ধর্ষিত পুরুষ

ধর্ষিত পুরুষ
পূরুষের কি আবেগ নেই? কিংবা নারী কি
শরীরের আনন্দ উপভোগ করে না? তাহলে সব
দোষ পুরুষদের উপর এসে পড়ে কেন? ফেসবুকে
দুজন আপু এই বিষয়ে খুব সুন্দর দুটি সাহসী উত্তর
দিয়েছেন। আপনাদের জন্য এখানে
তা তুলে দিলাম। তবে তাদের ব্যক্তিগত
পরিচয়টুকু প্রকাশ করলাম না।
.
১ম জন.,
“পৃথিবীর বেশিরভাগ মেয়ের ধারণা
ছেলেরা শুধু শরীর খোঁজে, শরীরের আনন্দ
খোঁজে। পুরুষের সব আবেগ শরীর থেকে শুরু
হয়ে শরীরেই শেষ হয়ে যায়। দিন শেষে
গড়ে সব পুরুষের গায়ে “শরীর সর্বস্ব” লেবেল
এঁটে যায়।
কিন্তু আসলে কি পুরুষ শুধু শরীর খোঁজে?
কিংবা নারী কি শরীরের আনন্দ উপভোগ
করে না? পৃথিবীতে এক শ্রেণীর মানুষই
আছে এমন যারা কেবল শরীর, টাকা আর
জাগতিক বস্তু চেনে। তাঁদের মাঝে পুরুষ
যেমন আছে, নারীও আছে। এদের সাথে
সবাইকে মিলিয়ে ফেললে হবে না। এরা
তো মানুষ না…
কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় একজন
পুরুষকে আপন করে নেয়া আসলে খুব সোজা।
আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকে
নিজের আবেগ গোপন করতেই শেখানো হয়
পুরুষদেরকে। অনুভব গুলো চেপে রাখতে
রাখতে তারা যেন কেমন কেমন হয়ে যায়।
অথচ আমি নিজেই দেখেছি… সহস্র চুমুর
চাইতেও পুরুষেরা বেশি গুরুত্ব দেয় কেউ আদর
করে পাশে বসিয়ে খাওয়াক, এটা ওটা
পাতে তুলে দিক। অতি সুন্দরী এক নারীর
সাথে রাত্রি যাপনের চাইতেও সেই
মেয়েটি তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, দিনশেষে
যার কোলে মাথা রাখা যায়। অতি সাহসী
পুরুষেরাও চায় খুব কষ্টের দিনগুলোতে কেউ
একজন পরম মমতায় বুকে টেনে নিক, মাথায়
হাত বুলিয়ে দিক। আদর করে বলুক- সব ঠিক হয়ে
যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে…
একজন নারী যেভাবে তাঁর পুরুষটিকে সমস্ত
শক্তির উৎস হিসাবে চায়, একজন পুরুষও কিন্তু
তাই। সেও চায় একান্ত নারীটি তাঁকে বুঝুক,
জানুক, তাঁকে অনুপ্রেরণা দিতে পারুক। …
অন্যদের কথা জানি না, কিন্তু আমি নিজের
জীবনে এমন পুরুষদেরকেই দেখেছি। বাবা,
ভাই, বন্ধু, প্রেমিক… আরও না জানি কত রূপে।
দেখেছি তারা ভালোবাসার বড় কাঙাল।
একটু ভালোবাসা, একটু মমতা, একটু আদর দিয়ে
তাঁদেরকে কিনে নেয়া যায়… আজীবনের
জন্য!
অদ্ভুত বিষয়টা হচ্ছে, যে যাই বলুক না কেন,
যতই লিঙ্গগত ঝগড়াঝাটি থাকুক না কেন,
আমার কখনও মনে হয় না নারী-পুরুষ পরস্পরের শত্রু।
তারা পরস্পরের পরিপূরক, একে অন্যকে ছাড়া
অপূর্ণ। কখনও পুরুষ এই সত্য অস্বীকার করে, কখনও
নারী।
অথচ তারা পরস্পরের পরিপূরক… অথচ তারা
পরস্পরকে ছাড়া অপূর্ণ… খাপে খাপে
মেলানো প্রকৃতির অদ্ভুত সুন্দর সৃষ্টি মানব ও
মানবী।”
২য় জন,
"মেয়েরা পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত (Raped) হয়।
আমাদের শারীরিক কমজোরিতা আর শক্তি বুদ্ধির অভাবে আমরা ধর্ষিত হই।
দেহের জোড়ে খুব জড়াজড়ি করে একটি মেয়ের সতীত্ব নষ্ট করে পুরুষ জাতি পৈচাশিক আনন্দ পায়।
আচ্ছা পুরুষরা কখনো ধর্ষিত (Reped) হয়?
আমরা মেয়েরা শারীরিক শক্তিতে হয়তো কখনওই একজন ছেলেকে ধর্ষণ করতে পারব না।
কিন্তু একটি ছেলে তবুও ধর্ষিত হচ্ছে নিরবে।
আমি যখন পাঁচ বছর সম্পর্কের পর বলি,
"তোমার ঢাকায় বাড়ি নাই, গাড়ি নাই। আমার পরিবার আরো ভাল ছেলে চায়"।
তখন আমার প্রিয়তম চিৎকারহীন ভাবে ধর্ষিত হয়।
হাজার অনুভূতি আর কল্পনা দিয়ে সাজানো স্বপ্নগুলো সে দেখায়
আমি তখন চিন্তা করি বাস্তবতা,
সে তখন ধর্ষিত হয়।
কয়েক বছরের পুরনো প্রেমিক রেখে আমি যখন রাতভর গাড়ি বাড়ি ওয়ালা (ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার,আমেরিকা, ইউরোপ প্রবাসী) এক ছেলের সাথে মুঠোফোনালাপে মগ্ন,
ঐপাশ থেকে বারবার শুনা "আপনার কলটি এখন ওয়েটিং এ আছে কিংবা ব্যস্ত আছে" ছেলেটি নিরবেই ধর্ষিত হয়।
আমি যখন তার চাওয়াগুলোকে মূল্য না দিয়ে,
তার ভাবনা গুলোকে সম্মান না দেখিয়ে,
নিজের বানানো নিয়ম আর আব্দার গুলোকে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেই,
তখন সে কোন প্রতিবাদ না করে চুপচাপ মেনে নিয়ে
ইচ্ছে করেই ধর্ষিত হয়।
ছেলেরা হাউমাউ করে কাঁদতে জানে না।
তারা নিকোটিন পুড়াতে পারে,
তারা নিরবে বালিশ ভিজাতেও পারে,
তারা দু:খ আড়াল করে মুচকি হাসি দিয়ে বলতে পারে "ভাল আছি, তুমিও ভাল থেকো"।
ছেলেরা জোড় করে মেয়েদের দেহ ভোগ করতে পারে,
ছেলেরা খারাপ হতে পারে,
ছেলেরা নেশাখোর ও হতে পারে।
আবার এই ছেলেরাই ধর্ষিত ও হতে পারে।
আমরা মেয়েরা শারীরিক ভাবে ছেলেদের ধর্ষণ না করতে পারলেও,
অযথাই ধর্ষণ করে যাই তাদের লালন করা স্বপ্নগুলোকে,
তাদের অনুভূতি গুলোকে,
তাদের মানসিক চিন্তা গুলোকে,
তাদের ইচ্ছে গুলোকে
ধর্ষণ করে যাই অবিরত!
আমি মেয়ে,
আমিও ধর্ষক,
নিরব আর অপ্রকাশিত ধর্ষণকারী"...
- তন্ময় আলমগির

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়