খুঁজে পাওয়া ডায়েরীর সেই অচেনা ছেলেটি
ডান হাতে কফির মগ আর বাম হাতে দামি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে অধরা।মেয়েটির নাম অধরা হলেও এই নামে শুধু তার স্কুলের বান্ধবীরাই ডাকে।সম্পূর্ণ নাম অধরা নুসরাত পরী।ঠিক যেন একটা পরী পরী ভাব তার চেহারার মাঝে।ক্লাস টেনে পড়লেও বাবা মা মেয়ের কোন শখ অপূর্ণ রাখেন নাই কারণ একমাত্র মেয়ে বলে কথা।পরীর গল্প পড়তে খুব ভালোলাগে।ফেসবুকে আসে মূলতও গল্প পড়ার জন্যই হয়ত কাউকে এর মাঝে হাই হ্যালো দিয়েছে কিনা তার ঠিক মনে নেই।অকারণেই হয়ত অনেকেই ইন বক্স করে তবে কখনোই তার রিপ্লাই দেওয়া হয়ে উঠেনি।
.
গল্প পড়তে পড়তে একটা গল্পে লেখক একটা গল্পের বইয়ের নাম সাজেস্ট করেন সবাইকে পড়ে দেখার জন্য।পরীর খুব ভালো লাগে তাই চিন্তা করে বইটি সে কিনবে তার বাবাকে নিয়ে নীলক্ষেত থেকে।পরেরদিন আর যাওয়া হয়না,কিছু কাজ আর তার বাবার ব্যস্ততা নিয়ে আর সময় করে উঠা হয়নি।৫/৬ দিন পর ভুলে যায় পরী।হঠাৎ পরী আর তার আব্বু একদিন নীলক্ষেত এর দিকে কোন একটা কাজে যান।পরীর তখন মনে পড়ে যায় বইটির কথা।বাবাকে বলেন বইটি তার লাগবেই........ অনেক দোকান খুঁজতে থাকে কিন্তু বইটি পাচ্ছে না।এক দোকানদার বলল একটা দোকানের কথা যেখানে পুরাতন বই বিক্রি হয় ওখানে হয়ত পাবেন কারণ বইটা অনেক পুরাতন।
.
পরী সেই দোকানে গিয়ে বইটি খুঁজে পায়,ভালোই লাগে পরীর বইটির গল্পগুলি আর লেখকের কথা খুব মনে পড়ে।পরী যখন বই দেখতে ছিলো তখন দোকানের ছোট কাজের ছেলেটা বলছে এই বইয়ের ভিতরে এই ডায়েরী টা রাখছে কে এইটা পুরাতন কাগজের সাথে রাখলাম বিক্রি করে দিয়েন কেজি হিসাবে।পরীর চোখ যায় ডায়েরীর দিকে।মলাটটি অনেক সুন্দর দেখায় এখনো পুরাতন তবুও।পরী বলে কই দেখি ডায়েরী টা।ছেলেটি পরীর হাতে ডায়েরীটা দেয়....... যখনই পরী ডায়েরী খুলতে যাবে তখন ই তার বাবা বলেন চলো অনেক সময় হয়েছে এইবার চলো।
.
বাবাকে বলে বাবা আমি এই ডায়েরীটা নিতে চাই,অধরার বাবাও তেমন কিছুই বলে না শুধু বলে আচ্ছা যা নিবে নিয়ে চলো।দোকানদারকে দাম দিয়ে গাড়িতে করে চলে যায় বাসার দিকে বাবা আর মেয়ে।বই আর ডায়েরী তখন পেপার দিয়ে বাধা থাকায় ডায়েরীটার ভিতরে কি আছে আর দেখা হয়নি।শুধু ডায়েরীটার উপড়ে লেখা ছিলো "ভালোবাসার শেষ মৃত্তিকায়" নিচে ছোট করে লেখা নিশ্চুপ।এতটুকুই দেখতে পায় নুসরাত।
.
বাসায় গিয়ে মায়ের সাথে গল্প করতে করতে ডায়েরী বা বই কোনটাই দেখার সময় হয়নি পরীর।রাতে যখন পড়তে বসে তখন টেবিলের উপড়ে বইটার দিকে চোখ যায় পরীর।তাড়াতাড়ি করে পেপার খুলে প্রথমে বই বের করে উল্টিয়ে পালটিয়ে বইটি দেখা একটা গল্পের খানিক অংশ পড়ে নেয় অধরা ভালোই ছিলো গল্পটি।চিন্তা করে না আজকে আর না কালকে একবারেই শেষ করবে গল্পটুকু এখন ঘুমানো।
.
পরেরদিন সকালে খুব তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে অধরা,কিছু একটা স্বপ্ন দেখেছে সে।ঠিক মনে নেই তবে এতটুকু আচ করতে পারছে কালকের বই বা ডায়েরী টা নিয়েই কিছু দেখেছে।অধরা টেবিল থেকে বইটা আর ডায়েরী টা খাটের উপর আনে।আজকে ডায়েরী আগেই হাতে নিলো,সুন্দর একটা হাতের লেখায় নীল মলাটের উপর কালো কালি দিয়ে লেখা "ভালোবাসার শেষ মৃত্তিকায়"নিচে লেখা নিশ্চুপ।এবার মলাট উল্টিয়ে দেখে খুব সুন্দর করে কিছু লেখা......অধরা পড়তে শুরু করে.....
.
.
জীবনের লেখা গল্প গুলি লিখে রাখলাম এই ডায়েরীর মাঝে,জানি না কেউ পড়বে কিনা,কেউ কোনদিন দেখবে কিনা হয়তবা আমার লেখা গল্প কারো ভালো লাগবে না তবুও আমার মনের মাঝের অজানা চিন্তা গুলি আর কিছু ভালো লাগা নিয়ে লেখা গল্প গুলি লিখে রাখছি এই ডায়েরীর মাঝে।
.
হয়ত আমি কোনদিন থাকবো না,নয়তোবা হারিয়ে যাবো এই পৃথিবীর বুক থেকে তখন হয়ত কেউ খুঁজে পাবে আমার লেখা গুলি পড়ে নিবে সময় করে যদি তার ভালো লাগে।
.
ঠিক মানুষের সৃষ্টি যেমন মৃত্তিকা দিয়ে,মানুষ একসময় মিশে যাবে এই মৃত্তিকার মাঝে।আর তার সকল ভালোবাসা,হাসি-দুঃখ আর কান্না সবই হারিয়ে যাবে এই মৃত্তিকার সাথে।
.
তাই আমার এই লেখা গুলি হয়ত একদিন হারিয়ে যাবে,ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে ঠিক এই মৃত্তিকার মাঝে।চিন্তা করে ঠিক করেছি আমার ডায়েরী টার নাম দিবো ভালোবাসার শেষ মৃত্তিকায়।
.
(নিশ্চুপ)
.
.
অধরা একটু থমকে যায় কত সুন্দর করে লেখাটি লিখেছে খুব ভালো লাগে তার।লেখাটি কি কেউ আগে লিখেছে চিন্তা করে গুগলে খুঁজে দেখে না কেউ লেখেনি।এবার চিন্তা করে নিজেই লিখবে এই লেখাটি আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে।তখন সন্ধ্যা ৬:১৪ মিনিট নিজের টাইমলাইনে কাব্যিক টাইপের কিছু পোষ্ট করলো।জানিনা কে কেমন কি সব বলবে ভাববে,এই চিন্তায় পরী মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে ফেসবুক লগ আউট করে দেয়।সেইদিন রাতে আর ফেসবুকে যাওয়া হয়না অধরার।পরের দিন সকালে স্কুলে যায় পরী।সব বান্ধবী তাকে বলছে ভালোই তো শুরু করছিস।আগে তো জানতাম না তুই এই সব পাড়িস।
.
অধরা একটু অবাক হয়ে যায় কি করলাম,সবাই এমন কেন বলছে কি হলো।অধরা তার সব থেকে কাছের বান্ধবী তাসফি এর কাছে যায় জিজ্ঞেস করে কিরে কি হয়েছে বল তো,আমি আবার কি করলাম?তাসফি বলে ন্যাকা কিছুই জানো না কালকে রাতে ফেবুতে ছিলি না লাস্ট পোষ্ট দিয়ে?তোর পোষ্টে কত লাইক কমেন্ট আর শেয়ার দেখছিস।এত সুন্দর করে লিখছিস তাই।যাই হোক নিশ্চুপ টা কে রে।বিড়বিড় করে অধরা বলে নিশ্চুপ আমার স্বপ্নের রাজকুমার,সেই ডায়েরীর অচেনা ছেলেটি।অধরা এত সময় চুপ করে শুনছিলো,সব মনে পড়তে লাগে তার জলদি ফোন
বের করে ফেসবুকে লগইন করে দেখে এত লাইক কমেন্ট কি রিপ্লাই দিবে।সেইদিন একটা কমেন্টের উত্তর দেয়নি শুধু প্রশংসা গুলি দেখে গেছে।পরের দিন ডায়েরী থেকে প্রথম গল্পটি পড়তে শুরু করে,প্রায় ৩২মিনিট সময় নিয়ে গল্পটি শেষ করে পড়া।অধরা যত পড়ছে ততই ডায়েরীর গল্পের প্রেমে পড়ছে।তার থেকে বেশি খুঁজতে ট্রাই করে এত সুন্দর করে ডায়েরীটা যে লিখেছে তাকে কিন্তু তার কাছে ডায়েরী আর গল্পগুলি ছাড়া কিছুই নাই যার মাধম্যে জানবে কে সে।অধরা চিন্তা করে এই গল্পটিও সে ফেসবুকে দিবে।যেই চিন্তা সেই কাজ ঝটপট লেখা শুরু করে গল্পটি প্রায় ১ঘন্টা ৪০ মিনিট বসে টাইপ করে গল্পটি পোষ্ট করে নিজের টাইমলাইনে।
.
চিন্তা করে আজকে দেখবে কে কি বলে তাই ফেবুতে থাকলো অধরা।একটু পর সবার লাইক কমেন্ট আসতে লাগে।সবাই কম বেশি প্রশংসা করতে লাগে আর বলতে লাগে খুব ভালো হয়েছে লেখাটি।অধরার বিষয় গুলি খুব ভালো লাগতে শুরু করে।আগে সে নিজেই অন্যের গল্প পড়ে কমেন্ট করত আর আজকে নিজের লেখায় কমেন্ট করছে সবাই।অবশ্য নিজের বললে ভুল হবে গল্পটি সে লিখলেও টাইপ করে তার আগে ডায়েরীতে কেউ লিখে রেখেছে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে।তবুও টাইপ তো সে করেছে।
.
অধরা চিন্তা করতে থাকে সে যা করছে অনায় তবুও তার কিছুই করার ছিলো না।একে তো ডায়েরীটা সে কিনে এনেছে তার উপর এই ডায়েরীর গল্পগুলি তার খুব ভালো লাগায় সবার সাথে শেয়ার করেছে।কিন্তু এই নিশ্চুপ কে তার খুঁজে পেতেই হবে।হয়ত সেও এই যুগের কেউ তাই যদি হয় ফেসবুক ব্যাবহার নিশ্চয়ই করবে।আর ফেসবুকে যদি তার গল্প একটা একটা করে অধরা পাবলিশ করতে থাকে একদিন তার চোখে নিশ্চয়ই ধরা পড়বে তখন হয়ত বুঝবে তার ডায়েরীটা কারো কাছে আছে।এমন ডায়েরী কেউ বিক্রি করতে পাড়ে না।
.
এই বিশ্বাস অধরার মনের মাঝে নিয়েই শুরু করে লেখালেখি।কিন্তু তার এই লেখা গল্প শুধু তার টাইমলাইনে প্রকাশ করলে তো খুঁজে পাবে না।তাকে ফেসবুকের বড় বড় পেজগুলিতে লেখা দিতে হবে।অধরা আগেই ছিলো একটা গল্পের পোকা,যদিও সে লিখতো না কখনো তবুও বিভিন্ন বড় পেজ গুলির রাইটিং গ্রুপে ছিলো তার জয়েন করা।সেই সুবাদে নিজর লেখা গল্পটি বড় পেজ গুলির গ্রুপে দিল।পরের দিন সকালে দেখে তার লেখা গল্পটি একটা বড় পেজে এপ্রুব করে টাইম জানিয়ে দিয়েছে।অধরা সেই কমেন্ট দেখে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত খুশি।
.
অপেক্ষা করতে থাকে কখন রাত ৭:১৪ বাজবে আর তার লেখাটি পেজে যাবে।যখন সেই শুভ ক্ষণ আসে অধরা পেজে গিয়ে নিজের লেখায় একটা কমেন্ট করে ধন্যবাদ জানায়।অনেকে তার কমেন্টে রিপ্লাই দেয়,ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়।অধরার আর এর পরে পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি।প্রতি সপ্তাহে ৩ টা করে গল্প ডায়েরী থেকে লিখে নিজের টাইমলাইন আর পেজ গুলিতে দিতে শুরু করে।দিন দিন তার লেখার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে খুব বেশি।প্রায় ৩মাসে ৪০ টার মত গল্প সে তার টাইমলাইনে আর পেজে দেয়।এখন অধরা নুসরাত পরী খুব জনপ্রিয় একজন লেখিকা।কিন্তু এই জনপ্রিয়তার রহস্য অধরা নিজেই জানে আর কেউ না।নিজেও এর মাঝে মোটামুটি লেখালেখি শুরু করে।
.
হঠাৎ একদিন বৃষ্টির দিনে অধরার ইচ্ছা হলো ডায়েরী থেকে কোন একটা লেখা গল্প যা বৃষ্টি নিয়ে লেখা নিজের টাইমলাইনে দিবে।যেই চিন্তা সেই কাজ টাইপ করে টাইমলাইনে দিন।অনেকেই লাইক কমেন্ট শেয়ার করে।পরের দিন সেই গল্পটা পেজে যায়।অধরা ওইদিন আর ফেসবুকে আসে না।রাতের দিকে যখন ফেসবুকে আসে তখন অধরা ইনবক্সে দেখে একটা আইডি থেকে এসএমএস।"আপনার লেখা লাস্ট গল্পটির একটা লাইন ভুল লিখছেন,হয়ত ডায়েরীতে অমন ভাবে লেখা ছিলো না।অধরা এসএমএস টি দেখে থমকে যায়.......এই ছেলে ডায়েরীর কথা জানলো কি করে?তবে কি এই সেই নিশ্চুপ?
.
খুব ভয় করতে থাকে অধরার।চিন্তা করে কি রিপ্লাই দিবে?সে তো তার লেখা চুরি করেছে।খুব ভয়ে ভয়ে ভাবে কে সে আগে জিজ্ঞেস করে দেখবে।বলে আপনি কে আর কোন ডায়েরীর কথা বলছেন।এসএমএস এ রিপ্লাই জি আমি নিশ্চুপ আইডিতে দেওয়াই আছে।এসএমএস টার দেখে নামটা ওই ভাবে খেয়াল করেছিলো না অধরা।এবার নিশ্চুপ নামটা শুনে ভয়টা খুব করতে থাকে তার।অধরা খুব ভয় পায় ছেলেটা যদি তাকে বেশি বেশি বলে এখন।কিন্তু সে তো অন্যায় করেনি তাকে খুঁজতেই লেখাগুলি শেয়ার করা।তার উপরে সে প্রতিটা লেখায় ডেডিকেটেড টু: "ডায়েরির সেই অচেনা ছেলেটি" লিখত।
.
অধরা সাহস করে এসএমএস দিতে থাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে নিশ্চুপ কারো নাম হয়।আপনি সত্যি করে বলুন কে আপনি কি নাম?আর আপনি ছেলে নাকি মেয়ে?ডায়েরীতে একটা নোটে নিশ্চুপের অনেক কিছুই লেখা ছিলো সেখানে উল্লেখ ছিলো সে ছেলে তবুও জিজ্ঞেস করে অধরা।ছেলেটা উত্তর দেয়,জি আপনি আমার নাম ডায়েরীতে নিশ্চুপ দেখেছেন তাই ওইটাই জানার সাথে এইটা জেনে রাখুন ওইটা আমার আসল নাম না।এরপর নিশ্চুপ অধরাকে বলে আপনার লেখা গল্পটির লাইনটা ভুল আছে ঠিক করে নিয়েন।এই বলেই ছেলেটার আইডিতে আর রিপ্লাই দিতে পাড়ে না অধরা।
.
অধরা যে অন্য কোন আইডি দিয়ে এসএমএস দিতে যাবে ব্লক করলো নাকি আইডি ডিএক্টিভ বুঝতে পারেনা অধরা কারণ তার আর আইডি নেই।পরের দিন সকালে অধরা ভেবে নেয় না সে সব জানিয়ে দিবে কে সে আর কি ভাবে গল্প লিখত,আর সেই অচেনা ছেলেটি কে যাকে খুঁজে পেয়েছে ডায়েরীর লেখার মাঝে।অধরা পরের দিন পোষ্ট দেয় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে অচেনা ছেলেটির সাথে।পোষ্ট দেওয়ার ঠিক ১০মিনিটের ভিতর নিশ্চুপ এসএমএস দেয় অধরাকে।বলে দেখুন আপনি পরিচয় করাতে চাইলেও আমি পরিচিত হব না।আর আপনি আপনার মত করে লিখে যান গল্প গুলি প্রকাশ করুন আমি আপনার পাশে আছে তবে দূর থেকে।তাই বলে কাউকে আমার পরিচয় দিয়েন না।আমি চাই আমার গল্পগুলি প্রকাশ পাক আপনার ভিতর থেকে সবার মাঝে।
.
অধরা বুঝতে পারে,কিন্তু চিন্তা করর পারে না যেই ছেলে এত সুন্দর গল্প লিখে সে নিজে কেনো লিখে প্রশংসিত হলো না।অধরা জিজ্ঞেস করে আপনি কেনো ফেসবুকে গল্প লিখেন না।আর ডায়েরিটাই বা কেনো বিক্রি করে দিলেন?নিশ্চুপ উত্তর দেয় আমার কম দামী ফোন এইটা দিয়ে গল্প লেখা যায় না তাই ডায়েরীতে লিখতাম।আর ডায়েরীটা বিক্রি করিনি আমি একদিন কলেজে ছিলাম তখন আম্মু পুরাতন বইয়ের সাথে এইটাও বিক্রি করে দেন,হয়ত ভাগ্যক্রমে আপনার মত একজনের কাছে গেছে যার জন্য আমার লেখা গল্পগুলি সবাই দেখছে না হয় আপনার নামেই।কথটা শুনে খারাপ লাগে অধরার।তার দুইটা ফোন ছিলো দিতে চায় একটা কিন্তু নেয় না নিশ্চুপ।বলে না আমি আপনাকে গল্পগুলি পড়ে ভুল হলে বলে দিবো আপনি শুধরে নিয়েন।
.
এমনি করে দিনের পর দিন নতুন নতুন গল্প দিতে থাকে অধরা,আর ভুল হলে নিশ্চুপ বলে দেয় এসএমএস এ।দুইজনের মাঝে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে।কিন্তু তবুও কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।দেখতে দেখতে ডায়েরীর শেষ গল্পটা লিখছে অধরা।আর চিন্তা করছে কালকে নিশ্চুপের সাথে কথা বলবে দেখা করতে চাইবে।গল্পটি লেখা শেষ।অপেক্ষা করছে কখন নিশ্চুপ অনলাইনে আসে।কিন্তু ওই রাতে আর তার দেখা পাওয়া যায় না।অধরার খুব খারাপ লাগে নিজের ভিতর খুব মিস করতে থাকে।তখন নিজের মনের মাঝে নিজেই বুঝতে পারে অধরা হয়ত ভালোবেসে ফেলেছে ডায়েরীর সেই অচেনা ছেলেটিকে।চিন্তা করে দেখা করে তার সাথে কথা বলবে।
.
পরের দিন নিশ্চুপ অনলাইনে আসলে প্রথমে ইচ্ছা মত ঝাড়ি দেয়,কিসের অধিকারে দেয় সে নিজেও জানে না তবুও কিছু শাসনে অধিকারের দরকার হয়না আপনা আপনি সৃষ্টি হয়ে যায়।অধরা দেখা করতে চায় কিন্তু নিশ্চুপ বলে না সে করবে না।বলে দেখা করতে গেলে তার সাথে আর কখনো কথা হবে না।অধরা কথাটিকে এত সিরিয়াস ভাবে না নিলেও সে জেদ করতে শুরু করে দেখা করবে।নিশ্চুপ খুব বাধ্য হয়ে একটা ঠিকানা দেয়।এর পরে অধরা দেখে আইডিতে এসএমএস যায় না হয়ত ডিএক্টিভ করেছে।লগ আউট দিয়ে ঠিকানা মত যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় অধরা।বেশি একটা দূরে না অনেকটা তাদের স্কুলের পাশেই।
.
অধরার হাতে ডায়েরীটা,খুঁজতে থাকে ওই ঠিকানা মত এসে কয়েকজন কে নিশ্চুপদের বাসার কথা জিজ্ঞেস করলেও কেউ চিনে না কারণ নিশ্চুপ তো আর কারো নাম হয়না।কিছু দূরে কয়েকজন ছেলেকে দেখতে পায় বসে আছে অধরা একটু সাহস করেই যায় তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে কেউ চিনে কিনা।কিন্তু সবাই না বললেও একটা ছেলে তাকিয়ে আছে তার হাতের ডায়েরীটার দিকে।যখন অধরা না শুনে চলে যেতে লাগে তখন সেই ছেলেটি ডাক দেয় বলে আপু আপনি এই ডায়েরী আপনি কই পেয়েছেন এই ডায়েরী তো আকাশের।অধরা চমকে যায় বলে না এইটা নিশ্চুপের।সবাই তখন বলে না আপু আকাশই নিশ্চুপ যা ওর ফেসবুক আইডি ছিলো।
.
ছেলেগুলির কাছে বলে আপনারা আমায় একটু ওর কাছে নিয়ে যাবেন।সবাই একে অন্যজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে একজন জিজ্ঞেস করলো আপু আপনি কিছু জানেন না।অধরা বলে কি জানবো নিশ্চুপ মানে আকাশই তো কালকে আমায় ওর বাসার ঠিকানা দিয়েছে দেখা করবো তাই।সবাই একটু ভয় পেয়ে যায় কি বলে মেয়েটা আকাশ কি ভাবে ঠিকানা দিবে।অধরাকে নিয়ে সবাই আকাশের বাড়িতে আসে।আকাশের মা কে অধরা সব বলে কিন্তু আকাশের মা ডায়েরীটা হাতে নিয়ে কান্না শুরু করে।আর বিলাপ করতে থাকে এই ডায়েরীটার জন্য আমার আকাশ আজকে ওই আকাশের তারা হয়ে গেছে।এই ডায়েরীটার জন্য আমার আকাশ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
.
অধরার কানে কথাটা যেতেই যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে,তখন বুঝতে পারে আকাশ আর এই পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার সাথে কে কথা বলল।জলদি ফোন বের করে আকাশের এসএমএস দেখতে যায় কিন্তু আকাশ মানে নিশ্চুপ নামের কারো এসএমএস তার ইন বক্সে নেই তবে এত দিনের কথা মনের মাঝে যার জন্য সৃষ্ট ভালোবাসা সব কই।কিছুই মিলাতে পাড়ছে না অধরা।সেই ছেলেগুলির মাঝে একজন বলে আপু আকাশ আজ থেকে আর এক বছর আগে মারা যায় রোড এক্সিডেন্ট এ।তার ডায়েরীটা যখন তার মা ভুলে বিক্রি করে দেন অনেক খুঁজে কিন্তু কোথাও আর পায়না।অথচ একদিন সেই ফেরিওয়ালা আসলে আকাশ তার কাছ থেকে জানতে পারে বই গুলি সব সে বিক্রি করে দেয় নীল ক্ষেতের পাইকারি একটা দোকানে।কিন্তু সেই দোকানেও খুঁজে পায়না।
.
এর পর অনেক দোকানে প্রতিদিন খুঁজতে যেত।এমনি করে একদিন আকাশ আমার বাইক নিয়ে ডায়রী খুঁজে বাড়িতে ফিরছিলো রাস্তার মাঝে বাইক এক্সিডেন্ট এ মারা যায় আকাশ।আর কখনো ফিরে আসেনি আমাদের মাঝে।খুব ভালো গল্প লিখতো আর বলত দেখিস একদিন নতুন ফোন কিনে গল্প গুলি একটি একটি করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবে কিন্তু ওর মনের আশা আর পূরণ হলো না।অধরা তখন চিৎকার করে বলে উঠে পূরণ হয়েছে আকাশ আমার জীবনে এসেছে নিশ্চুপ হয়ে আমার হাত দিয়ে লিখেছে ওর গল্প গুলি ছড়িয়ে দিয়েছে সবার মাঝে।শুধু আমায় ভালোবাসার মায়া জালে বেধে আমার জীবনটিকে নিশ্চুপ করে দিয়ে গেলো ডায়েরীর সেই অচেনা ছেলেটি।যে আর কোনদিন ও আমার চেনা হবে না।সেই পরীর মত মেয়েটির দু-চোখ বেয়ে এখন শুধু অশ্রু গড়িয়ে পড়ে শুধু সেই ডায়েরীর অচেনা ছেলেটিকে খুঁজে পেতে।
.
অধরা যখন কাঁদতে বাসায় চলে যেতে চায় তখন আকাশের বন্ধু সজিব বলে অধরা আমিই এত দিন তোমার সাথে নিশ্চুপ হয়ে কথা বলি কারণ আমি যেদিন তোমার গল্প পেজে পড়ি তখন বুঝতে পাড়ি আকাশের ডায়রী তোমার কাছে।কারণ আমি আরর আকাশ ছিলাম প্রানের চেয়ে প্রিয়,আমি ওর সব গল্প লেখার পরই পড়তাম।আমি চেয়েছিলাম আমার বন্ধুর শেষ ইচ্ছা পূরন করতে তোমার লেখনি দিয়ে,আমাকে ক্ষমা করে দিও অধরা। (সমাপ্ত)
.
.
লেখক: নিশ্চুপ জীবনের লুকোচুরি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন