পারাপারের সংলাপ
মাঝে মাঝে মানুষ খুব ক্লান্ত হয়ে যায়
জাগতিক চাওয়ায়, পাওয়া-না পাওয়ায়।
মনে হয় হেরে গেলাম; শেষ হয়ে গেল ।
পেছনে ফিরে যাবো নাকি সামনে এগুবো,
এই নিয়ে দ্বিধায় পরে মর্ত্যের মানুষ
প্রতিনিয়ত । চলে তুমুল বিশ্লেষণ, কারো
হিসেব মিলে কারো মেলেনা । কেউ
বেপরোয়া হয়ে শেষ দেখার প্রত্যয় গ্রহণ
করে, কেউ বা ইস্তফা দেয়; আবার কেউ
খানিক বিরতি নিয়ে অনেক হিসেব কষে
ভুল-চুক বের করে একটা মাপা পদক্ষেপ নেয়
।
হয়ত নিজেরই সাথে কিনবা কোন
নির্ভরশীল বন্ধুর সাথে, হতাশায়
নিমজ্জিত কিনবা দ্বিধান্বিত কারো
ইথারে ভেসে বেড়ানো কিছু আলোচন
নয়তো একান্তই অবচেতন মনের নিজস্ব
বিশ্লেষণ থেকে নেয়া কিছু সংলাপ -
--: আচ্ছা মানুষ ছুটছে কেনো জানো ?
-: সে প্রশ্ন তো আমারো ..
--: একদিন থেমে যাবে বলে..
-: কবে ?
--: হয়ত আজ, নয়তো কাল , কিনবা পরশু;
অথবা চোখ বন্ধ করে সত্তর বছরের
একটা নিশ্চিন্ত জীবন পার করে ।
-: থেমেই যদি যাবে সব একদিন,,, তবে কেন
এই ছুটে চলা ?
--: বারে! গন্তব্যে পৌছতে হবে না ...
-: আর যারা আগে চলে যায় ...!
--: (নিরবতা)
-: কি জবাব দেবে এখন ?
--: ভুল কি শুধু মর্ত্যের মানুষই করে !
ওপারেও বুঝি হিসেবে ভুল হয়না !
-: কি বলছ ! নিয়তি কে উপহাস নাকি
পক্ষপাতিত্ব ?
--: জানিনা । তবে হয়ত সৃষ্টিকর্তা কখনো
লোভী হয়ে যান, তাই থেমে যায় কিছু
প্রিয় পদচারণা । হয়ত সৃষ্টিকর্তা কাউকে
ভুল পথ থেকে টেনে আনার অন্য উপায় না
পেয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা স্বরূপ সরাসরি নিজ
ঠিকানায় ডেকে পাঠান । হয়ত কাউকে
মর্ত্যে পাঠানোটাই সময়মত ছিলনা, আর
সেই ভুল বুঝতে পেরে তৎক্ষণাত কোন ছুতোয়
তার কাছে ফেরৎ নিয়ে আসেন ।
-: তবে নিজে থেকে থেমে যেতে চাইলে
তা পাপ কেন ? আমার গন্তব্যের শুরু আর
শেষের হিসেব কেন আমিই করি না !
--: তাহলে মানুষ বড় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে
যাবে যে! সভ্যতা সেই কোটি বছর আগেই
থেমে যেতো । এখন তুমি কেবল তোমার
জন্যই ছুটে চলো না কিন্তু, তোমার পাশে
হয়ত কোন কোমল হাত থাকে, কাঁধে
আশ্বাস বা আশীর্বাদের স্পর্শ, কখনো
গতি ধীর করে দাও হাঁটা শেখাতে কোন
ছোট্ট এক জোড়া পা কে ...
-: এত্তো জটিলতা কেন ? জীবনকে এমন
গণিতের ছকে বাঁধার কি কারণ !! ছোট
বেলায় শেখা সেই যোগ-বিয়োগ, প্রথম
বন্ধনী, দ্বিতীয় বন্ধনীর বাড়াবাড়ি এখনো
চারপাশে, প্রতিটা ঘটনার মাঝে, দিনের
শুরু থেকে শেষে...
--: পথ চলতে গিয়ে কত যে বাঁক থাকে !
নিয়তি চায় তুমি সেই বাঁকগুলো দেখে
দেখে , ছুঁয়ে ছুঁয়ে, পার হয়ে গন্তব্যে এসে
থেমে যাও, বসে পড়, কড়া নাড়ো; গর্বিত
কন্ঠে বলে ওঠো - আমার ওপর অর্পিত
দ্বায়িত্ব আমি পালন করেছি । হয়ত কিছুটা
অহমিকাও ছলকে উঠতে পারে তোমার
মাঝে, তবে এই একবার বোধহয় সৃষ্টিকর্তা
তোমার অহমিকাকে ছাড় দেবেন,
ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ।
-: সবচেয়ে অবাক করে কি জানো ?
--: জানি । যখন সত্যি সত্যিই থেমে যাবার
সময় আসছে বুঝতে পারি , তখন কেন জানি
হৃদয় মোচড়ানো অনুভূতি হয়! পেছনের সেই
পথ ডাকে আবার, কোথাও না কোথাও একটা
খুঁত বের করে সেটাকে সংশোধনের উছিলায়
মানুষ আরেকটু নয়তো আরো কিছুদিন ছুটতে
চায়। অথচ গন্তব্যের দরজায় টোকা পড়ে
গেছে ততক্ষণে ...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন