনুভব করলাম। তাড়াতাড়ি করে খুললাম কাগজ টা। কিন্তু ভেতরে যা দেখলাম টা দেখার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।হাত থেকে কাগজটা এক ঝটকায় ফেলে দিলাম
তারপর আবার কাগজটা উঠালাম একটু স্বাভাবিক হয়ে।
.
কারন ওই কাগজে তাজা রক্ত দিয়ে আমার জন্য চিঠি লেখা ছিল মিলির পক্ষ থেকে।যা ছিল তার সংক্ষিপ্ত ঠিক এই রকম
“জানতাম তুই আসবি।তাই তাজা জবা ফুলের পাপড়ি থেকে রস বের করে তোর জন্য চিঠি টা লিখলাম।(মনে মনে বললাম আল্লাহ বাচাইলো।ভাবছিলাম তাজা রক্ত,এখন তো দেখি তাজা গোলাপের পাপড়ি)। তোকে মারার সময় যে ভুল করেছিলাম তা আর করি নি।
.
এবার প্রথমে মাথা টা থেতলো করে নিয়েছি।তারপর নিজে হাতে করে ভাই টাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে এসেছি ছাদ থেকে।ফেলে দিতে চেয়েছিলাম।পরে ভাবলাম যতই হোক আপন ভাই আমার।ভাল থাকিস,বেস্ট অফ লাক তোর জন্য। যেহেতু তুই আবার ওই বাড়িতে যাচ্ছিস”.....
৮ম পর্ব
.
চিঠি টা পড়ার সময় যে বিষয় টা সব চেয়ে আশ্চর্যের ছিল টা হলো আমি যেই লাইন পরছিলাম সেই লাইন টাই উধাও হয়ে যাচ্ছিলো।তাই প্রতিটা লাইন ভালো করে পড়েছিলাম আমি।ওখানে স্পষ্ট করে আমার বিপদের কথা বলা ছিল।
আমি তাড়াতাড়ি করে তখন নিচে চলে আসলাম।পুরো শীতের সময় তখন। মানুষ লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর আমি তখন দর দর করে ঘামতেছি।কি করব না করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।কারন ওখানে গেলে হয়তো আমার জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।আর না গেলে হয়তো আরও কয়েকশ বোনের জীবন নষ্ট হবে।
.
অনেকক্ষণ চিন্তা করে সব শেষে ঠিক করলাম আমি যাবো ওই ভুতুড়ে বাড়িতে,যা হয় হবে।আমার বিনিময়ে অন্য লোকের প্রান বাঁচলে সেটাই ভালো হবে।
.
কাধে ব্যাগ নিলাম। ব্যাগের মাঝে দুইটা ছুরি আর একটা লাঠি নিলাম।সেলফি স্টিক তাও নিতে ভুললাম না।কারন,হয় ওটা দিয়ে ছবি তুলে বীর দর্পে বাড়ি আসবো আর না হলে অন্তত লাঠি হিসেবে তো ব্যবহার করা যাবে। ওতেই আমার লাভ।অল্প সময় মারামারির প্র্যাকটিস ও করে নিলাম।যাতে ওখানে গিয়ে ভালো করে মারামারি করতে পারি।
.
তারপর ব্যাগ টা নিয়ে সোজা দাদার ঘরে চলে গেলাম।কিছু না বলে উনার পায়ের কাছে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আমি আস্তে করে বললাম
আমিঃ যাচ্ছি দাদা
উনি এতক্ষণ খেয়াল করে নি যে আমি কাধে ব্যাগ নিয়ে এসেছি।তখন বললেন
দাদাঃ আজই বাসাই চলে যাচ্ছ? আর কয়দিন থাকা যেতো না?
আমিঃ আসলে দাদা,আমি বাসায় যাচ্ছি না।
দাদাঃ (আতঙ্কিত হয়ে) তাহলে কোথাই যাচ্ছ?
আমিঃ ওই ভাঙ্গা বাড়ির দিকে
দাদাঃ আচ্ছা তুমি একটু থাম।
ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন,কিছুক্ষন পর ফেরত আসলেন এক তাবিজ নিয়ে।হাতে বেধে দিতে দিতে বললেন
দাদাঃ এটা তোমাকে সাহায্য করবে। শরীর বন্ধ করে দিচ্ছি যাতে কোন খারাপ আত্মা তোমার উপর ভর না করে।
আমিঃ আচ্ছা দাদা,দোয়া করবেন যাতে আপনাদের কাছে আবার ফেরত আসতে পারি। (বলেই কেদে দিলাম আমি)
দাদাঃ তুমি পারবে দাদু ভাই। তোমার শরীরে রাজ বংশের রক্ত। তুমি পারবে নাতো কে পারবে?
আমিঃ আমি যদি ফেরত না আসি তাহলে বাবা,মা কে বলবেন। না হলে আম্মু কে বলবেন গ্রাম ঘুরতে গেছি
দাদাঃ আচ্ছা দাদুভাই,এবার তুমি এসো
আমিঃআচ্ছা
আমি চিঠি পাওয়ার কথাটা পুরো চেপে গেলাম;আমি।মনে হলো ওটা না বলাই ভাল।কারন ওটার আবার কি ব্যাখ্যা দিবে আর আমি হয়তো যেতেই পারব না ভয়ে, এমনিতেই আমি ভিতু মানুষ
আস্তে আস্তে হেটে চলে গেলাম আবার সেই অভিশপ্ত বাড়িতে। বাড়ির বাউন্ডারির বাইরে থেকেই দেখে নিলাম বাড়ি টাকে একবার প্রান ভরে। একসময়ই এটা আমাদের বাড়ি ছিল!!!ভাবতেই অবাক লাগে।অথচ সেই বাড়ীতেই এখন আমার মৃত্যু ফাদ পাতা।চোখ বুজে একবার স্মরণ করলাম মিলির মৃত্যু, রবির মৃত্যু, আমার অসুস্থতা। শরীরে যেঁনো আলাদা একটা জোশ খেলে গেলো প্রতিশোধের। হুমম এটাই চেয়েছিলাম আমি।
.
সাহস করে ঢুকে গেলাম বাড়ির ভিতরে।আজ ওখানে কোন বৃষ্টি নেই,নেই কনো ঝর।মনে পড়ে যাচ্ছে আমার লেখা সেই কবিতা
ঝড় নেই, বৃষ্টি নেই,নেই কোন ছায়া
প্রকৃতি আজ রুক্ষ সুক্ষ
পাখি মেলেছে ডানা
কৃষাণ বধু গান ধরেছে “ আল্লাহ মেঘ দে পানি দে”
তাই শুনে আজ চাতক পাখি করছে হাঁ হুতাস
ধুর,আমার এখন মরার সময়,আর আমার মনে পড়তেছে কবিতা, মানুষ বটে আমি একটা। দরজার কাছে যেতেই সেটা নিজে নিজেই খুলে গেল।মনে হলো আমাকে আপ্যায়ন করছে।প্রথমেই চলে গেলাম ছবিটার কাছে।হটাৎ করেই মাথার মধ্যে কেমন যেন একটা শব্দ হতে শুরু করল।মনে হচ্ছিলো মাথা টা ফাটিয়ে ফেলি।কিন্তু তা করলে তো হচ্ছে নাহ।মরেই যাবো। তাই নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। ছবিটা সরিয়ে দেখি আসলেই সেখানে দুইটা চিহ্ন যুক্ত দুইটা গর্ত আছে? কোনটা নিব? ভাবলাম আগে সিংহাসনের তরবারিটা দেখে আসি।
.
ওখানে যেয়ে দেখলাম তরবারি টা একটা তালাবন্ধ সুরক্ষিত স্থানে আছে। চাবি পাব কোথায় এখন আবার।কিছুক্ষণ চিন্তার পরেই বুঝলাম যে আমাকে গর্ত থেকে চাবি নিতে হবে।ওখানে যেয়ে চাবি চিহ্ন যুক্ত গর্তে হাত দিতেই গর্তের বালি ঝরে পড়ল।ওই বালির মধ্যেই একটা চকচকে পিতলের আংটি ছিল। ওটা নিলাম আমি।মাথার ভিতরে শব্দ টা এখনও হচ্ছে।কি করলে যে এটা বন্ধ হবে কে জানে।তখন কি কারনে হাতের যে জাইগায় তাবিজ ছিল সেটা মাথাই লাগতেই মাথার ভিতরে শব্দ থেমে গেল।সরালেই শব্দ করছিলো।তাই হাত থেকে তাবিজ টা খুলে মাথায় বেধে নিলাম।আহা কি আরাম। বলে বোঝানো যাবে না।
.
ঠিক তখনই মাথার উপর দিয়ে একগাদা বাদুড় এসে আমাকে আক্রমন করল।তরবারি দিয়ে দুই-চারটা মারার পর সব উড়ে জানালা দিয়ে চলে গেল।এবার ঘরের মাঝখানে যেয়ে চাদর সরালাম আমি। বর্ণনা মোতাবেক একটা ধাধা আছে। একটা মেয়ের ছবি দেয়া আছে উলটো পাল্টা করে। পাশেই তার ভালো ছবিটা দেয়া আছে। তখনি কে যেন উপর থেকে বলে উঠলো “মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়।না পারলে তুমি শেষ”
.
আমি আগে ছবিটা ভালো করে দেখে নিলাম।তারপরেই ছবিতে হাঁত দিতেই টিক টিক করে সময় গোনা শুরু হলো কোথা থেকে জেন।ভাল করে দেখে নেয়াতে আমার ২৫ সেকেন্ডে হয়ে গেলো। ঠিক তখনই ছবিগুলো রক্ত হয়ে গেল। ওখানে লোহার একটা দরজা ছিল। তার উপরে রক্ত দিয়ে লেখা হয়ে গেলো “ওয়েলকাম,অনেকদিন পর আবার আজ রক্তের স্বাদ পাবো” তখন হটাৎ করেই লোহার দরজা টা কাপা শুরু করল।আমি তো ভয় পেয়ে পাশে সরে আসলাম। এতো জোরে কাপছিল যে মনে হচ্ছিলো পুরো বাড়িতে ভুমিকম্প হচ্ছে।বাইরে প্রচণ্ড ঝড় আর বিকট শব্দে বজ্রপাত শুরু হলো। হটাৎ করে প্রচণ্ড শব্দ করে লোহার দরজা টা উড়ে চলে গেল।বিকট শব্দে আমার কানে তালা লেগে যায়। সাথে সাথে ভিতর থেকে আসছিলো কিছু হাড় হিম করা সব্দ।সব্দ গুলো শুনে আমার আর ভিতরে যেতেই ইচ্ছা করছিল না।তবুও কিছুক্ষণ চিন্তার পর ভিতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন ও আমি শুনতে পারছি ভিতর থেকে কে যেন প্রচণ্ড শব্দ করে হাসছে।হা হাঁ হাঁ………………………
শেষ পর্ব:-
ভিতর থেকে এমন কিছু শব্দ আসছিলো যাতে মনে হচ্ছিলো গর্তের ভিতরে যে আছে তার বহু দিনের রক্ত পিপাসা।আজ রক্ত দিয়ে স্নান করবে সে।আস্তে আস্তে ভিতরে নেমে যাচ্ছি আমি।সিঁড়ির মতো ধাপ করা রয়েছে সেখানে।যতো ভিতরে যাচ্ছি,মনে হচ্ছে শব্দ টা আরও জোরে কানে বেজেই চলেছে।প্রচন্ড আকারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলাম আমি। যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম শান্ত হয়ে থাকার জন্য।কিন্তু হচ্ছিলো না,পেরে উঠা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো।তার উপর এই শব্দের ভয়ে আমার শিরদাঁড়া পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
,
কিছুদুর যাবার পরেই একটা সিঁড়িতে পা দেয়ার সাথে সাথেই সেটা ভেঙ্গে পড়ে গেল।ওটা ভেঙ্গে পড়লে আমি আর আস্ত দাড়িয়ে থাকি ক্যামনে?? অসহায়ের মতো আমিও পড়তে লাগলাম। সাথে তো চিৎকার মাষ্ট ফ্রী থাকবেই। এটা বলা লাগে না। নিচের মেঝে আমার দৃষ্টির মাঝে আসার সাথে সাথেই আমি চোখ বন্ধ করলাম। আপন মৃত্যু চোখে দেখা কখনই সম্ভব না।
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো চোখ বন্ধ করে রেখেছি।কিন্তু সমস্যা টা হলো এতক্ষণ তো আমার পড়ে যাবার কথা।মাজার হাড় আস্ত থাকার কথা না।আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আমি।নাহ মেঝেতে পড়ে যাই নি আমি।তাহলে কি হলো এটা?খেয়াল করে দেখি আমি মেঝে থেকে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার উপরে।কে বাঁচালো আমাকে?যখন শুন্যে ভেসে ভেসে এই কথা চিন্তা করছিলাম তখন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে আস্তে করে নিচে নামিয়ে দিলো।
.
সিঁড়ি থেকে পড়ে যাবার সময় এবং এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার মাঝে একটা অদ্ভুত জিনিস হলো সেই হাড় হিম করা শব্দ টা আর হচ্ছিলো না। অনেকটা সস্তি পাচ্ছিলাম আমি। পুরো ঘরটাই আসলে অন্ধকার বলা চলে।শুধু আমি যে জায়গাটাতে দাড়িয়ে ছিলাম সেখানেই আলো ছিলো।কিছুটা ভয় যদিও লাগছিলো তবুও সাহস হারালাম না
কিছুক্ষণ পর অন্ধকারের মধ্যে থেকে কে যেন বলে উঠলো “তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবে আমার সাথে?এই কথা শুনে আমার বুকটা ভয়ে আর হাহাকারে কেপে উঠল।হাইরে আমি ও তলোয়ার চালাতে বিন্দু মাত্র জানি না।কি হবে এখন?দাদা বলে দিয়েছেন এই সময় সাহস হারাতে হয় না।সাহস হারালে নির্ঘাত মৃত্যু তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।তাই আমি অসীম সাহস বুকে নিয়ে গম্ভীরতা বজায় রেখে বললাম “খেলবো আমি তলোয়ার তলোয়ার যুদ্ধ”
.
তখন অন্ধকারের মধ্য থেকে কে যেন বলে উঠলো “আচ্ছা্,তাহলে শুরু হোক”এই বলে আবার সেই অট্টহাসি শুরু হয়ে গেল।মাথা পুরাই টাল বানিয়ে ছাড়বে দেখছি।মনে হলো সেই হাসির শব্দ টা আস্তে আস্তে কাছে আসছে।কিন্তু কোন দিক থেকে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না।মনে হচ্ছে চারপাশ থেকে অজস্র লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে।অনেক সতর্ক থাক্লাম।কারন বিপদ যেকোনো দিক থেকে আসতে পারে।
কিছুক্ষণ পর দেখি আমার সামনে এক ভয়ঙ্কর মহিলা এসে দাঁড়ালেন।বললেন
মহিলাঃ চলো তাহলে যুদ্ধ শুরু করা যাক
আমিঃনা,মানে....ইয়ে পানি খাবো
মহিলাঃএখানে শুধু রক্ত পাওয়া যায়,খাবে?
আমিঃ (মনে মনে বললাম পাগল পাগল নাকি?মরা মানুষ কে আবার মারতে চায়) না থাক,লাগবে না
.
মহিলার শারীরিক বর্ণনা যদি কেউ জানতে চায় তাহলে সেটা এরকম হবে ““দাত সবকটায় বিদ্যমান তবে চারটে দাত বেশ খানিকটা লম্বা হয়ে বাইরে বের হয়ে আসেছে।গায়ের চামড়া আর গোস কোনটাই আস্ত নেই।ঝলশে গেছে সব।তবে বাহিরের চারটে দাত থেকেই রক্ত পড়ছে ফোটায় ফোটায়””আমার তো হাসি পাচ্ছিলো। এই ভাঙাচোরা দেহ নিয়ে নাকি আমার লগে যুদ্ধ করবে।আমাকে সে সম্মুখ সমরে ডাক দিলো।বেশ একটা ভাব নিয়েই গেলাম। যে অবস্থা তাতে উনারে দুইটা বাড়ি দিলেই শেষ। এতে আবার তলোয়ার লাগে নাকি?
.
কিন্তু আমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। যতই ভাঙ্গাচোরা দেহ হোক না কেন ভিতরে শক্তি অটুট রয়েছে।তলয়ারের দুইটা বাড়ি ঠেকাতেই তা বুঝতে পারলাম।কিন্তু কিছু করার নেই আমার। এখন আর পিছিয়ে আসা সম্ভব না। খোদা কে প্রান ভরে স্মরণ করছিলাম আমি।কি জানি বেচে বেরুতে পারব কিনা।চার-পাচ টা তলোয়ারের বাড়ি ঠেকাতে না ঠেকাতেই আমার বাম পায়ে একটা পোঁচ লাগলো তলোয়ারের।রক্ত পড়ছিল তবুও হিরোর মতো মারামারি করছিলাম।
.
কারন আমি প্রথমে টেরই পাই নি যে আমার পা কেটে গেছে।হি হি হি।আমাদের এই যুদ্ধের শর্ত ছিল আমাকে মারতে হলে আমার বুক বরাবর ছুরি মারতে হবে ।তা না হলে আমি মরব না। অন্য কোথাও লাগলে সেই জায়গা রিভাইব(revive) হয়ে যাবে।আর আমি যদি তার শরীরের যেকোনো জায়গাতে মারি তাহলে সে ধ্বংস হবে। ওই মহিলা আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাত করেছিল কিন্তু কপাল জোরে বেচে গেছি।
.
আমাকে তো এক পর্যায়ে মাটিতে ফেলে দেই।তারপর বুক সোজা করে তলোয়ার উঠানো মাত্র আমি কিভাবে যেন তার হাতের কব্জি তে আঘাত করে ফেলি।প্রচন্ড চিৎকার করতে থাকেন উনি। ওই মহিলার হাত থেকে তলোয়ার পড়ে গেলে আমি বুঝতে পারি যে আমি জিতে গেছি।মনে তো তখন আমার আনন্দের জোয়ার বইছে।সুযোগ বুঝে আরও কয়েকটা পোঁচ বসিয়ে দিলাম তার বুকে।সাথে দুই চারটা কিল ফ্রী ও দিলাম।
.
ভাবলাম হয়তো বাড়ি টা আজ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেল।এবার একটু শান্তি পবো হয়তো। কিন্তু কপালে যা নাই তা কি পাওয়া যায়? হটাত করেই পিঠে দুম দাম করে কয়েকটা কিল পড়ার শব্দ হলো। সাথে শিহাবের ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর “ওই সালা ওঠ,কাল রাইতে বহুত ঘুমাইছস।আর আমারে বানাইছস আলু ভর্তা। সালা আমার দুই বন্ধু আইছিল বইলা তোর কাছে শুইছিলাম।আজিবনের মতো তোর লগে ঘুমানোর স্বাদ মিটাই দিছস। ওঠ কইতাছি,কলেজ রইছে”
.
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আমার মেসের রুমে।কি হলো এটা?!! আমি তাড়াতাড়ি করে দাদাকে ফোন দিলাম। উনি ফোন ধরেই বললেন
দাদাঃ আমি জানতাম তুমি সফল হবে
আমিঃ কিন্তু দাদা আমি এখানে কি করে………….
দাদাঃ তুমি তোমার কাজে সফল হয়েছো দাদুভাই,আর সেইজন্য তুমি কয়েকবছর আগে চলে এসেছ। এটাই নিয়ম ছিল
.
আমি তখন সব বুঝতে পারলাম।আসলে স্বপ্ন দেখছিলাম না আমি।দেখতে পেলাম বাম পায়ের কাটা দাগটা পুরোপুরি মুছে যায় নি অন্য দাগ মুছে গেলেও। হয়তো এটাই আমার বীরত্ব গাথার সাক্ষী হয়ে থাকবে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন