স্বদেশপ্রেম
স্বদেশপ্রেম
.................
১৯৭১ এর মাঝামাঝি। জুন মাস। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছ। আমি ক্যালেন্ডারে ৫ টা দাগ কাঁটলাম। আজ ২৫ টা হানাদার নিশানায় গেঁথেছি। সহযোদ্ধা মতিন মিঞা মারা গেলো। বুকে গুলি লেগেছিলো।লাশটা হ্যাচকা টান দিয়ে পাশে সরিয়ে নিজেই স্টেনগানের দায়িত্ব নিলাম। পাগলের মতো গুলি ছুঁড়ছিলাম। কানের পাশ দিয়ে কয়টা গুলি গেছে গোনা হয়নি। হয়তো আরও কয়েকটা জানোয়ার মারার জন্য বেঁচে আছি।
খেয়ে এসে ডায়রিটা খুলে বসলাম। এখন আর লেখিনা। পুরানো লেখাগুলা পড়ি। কতজন দাফন করেছি তার একটা হিসাব লেখা আছে একটা পৃষ্ঠায়। আজ নিয়ে ২৮ জন হলো। হয়তো একসময় এখানে আমার নামটাও যুক্ত হবে। অনেকদিন পর মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। মাছ পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকেই আনা।
আমাদের জিনিস ওরা খাবে কেন!
তাই নিয়ে এলাম। সবাই একটু ভালোমন্দ খাক। গুলি শেষ না হলে আজ একটাকেও পালাতে দিতাম না। বৃষ্টি হওয়াতে আমাদের সুবিধা একটু বেশিই। কুত্তাগুলাকে সহজে বেগতিক অবস্থায় ফেলা যায়।
:রাজিব?
আমি উঠেই বললাম,"ইয়েস স্যার।"
:নোয়াখালির মাঈজদি এলাকার প্রাইমারি স্কুলটায় ১৭ জন পাকিস্তানে সৈন্য আছে। ওদের কাছে স্টেনগান,এলএমজি,পাইন আপেল(হ্যান্ড গ্রেনেড) আছে। গোপন সূত্রে জানলাম কাল সকাল নাগাদ আরও রসদ আসবে। রসদ আসার আগেই ওদের ঘায়েল করতে হবে। তুমি ২ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে আগাও। প্রদীপ তোমার সাথে ৩ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে যোগ দেবে। আমি সময় মতো তোমাদের সাথে যোগদান করবো। আমি আসার আগে জরুরী না হলে ফায়ারিং অর্ডার দিবেনা। এক্ষুনি প্রস্তুত হয়ে তোমার পছন্দানুযায়ী সৈন্য নিয়ে রওনা হও। আমি কমান্ডার মিরাজকে "ইয়েস স্যার" বলে ডায়রিতে লিখলাম,"আসি। এদেশ আমাদের ছিলো,আছে,থাকবে। জয় বাংলা"।
বিকাল ৪ টা নাগাদ রওনা হলাম। রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবেনা। ম্যাপ দেখে রাস্তা বানালাম। একটা খাল আর ৪ টা বিল সাঁতরে যেতে হবে। হিন্দু পাড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। নাহলে রক্ষা হবেনা শেষ পর্যন্ত।
[রাত ৮ টা]
ঝুম বৃষ্টি চলছে। কমান্ডার এখনও আসেনি। আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজতেছি। নিশ্চিত জ্বর আসবে।
[রাত ৯:৩০]
দিলীপ আসলো রেকি করে। খবর হলো,বৃষ্টির কারনে কাল রসদ আসবেনা। চারিদিকে জল জমে গেছে। এখন আক্রমন করলে আশেপাশের ক্যাম্প সতর্ক হয়ে যাবে। বাকিরা সবাই মুক্তি ক্যাম্পে ফিরেছে। আমাদেরও ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি চিন্তা করলাম,এমন সুযোগ আর আসবেনা। চুপচাপ সবগুলাকে মারা যাবে। তেমন পরিশ্রম হবেনা। তাই সবাইকে ব্যাক করার নির্দেশ দিয়ে আমি আর মোহসেন থেকে গেলাম আর বললাম,"কমান্ডারকে বইলো কাল খুব ভোরে যেন আমাদের লাশ নিয়ে যায়। বেশিক্ষন এই জানোয়ারদের সাথে থাকতে পারবোনা। সবাই ব্যাক করলো ক্যাম্পে। আমি আর মোহসেন দুটা এলএমজি হাতে নিয়ে রেকি করে আগাচ্ছিলাম। ক্যাম্পের মুখে গিয়ে দুজন ইশারায় দুদিকে আগালাম। টার্গেট হলো,গুলি করতে করতে একসাথে মিলিত হওয়া। যাতে কোনদিক দিয়ে পালাতে না পারে।
ঝুম বৃষ্টি। শুধুই বৃষ্টির আওয়াজ। তাড়াতাড়িই আগাতে পারছিলাম। ওপাশ থেকে কে যেনো আসছে। আমি আমগাছটার পিছনে লুকিয়ে নিশানা তাক করলাম। কথা ছিলো,আগে যে পিছনের দিকটায় পৌছাবে সে অপেক্ষা করবে অপরজনের। নিশানা তাক করে বসে আছি। কেউ একজন রেকি করে আগাচ্ছে। বুঝলাম মোহসেন। আমি কাছে গেলাম। এবার পালা ক্যাম্পের ভিতরে ঢোকার। দুজন আগে-পিছনে আগাচ্ছিলাম। ক্যাম্পে ঢুকে যা দেখলাম তাতে অবাক। এক কোনায় এক টুপিওয়ালা বন্দুক হাতে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শালারে চিরতরে ঘুমাতে দেয়ার উদ্দেশ্যে মুখটা চেপে ধরে শ্বাসনালিতে একটা পোঁচ দিলাম কোমরে রাখা চাকুটা দিয়ে। টের পাওয়ার আগেই নরকে চলে গেলো কুত্তাটা। পুরা ক্যাম্প খুজে একটা মশাও পেলামনা। সবগুলা ভাগছে। হয়তো টের পাইছে কোনভাবে আক্রমন হবে। বৃষ্টি বলে সুবিধা করতে পারবেনা। তাই চম্পট দিছে। টর্চার শেলটা খুললাম। ভিতরে দুইটা লাশ আর ৩ জন ঝুলে আছে উল্টা হয়ে। মুখের কাছে মাথা নিয়ে বুঝলাম ২ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে আর একজনের শ্বাস চলছে। তড়িঘড়ি করে নামালাম। পানি খাওয়ালাম। মোহসেনকে ওর পাশে রেখে আমি কোদাল নিয়ে বাইরে এসে একটা বড় মতো গর্ত খুড়লাম। লাশগুলা মাটি চাপা দিতে হবে। এভাবে শহীদদের লাশ পড়ে থাকবে মানা যায়না। লাশ মাটি চাপা দিয়ে ছেলেটাকে কাঁধে নিলাম। কতক্ষন আমি নেবো কতক্ষন মোহসেন। অপরজন পাহারা দিবে এলএমজি নিয়ে। পিছনের দরজা দিয়ে বের হলাম। হঠাৎ খুট করে শব্দ হলো। দাড়িয়ে গেলাম দুজনই।ছেলেটাকে কাদায় রেখে আমরা শুয়ে পড়লাম। বাংকার থেকে শব্দটা আসছে। রেকি করে আগাচ্ছি-পিছাচ্ছি দুজন দুমুখো হয়ে। বাংকারের আগে একটা আমগাছ। আমি মোহসেনকে ইশারায় বললাম,"তুমি গিয়ে আমগাছের পিছনে লুকাও। আমি ঘায়েল হলে সোজা খুলি উড়িয়ে দেবে। আমি গুলি না করা পর্যন্ত গুলি করবেনা।"
মোহসেন তাই করলো। আমি রেকি করে বাংকারের কাছে গিয়ে নিশানা তাক করে উঠবো,ভিতরে থেকে কেউ একজন চিৎকার করে উঠলো,"আরে মারিলা,মারিলা।(আমাকে মেরে ফেল,মেরে ফেল)"
আমি মহিলাকে বললাম,"আমরা মুক্তি। ভয় পাবেননা।" ইতোমধ্যে মোহসেন চলে আসছে। মহিলাকে নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকলাম। পানি খেতে দিলাম। শান্ত হলেন একটু।
পরনে একটা ছেঁড়া পেটিকোট। উপরে কিছুই নাই। গায়ে থাকা গেঞ্জিটা খুলে দিলাম। উনি পরলেন। মহিলা বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। আমার নিজেরও কান্না এসে গেলো। কিন্তু যোদ্ধা কাঁদতে পারেনা ভেবে নিজেকে সামলে নিলাম।
মহিলা:আন্নেরা আরে মারিয়ালান।(আপনারা আমাকে মেরে ফেলুন)
হেতেরা আরে মারিলাইছে আগেই। এহন আন্নেরা আরে ঘুমাইতে দেন।(ওরা আমাকে আগেই মেরে ফেলছে। আপনারা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিন)
আমি কি বলে সান্ত্বনা দেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। শুধু বললাম,"আপনাকে কে এনে দিয়েছে এখানে?"
মহিলা:আংগো চেয়ারম্যান সাব। আরে কইছিলো আর জামাই এনে। আই গেলে ছাড়ি দিবো। আরে এন্ডে আনি হেতেগো আতে তুলি দিছে।(আমাদের চেয়ারম্যান। আমাকে বলছিলো,আমার স্বামী এখানে আছে। আমি গেলে ছেড়ে দেবে। আমাকে এনে ওদের হাতে তুলে দিয়েছে।)
আমি বললাম,"চেয়ারম্যানের বাড়ি চেনেন?"
মহিলা জবাবে মাথা নাড়লেন।
শরীরের প্রতি বিন্দু রক্ত সংগ্রাম শুরু করলো। চেয়ারম্যানের খুলি উড়াতে না পারলে মরেও শান্তি পাবোনা। দরজার ওপাশে শব্দ হলো। দ্রুত লুকিয়ে পড়লাম নিশানা তাক করে।
পরিচিত মুখ। আমি বের হয়ে ধমক দিয়ে বললাম,"ব্যাক করতে বলছিলাম না তোমাদের?
করোনি কেন?"
জালাল:করেছিলাম। মাঝপথে মনে হলো,ঠিক হয়নি। মরতে নেমেছি স্টেনগান হাতে। না মেরে চলে যাবো কেন?
তাই ফিরে এলাম।
আমি:ইমিডিয়েট কমান্ডারের আদেশ অমান্য করেছো। এর শাস্তি কি হতে পারে জানো?
জালাল:ইয়েস স্যার।
আমি:আর কেউ এসেছে নাকি শুধু তুমি?
জালাল:বাকিরা সবাই পজিশনে আছে। আমি ভিতরে ঢুকছি। ২ মিনিটে বের না হলে এ্যাটাক হবে তিন দিক দিয়ে। একদিক খোলা। বের হলেই খুলি উড়ে যাবে।
আমি:নিট জব। যাও সবাইকে ডাকো। ইমিডিয়েট অপারেশন হবে। কমান্ডারকে জানানোর সময় নাই।
সবাই আসলো। মোট ২০ জন। আমি দশ জন করে দুটা দল বানালাম। ১০ জনকে বললাম,"ছেলেটাকে নিয়ে ক্যাম্পে গিয়ে ওর চিকিৎসা করতে।" ওরা ছেলেটাকে নিয়ে চলে গেলো।
[রাত ৩ টা ৫মিনিট]
ভোর ছয়টার মধ্যে অপারেশন শেষ করে ক্যাম্পে ফিরতে হবে। যা বৃষ্টি হইছে তাতে ৫-৬ দিনে পাকিস্তানিরা ফিরছেনা। দুজনকে দায়িত্ব দিলাম ক্যাম্পের সকল রসদ,ম্যাপ,গুরুত্বপূর্ন নথি নিয়ে নিতে। আমার কোমরে সবসময় একটা পেন্সিল থাকে। বের করে কাঠের উপর ম্যাপ বানিয়ে ফেললাম চেয়ারম্যানের বাড়ির। মহিলাই সাহায্য করলো আমাদের। আমরা যে যার পজিশন বুঝে নিলাম।
বাড়ির পিছনে তিনজন পজিশনে থাকবে। আমি আর প্রদীপ সামনে থেকে এ্যাটাক করবো পজিশনে থেকে। বাকি ৩ জন কভার করবে।চেয়ারম্যান যদি পালানোর চেষ্টা করে তবে তাকে ধরতে হবে। গুলি করা যাবেনা। বেগতিক অবস্থা হলে পায়ে গুলি করতে হবে। যেনো না মরে শালা। বাকি ২ জন আসলে রসদসহ মহিলাকে ক্যাম্পে পাঠালাম ওদের দায়িত্বে। আমরা এগোলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির দিকে। বাড়ির সামনে গিয়ে যে যার পজিশন নিলাম। পরিকল্পনা চেঞ্জ। আমি আর প্রদীপ ফায়ার করতে করতে এগোবো আর ওরা তিনজন পিছনে থেকে কভার ফায়ারিং করবে। পরিকল্পনা মতো আগাচ্ছি আর গুলি করছি। শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। দুইটা রাজাকার পড়ে আছে। বৃষ্টি হলেও আকাশে চাঁদ আছে। রাজাকারের রক্তে বাংলার মাটি,জল লাল হচ্ছে দেখে মেজাজটা আরও বিগড়ে গেলো। এগুলার শরীরে রক্ত থাকার দরকারই ছিলোনা।
বাড়ির দরজায় ঢুকতে যাবো তখন এক বৃদ্ধ বেরিয়ে এসে বললো,"কন হো?"
আমি বললাম,"তোর বাপ শালা পাকিস্তানের চামচা।
উর্দু বলতে শিখছো?
আমরা মুক্তি।"
বুড়ো আমাকে লাঠি দিয়ে দুটা বারি দিলেন। গুলি খরচ করলাম না। হুদাই গুলি নষ্ট করে কীট মারার দরকার নাই। নাক বরাবর একটা ঘুষি দিলাম আর বললাম,"যা শালা বহুতদিন পৃথিবীতে ছিলি। এখন জাহান্নামে যা।"
বুড়ো সম্ভবত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। নড়ছে-চড়ছে না। আমি প্রদীপকে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম আর ওদের বললাম পজিশনে থাকতে। না বেরোলে ফায়ার করবে। পুরা ঘর খুজেও চেয়ারম্যানকে পেলাম না। পেলাম উনার স্ত্রী আর মেয়েদের। ভয়ে বিছানার কোনায় চুপসে আছে। ইচ্ছা করছিলো এদেরও মেরে দেই। স্বামী/বাবাকে জঘন্য কাজ করা থেকে আটকাতে পারেনি। পরে ভাবলাম,এরা এমনিতেই এদেশে অবলা বলে গন্য হয়। এদের কথা কেউ শোনেনা। মনটা বেশ খারাপই হলো।বের হবো ঠিক তখন প্রদীপ ইশারা করলো মাঝের ঘরের খাটের নিচে। শালা হারামজাদা পাছা আমাদের দিকে দিয়ে লুকিয়ে আছে। আমি নিচু হয়ে এলএমজি দিয়ে দিলাম এক বারি পাছায়। তারপর ঠ্যাং ধরে টেনে-হেঁচড়ে বের করলাম। বের করে বাইরে এনে উঠানের কাঁঠাল গাছটায় বাঁধলাম। বাকি সবাই ততক্ষনে চলে এসেছে। এবার ভালো করে চেহারা দেখলাম। চেহারায় ভদ্রলোকের ছাপ,চাপ দাড়ি। সুন্দর চেহারা অথচ কাজগুলা কি নীচ পর্যায়ের!
ভাবতেই অবাক লাগে এমন একজন মানুষ এসব জঘন্য কাজ করতে পারে। আমি গুলি তাক করে ট্রিগারে আঙ্গুল রাখলাম। চেয়ারম্যান চোখ বুজে জিকির করছেন। আমি রাইফেলটা নামিয়ে মারলাম একটা চড়।
আমি:শালা হারামজাদা একজন মহিলাকে ওই জানোয়ারগুলার কাছে তুলে দেয়ার সময় একবারও আল্লাহর নাম মনে পড়েনি?
এরকম কতগুলা মেয়েকে তুলে দিছিস কে জানে!
এখন মৃত্যু সামনে বলে আল্লাহর নাম মনে আসছে?
আর একবার আল্লাহর নাম নিলে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে টর্চার করবো। চুপচাপ থাক। মরে যা।
মুসল্লি চুপ হয়ে গেলো। আমি রাইফেলটা তাক করে ট্রিগার চাপবো তখন কেউ একজন পিছন থেকে ডাক দিলো। আমি পিছনে ফিরলাম।
:স্যার,ওনার সাথে কিছু কথা বলতে পারি?
আমি:কেন?
কি বলবা?
নাম কি তোমার?
কোন প্লাটুন?
কার নেতৃত্বে আসছো?
:আমি রহমান। কোড "টিটিএনই"(এটা আমাদের সিক্রেট কোড। প্লাটুন চেনার উপায়)। প্রদীপ ভাইয়ের নেতৃত্বে আসছি।
আর উনি আমার বাবা হন। তাই কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
আমি শুনে বেশ অবাক হলাম। প্রদীপের দিকে তাকালাম। সে "হ্যা" সূচক মাথা নাড়লো।
[রাত ৫ টা]
হাতে আছে একঘন্টা। আমি বললাম,"জলদি করো যা করবা। তাড়াতাড়ি মেরে ক্যাম্পে ফিরতে হবে।"
রহমান:আব্বা এই দেশের খাইয়া,পইড়া এই দেশের লগেই বেঈমানি করলেন?
আপনে না আমারে ছোটকালে বলতেন,দেশ আর মা সমান। মহানবী আরবরে বাঁচাইতে বহু যুদ্ধ করছে। আর আপনিই সেইসব ভুইলা গেলেন?
আপনে পাকিস্তান ভালোবাসেন ভালো কথা কিন্তু আরেকজনের বউরে ওদের হাতে তুইলা দিলেন কেন?
আমার ৩ ডা বুইন আছে। একজনরে দিয়া দিতেন ওগো হাতে যখন এতোই ভালোবাসেন পাকিস্তান। এইডা আপনে ঠিক করেন নাই আব্বা।
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে অনুনয় করে বললো,স্যার আমি কি আমার আব্বারে মারতে পারি?
আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে মারবো।
আমার রক্ত ফুটছিলো। তবুও শান্ত হয়ে বললাম বাঁধন খুলে দাও হারামজাদার।
রহমান তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করলো। "আব্বা জাহান্নামে যাবেন জানি। চিন্তা কইরেননা। আম্মা আর বুইনেগো আমি দেখমু যতক্ষন আছি।",বলেই পেটে চেপে ধরা পিস্তলটার ট্রিগার চাপলো। মুসল্লি লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। আমি রাগ সামলাতে পারলাম না। এলএমজিটা খালি করে দিলাম।চেয়ারম্যানের মাথা নাই। সব চূর্ন-বিচূর্ন হয়ে গেছে।
রহমান:স্যার,আম্মা আর বুইনেগো রাখলে ওরাও জানোয়ারগুলার হাতে চলে যাবে।
কি করমু আমি?
আমি:নিয়ে চলো। রান্না-বান্না করে দিবে,আহত যেদ্ধাদের সেবা করবে।
রহমান:আইচ্ছা স্যার। আপনে ওনাদের নিয়া যান। আমি আব্বার লাশটা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসতেছি। এই লাশ এদেশের মাটিতে দাফন হলে অসম্মান হবে।
আমি ছেলেটার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে একজন যোদ্ধাকে ওর সাথে দিয়ে বাকি সবাইকে নিয়ে ক্যাম্পের দিকে আগালাম। গিয়েই ডায়েরি নিয়ে বসতে হবে। লিখতে হবে এই রহমানের কথা যে দেশপ্রেমের জন্য নিজের বাবাকে মারতে এক বিন্দু দ্বিধাবোধ করেনি। এমন সন্তানের জন্য বাংলা মা এখনও মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে।
ডায়রিতে আজকের শেষ কথাগুলা লিখলাম।"মা তুমি চিন্তা কোরোনা। আমি হয়তো তোমার কোলে ফিরে আসবো। কিন্তু দেখো তোমার বাকি ছেলেরা তোমাকে মুক্ত করবেই।ক্ষমা করে দিও মা তোমার এই ছেলেকে। জয় বাংলা।"
বিদ্র: এটি কোনো কাল্পনিক গল্প নয়!সম্পূর্ণ বাস্তব"
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন