হিমুর বাবার ডিজিটাল উপদেশ

বাজারবিমুখ

পুত্র হিমালয়, তোমার প্রতি আমার কঠিন নির্দেশ, কখনো বাজারমুখী হইবে না। বাজারে দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা তোমার মহাপুরুষ হইবার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করিবে। অতীতে মহাপুরুষেরা বাজারবিমুখ ছিলেন। তুমিও থাকিবে। মনে রাখিয়ো, পিঁয়াজ-মরিচের অস্থিতিশীল মূল্য লইয়া মাথা ঘামাইতে তোমার জন্ম হয় নাই।

লোকাল বাস

সর্বদা লোকাল বাসে ভ্রমণ করিবে। শহরের সিটিং বাসের চিটিংবাজির খপ্পরে কখনো পড়িয়ো না। লোকাল বাসে ঝুলন্ত যাত্রীদের স্বরূপ বুঝিবার চেষ্টা করো। ইহাতে সুখ পাইবে। পকেটমারের কাছ হইতেও যদি পারো কিছু শিখিয়া লইয়ো।

দায়িত্ববোধ

প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলিয়া দেওয়া হয়। যেই সব থাকে ভুলে ভরা। সেই সকল ভুল যে ভুল করিয়া হইয়া থাকে, তাহা ভাবিয়ো না। ইহা দায়িত্বের অবহেলায় হইয়া থাকে। হে পুত্র, মহাপুরুষ হইবার জন্য তোমাকে আমি যে সকল উপদেশ দিয়াছি, তাহা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিবে। তাহাদের মতো দায়িত্বে অবহেলা করিয়া ভুল করিবে না।

সাঁতারবিদ্যা প্রয়োগ

শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা—তিন ঋতুতেই তোমাকে জীবন ধারণ করিবার যে সকল পদ্ধতি শেখানো হইয়াছে তাহার একটা হইল সাঁতার। এই বিদ্যাটা তোমাকে শেখানো হইয়াছে অনেক দিক বিবেচনা করিয়া। তুমি জীবনের অনেক বড় একটা সময় ঢাকা শহরে কাটাইবে। মিনিটখানেকের বর্ষণে এই শহর নদীতে রূপান্তরিত হয়। ঢাকা নামক সেই নদীতে তোমার চলাচল অন্যদের মতো থামিয়া যেন না থাকে সে জন্যই তোমাকে সাঁতার শেখানো হইয়াছে। আশা করি তুমি এই বিদ্যা সম্মানের সহিত প্রয়োগ করিবে।

অবিচল

হে মানবসন্তান, উৎকণ্ঠা কিংবা বিচলিত হওয়া তোমাকে মানায় না। মহাপুরুষেরা কখনো কোনো বিষয় লইয়া উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন না। দেশে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস লইয়া অন্যদের মতো কখনো উৎকণ্ঠা প্রকাশ করিয়ো না। মনে রাখিয়ো, শুঁয়োপোকার সহিত এই সকল ফাঁসকারী এবং ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া পরীক্ষার্থীদের অনেকাংশে মিল আছে। শুঁয়োপোকা যেমন বিষ্ঠার গন্ধ পাইলে ছুটিয়া যায়, ইহারাও তেমনই ফাঁস করা প্রশ্নের গন্ধ পাইলে ছুটিয়া যায়।

মোটিভেশন

পুত্র হিমালয়, তোমাকে মহাপুরুষ বানাইবার জন্য যে সকল মোটিভেশন দরকার তাহার সবই শৈশবে দেওয়া হইয়াছে। ইহার পরও যদি কখনো মোটিভেশনের প্রয়োজন আছে বলিয়া মনে করো, তাহা হইলে আমার উপদেশগুলি একটা রেকর্ডারে রেকর্ড করিয়া বড় বড় দুইটা স্পিকারে বাজাইবে। আশা করি, তোমার মোটিভেশন এবং স্পিকারের অভাব পূরণ হইবে।

noname

ফেসবুক-বিষয়ক

আমি পূর্বেই বলিয়াছি, জীবনে অনেক মায়া তোমাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিবে। যাহার একটা হইল ফেসবুক। ফেসবুক নামক এই মায়া বড়ই ভয়ানক। ইহার জালে যাহারাই পড়িতেছে তাহারাই নিঃশেষ হইয়া যাইতেছে। তুমিও এই জালে আটকা পড়িবে, তবে তুমি ইহা হইতে বাহির হইতেও সক্ষম হইবে। এই শিক্ষা তোমাকে শৈশবে দেওয়া হইয়াছে। ফেসবুক লইয়া আমার কিছু উপদেশ নিম্নরূপ:

১. ফেসবুক চালাইয়া চালাইয়া রাত কাটাইবে না। মনে রাখিয়ো, মহাপুরুষেরা রাত কাটান প্রকৃতির অনুসন্ধান করিয়া, ফেসবুক চালাইয়া নয়।

২. ফেসবুকে অন্যদের মতো ঘন ঘন দার্শনিক স্ট্যাটাস প্রসব করিয়া নিজের স্বরূপ প্রকাশ করিবার মতো বালখিল্যতা করিবে না। মনে রাখিয়ো, স্ট্যাটাস নামক ব্যাধি লইয়া জীবন পার করিবার জন্য তুমি পৃথিবীতে আসো নাই।

৩. প্রিয় পোস্টগুলোতে নিয়মিত রাগের ইমো দিবে আর অপ্রিয় পোস্টগুলোতে দিবে লাইক এবং লাভ রিঅ্যাকশন। নিজেকে অপ্রকাশিত রাখিবার ইহাই উত্তম উপায়।

৪. কোনো ঘটনা ঘটিবার সঙ্গে সঙ্গে যত্রতত্র ইভেন্ট খুলিয়া মাতামাতি করিবে না। মনে রাখিয়ো, ইহা বিকৃত মস্তিষ্কের বহিঃপ্রকাশ। যদিও সকলে বলিবে, তবে আমি জানি তোমার মস্তিষ্ক বিকৃত নহে।

সিমবিহীন মোবাইল ফোন

পুত্র হিমালয়, মোবাইল ফোন ব্যবহার করিবার অনুমতি দিলাম কিন্তু ভুলেও ইহাতে ‘সিম’ নামক বস্তুটি ব্যবহার করিবে না। এই বস্তুটি মোবাইল ফোনে ঢুকাইবার সঙ্গে সঙ্গে ঘণ্টায় ঘণ্টায় মোবাইল ফোন কোম্পানির এসএমএস তোমাকে যন্ত্রণা করিয়া মারিবে। জগতের বড় প্রতিভাবানেরা এই যন্ত্রণায় আক্রান্ত হইয়া নিজেদের প্রতিভার বিসর্জন দিয়া গেছেন। পিতা হিসাবে তোমার নিকট আমার কঠিন নির্দেশ, ইহাদের লোভনীয় অফার দেখিয়া বিভ্রান্ত হইয়ো না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়