হুমায়ূনের স্বরনে হিমু

মাজেদা খালারা বাসা চেঞ্জ
করেছেন। নতুন বাসার ঠিকানা খালা
আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে
দিয়েছেন। খালার কড়া নির্দেশ
এখনি যেতে হবে। এই নির্দেশ তিনি
মোবাইল ফোন নামক আজব যন্ত্রের
সাহায্যে জানিয়েছেন। হিমুরা এই
যন্ত্র ব্যবহার করে না। আমার ব্যবহার
করার কারণ খালু সাহেবের কড়া
নির্দেশ, ‘ হিমু তোমার জন্য একটা
মোবাইল কেনা হয়েছে। এখন থেকে
এটা তোমার সাথে সাথে রাখতে
হবে। তুমি যেখানে যাবে মোবাইল
সাথে নিয়ে যাবে।‘
.
-খালু সাহেব গোসল করার সময় কি
করব?
-সবসময় উলটাপালটা কথা বলবে না
হিমু। যাওয়ার সময় তোমার খালার
কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে
যাবে। এখন সামন থেকে বিদেয় হও।
আউট!
-জো হুকুম!
.
আমি খালুজানের সামনে থেকে
আউট হলাম। খালার কাছ থেকে
মোবাইল নিলাম। খালা
গম্ভীরভাবে বললেন, ‘তোকে যেন
রাত দুইটার সময় ফোন দিলেও পাওয়া
যায়। ফোন রিসিভ করে বলবি খালা
ফোন আমার সাথেই আছে।
বুঝেছিস? .
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। মাথা
একটু বেশি জোরে নাড়লাম। এর অর্থ
হচ্ছে ব্যাপারটা আমি অতিরিক্ত
গুরুত্বের সহিত নিয়েছি। তিনবেলা
ভাত খাওয়ার মতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। .
তখন থেকে এই বস্তু আমার সাথে
ঘোরাঘুরি করছে। খুবই আশ্চর্যজনক
বস্তু। ফোন আসলেই চিল্লাপাল্লা
করে। এটাকে বলা হয় রিংটোন।
মোবাইলে শুধুমাত্র একটা নাম্বার
সেইভ করা আছে। মাজেদা খালার
নাম্বার। মাজেদা খালা নিজে তার
নাম্বার সেইভ করেছেন। ‘Majeda kala’
নামে। মাজেদা কালা। মাজেদা
কালা থেকে ফোন আসছে।
.
-হিমু তুই কই?
-ফোনের এপাশে
-সবসময় ফাজলামি করবি না হিমু। তুই
কই সেটা বল। তোর আসতে কতক্ষণ
লাগবে? আমি মহা সমস্যায় পড়েছি। -
কি সমস্যা
-নতুন বাসায় ওঠার অনেক সমস্যা। এটা
পাচ্ছি না ওটা পাচ্ছি না। তুই
তাড়াতাড়ি আয়।
-জ্বি খালা এখনি যাচ্ছি। ওভার এন্ড
আউট।
.
খালা যে বাসায় উঠেছেন সেই
বাসার নাম ‘নিরিবিলি’।
নিরিবিলি বাসার সামনে দাঁড়িয়ে
বাসাটাকে কোনভাবেই নিরিবিলি
মনে হল না। বাসার পাশেই নতুন বাসা
হচ্ছে। কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে।
সেখানে সারাদিন খুটখাট আওয়াজ
হয়।
.
কলিংবেল চাপতেই হুরপরী টাইপ
একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল। আমি
কিছুক্ষন হা করে হুরপরীর দিকে
তাকিয়ে রইলাম।
.
-আপনি কে?
-আমি হিমু
-হিমুটা আবার কে?
-পুরো নাম হিমালয়। বাবার দেয়া
নাম। সবাই হিমু বলে ডাকে। বলেই
পকেট থেকে সার্টিফিকেটটা বের
করে এগিয়ে দিলাম।
-কি আশ্চর্য! আপনি আমাকে এতসব
কিছু বলছেন কেন? আর সার্টিফিকেট
দিচ্ছেন কেন? আপনি কি পকেটে
সার্টিফিকেট নিয়ে ঘোরাফেরা
করেন নাকি?
-আগে করতাম না। এখন করতে হয়। কেউ
সহজে আমার নাম বিশ্বাস করতে চায়
নাতো।
-আমি এতসব কিছু জানতে চাচ্ছি না।
কার কাছে এসেছেন সেটা বলুন। এত
উলটাপালটা জবাব দেবেন না। -
আপনার কাছে এসেছি
-আমি কি আপনাকে চিনি?
-না! এইজন্যই পরিচিত হতে এসেছি।
আপনার নাম বলুন। সার্টিফিকেট
লাগবে না। আপনার নাম পাহাড়
পর্বত হলেও আমি বিশ্বাস করব। -
ইডিয়ট! এরা বাসায় ঢোকে কি করে।
দারোয়ান চাচা যে কি করে!
.
চেঁচামেচি শুনে ভেতর থেকে খালা
বলে উঠলেন, ‘কে এসেছে নিলু? ও
হিমু! তোর আসতে এতক্ষণ লাগল কেন?
হেঁটে হেঁটে আসলি নাকি? আয়
ভিতরে আয়।’
.
নিলু নামের মেয়েটি দরজা সরে
দাঁড়াল। সে হতভম্ব দৃষ্টিতে আমার
দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে এখুনি
সার্টিফিকেট সহিত আমাকে খেয়ে
ফেলে। আমি মুচকি হাসি দিলাম। এই
হাসির অর্থ ভিন্ন।
.
মাজেদা খালা বললেন, ‘ও হচ্ছে
নিলু! পাশের বাসায় থাকে। এখানে
এসেই পরিচয়। ভারী মিষ্টি মেয়ে।
কিরে হিমু পরিচিত হ! হা করে
দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
.
আমি নিলুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আমি হিমু। পুরো নাম হিমালয়।‘
বলেই আবার সার্টিফিকেটটা
এগিয়ে দিলাম। নিলু খুব বিরক্ত
নিয়ে আমার দিকে তাকাল।
মাজেদা খালা ততক্ষণে ভেতরের
রুমে চলে গেছেন।
.
নিলু খুব বিরক্ত নিয়ে বলল, ‘আপনি
করেনটা কি? গাল ভর্তি দাঁড়ি নিয়ে
এইসব ভন্ডামী?‘
-একদম ঠিক ধরেছেন। গালভর্তি দাঁড়ি
থাকলে ভণ্ডামী করতে সুবিধা হয়।
আবার রেগে গিয়ে কেউ চড় মারলেও
গালে তেমন লাগে না। দাঁড়ির উপর
দিয়ে যায়।
নিলু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। আমি সোফায়
হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম।
নিলু আমার দিকে বিশ টাকার একটা
নোট এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘শুনুন
আজকেই এই টাকাটা দিয়ে দাঁড়ি
সেভ করবেন। আপনাকে যেন
দাঁড়িসহিত আর না দেখি।‘
আমি টাকাটা নিয়ে বললাম, ‘জ্বি
অবশ্যই ম্যাডাম।‘
-আপনাকে যে অপমান করলাম সেটাও
তো বুঝলেন না। ইডিয়ট!
-আমার অপমানবোধ খুব কম। বোয়াল
মাছের কাছাকাছি!
.
মাজেদা খালা বিশাল একটা
লিস্টি আর কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে
দিয়ে বললেন, ‘হিমু তুই এখনি নিউ
মার্কেট যাবি। এইসব জিনিসপত্র
কিনে আনবি। এখনি যাবি এখনি
আসবি!’
আমি জো হুকুম বলে রওনা দিলাম।
পিছন ফিরে নিলু মেয়েটাকে একবার
দেখার ইচ্ছা ছিল। মেয়েটার রক্তবর্ণ
মুখ চেঞ্জ হয়েছে কিনা দেখা
দরকার। আমি হনহন করে বাসা থেকে
বের হয়ে গেলাম।
.
অনেকদিন যাবত ভাবছিলাম গাজীপুর
যাব। নুহাশ পল্লী থেকে ঘুরে আসব।
পকেটে তেমন টাকা ছিল না জন্য
যাওয়া হয়নি। আমি একজন হন্টক। তাই
বলে এতদূর হেঁটে হেঁটে যাওয়া সম্ভব
নয়। পাঞ্জাবীর পকেটে খালার
দেওয়া দুটো এক হাজার টাকার নোট
আর নিলুর দেওয়া একটা বিশ টাকার
নোট।
.
হুমায়ূন আহমেদের সমাধির সামনে
দাঁড়িয়ে আছে হিমু। নগ্ন পা। সমধির
দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। -
কি ব্যাপার? ভিতরে কেমন লাগছে?
-বেশি গরম। তবে মশা নাই। -আপনি
তো চলে গেলেন আমাকে একা
রেখে
-একা কই! আমি চলে গেছি। তবে তুমি
বেঁচে থাকবে। সেই ব্যবস্থা তো
করেই এসেছি। এখন বিরক্ত কর না।
ঘুমাবো যাও
-জ্বি আচ্ছা
.
হিমু চোখ মুছে নিল। হিমুদের কাঁদতে
নেই। তবুও আজ চোখে পানি আসছে।
ভেজা ভেজা চোখে হিমু এপিটাফের
দিকে তাকিয়ে আছে,
‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে,
নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।‘

লেখা: ২০১৬-০৭-১৯

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়