শেষ আলোড়ন

*****Md Nahid Hasan Mnh (অপ্সরির রাজকুমার)
.
বসন্তের শেষ দিক। আকাশে হালকা মেঘের চলাচল,সাথে হালকা ঠাণ্ডা বাতাস। মন পাগল করা পরিবেশ। কিছুক্ষণ আগেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছে,রাস্তাগুল
ো ভিজে গেছে।সূর্যি মামা লুকোচুরি শুরু করেছে পশ্চিম দিকে। ল্যাম্পপোস্ট গুলো একে একে জ্বলে উঠছে ষোল শহরের ২ নং গেট সংলগ্ন এলাকায়।
.
ভেজা রাস্তায় গলার টাই টা আলগা করে দিয়ে ফরমাল ড্রেসের পকেটে হাত রেখে হাটছে হাসান।কাধে একটা কালো ব্যাগ।অনেকক্ষণ হাটার পর বাম পাশের পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট টা বের করলো হাসান। এক্কেবারে নতুন, একটু আগেই কিনেছে।পুরানো অভ্যাস না। আজই প্রথম।রাস্তার সমস্ত লাম্পপোষ্ট গুলো জ্বলে উঠেছে, সূর্যি মামাও অস্ত গেছে।
.
প্যাকেট থেকে একটা সিগেরেট বের করলো হাসান। তখন ওর ঠোঁট দুটো যেন চিৎকার করে বলে উঠলো “না হাসান, এই কাজ করিস না। কি জন্য নিজেকে জ্বালাচ্ছিস এই নিকোটিনের ধোঁয়ায়?কি নেই তোর?? কোন দিক থেকে কম তোর?? সব থাকতেও এই বিষাক্ত ধোয়া কেন নিবি?” কিন্তু তার মস্তিস্ক সমান তালে এর বিরোধিতা করে যাচ্ছে। প্রচুর নিকোটিন চাই তার,প্রচুর। আস্তে আস্তে সিগারেট টা মুখের কাছে নিয়ে ম্যাচ ঠুকরে কেবল আগুন দিয়েছে সিগেরেটের মুখে, ঠিক তখনই ঝুম করে আঝর ধারায় প্রকৃতি কেদে উঠলো। ধরণীর বুকে নেমে আসলো বৃষ্টি।
সাথে মুখে থাকা সিগারেট টাও ভিজে একাকার হয়ে গেলো। “কি অপার লিলা এই প্রকৃতির,দুঃখ দিবে কিন্তু ভুলতে দিবে না” মনে মনে বলল হাসান।
.
একটু আগেই দেশের স্বনামধন্য এক মেডিসিন কোম্পানির কেমিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে সে।ব্যাগের ভিতরেই জয়নিং লেটার টা রয়েছে। বৃষ্টির মাঝেই লেটার টা বের করলো হাসান ব্যাগ থেকে। এক ফোটা, দুই ফোটা করে আস্তে আস্তে পুরো লেটার টাই পানিতে ভিজে একাকার হচ্ছে আর হাসান এইসবের তামাশা দেখছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে।জীবন যেখানে তামাশায় পরিনত হয়েছে সেখানে এই সামান্য তামাশা সে অনেক উপভোগ করছে। চশমার গ্লাসের মধ্যে দিয়ে লাম্প পোষ্টগুলো সব ঝাপসা হয়ে গেছে। এতো ঝাপসা দুনিয়া মতেও ভালো লাগেনা হাসানের।তাই চশমা টা খুলে পকেটে রাখল সে।
.
কি হবে এই জয়নিং লেটার দিয়ে?যার জন্য এইসব করতে গিয়েছিলাম সেই তো নেই। মাত্র কয়েক ঘণ্টা, সব শেষ করে দিয়েছে হাসানের। স্বপ্নগুলো মাথার মধ্যে কাচের মতো শব্দ করে ভেঙ্গে গেছে হাসানের। একটু আগেই তো বিয়ে হয়ে গেছে ওর। কি হবে এই চাকরি করে?? ততক্ষনে লেটার টা ছিঁড়ে গেছে। ওটার দিকে তাকিয়ে খুব হাসি পাচ্ছিলো ওর। পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়ি গুলোও যেন তখন ওকে ঠাট্টা করে ওর গায়ে পানি ছিটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
.
এইসব চিন্তা মাথায় নিয়ে হাঁটছিল হাসান। একটা খাদ এর পাশ দিয়ে হাটার সময় রাশ কোম্পানির একটা গাড়ি অনেকটা কাদা ছিটিয়ে দিয়ে গেলো ওর গায়ে। সেদিকে কোন খেয়াল নেই হাসানের,আপন মনে হেটে চলেছে সে। গাড়িটা একটু সামনে যেয়েই পিছনের লাল বাতি জ্বালিয়ে সজোরে ব্রেক করলো। আস্তে আস্তে গাড়ির পিছনের দরজার গ্লাস নেমে গেলো আর এক ভদ্র লোক গোলা বাড়িয়ে বলল “সরি ভাই”।কণ্ঠ টা চেনা চেনা লাগলেও গুরুত্ব দিলো না হাসান। কিন্তু দেখল গাড়ির দরজা টা খুলে গিয়ে একটা লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। মাত্র বিয়ে করে ফিরছে মনে হচ্ছে,গায়ে বরের পোশাক। চশমাটা চখে না থাকাতে চিন্তে পারলো না হাসান। তবুও লোকটা দৌড়িয়ে এসে হাসানের গোলা জড়িয়ে ধরে বলল
 “কিরে হারামি আমারে চিনস নাই? কানা রয়ে গেলি সারাজীবন”। হারামি, এখান থেকে যাওয়ার সময় তো কান্না করে বিদায় দিয়েছিলি। এখন তো হাসি মুখে স্বাগতম জানা....... (শিহাব)
 কে(হাসান)
 সালা কয়েক বছর বিদেশ ছিলাম বলে এখন আর চিনতে পারছিস না!!!
এইবার হাসান ভালো করেই তাকে চিনতে পারলো। এ তার জানের দোস্ত শিহাব।পড়াশুনার জন্য কয়েকবছর আগে লন্ডন পাড়ি জমিয়েছিল।ওর কথা শুনে আর থামতে পারলো না হাসান।জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেদে উঠলো। কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলো শিহাব
 ওই, তোর আবার কি হলো সালা। এইভাবে কাদছিস কেন?(শিহাব)
 দোস্ত কিছু নারে। কেমন আছিস (চোখ মুছতে মুছতে) ((হাসান))
 দোস্ত আর যাই হক,অনেকদিন তো তোর সাথে ছিলাম। আমি তো অন্তত বুঝি তোর কিছু হইছে কিনা!!
 বাদ দে দোস্ত।তা এই বিয়ের পোষাকে কই গেছিলি? বিদেশে বুঝি সবাই বিয়ের পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়ায় ??
 হারামজাদা, তোর ফাজলামির সভাব টা কখনো গেলো না।
 আরে গেছিলি কই,বল সালা (হাসান)
 আর বলিস না। বিদেস থেকে আসার পর তো টয়লেটে গেলেও মা বকবক করতেছিল “বিয়ে কবে করবি??” আজ মেয়ে দেখতে যেয়েই বিয়ে কমপ্লিট।
 কস কি মামা !!! আমারে থুইয়াই কাম সারছোস?? হালা চল আগে ভাবি দেখে আসি। আমার সাথে দাড়ায় থেকে তো ভিজে গেছিস পুরো
 ধুর বাদ দে।চল আগে তরে আমার বউ দেখায় নিয়ে আসি
 হা হা হা। চল
দুই জন মিলে গাড়ির কাছে গেলো।
 ওই নাম টা আগে বল। আমি কি কমু তোর বউ রে?? আর মুখ যে দেখব,কিছু তো দেয়া লাগে। কিছুই তো নাই রে (হাসান)
 মাইর খাইছস বুকা***। কিচ্ছু দেয়া লাগবে না। তুই দেখছস এইটাই অনেক। নাম আরিশা(শিহাব)
নাম টা শুনেই বড়সড় ধাক্কা লাগলো হাসানের। এই নাম টাই কিছুক্ষণ আগে তার লাইফ এর সব ছিল। এই মেয়েই কি...... ধুর,দুনিয়াতে কি আরিশা একটা?? এইটা তো অন্য কেউ হতে পারে... দাড়িয়ে দাড়িয়ে এইটাই চিন্তা করছিলো সে।
 ওই, চল। কি ভাবছিস??(শিহাব)
 কিছু না, চল (হাসান)
ওদের কথা শুনে আগেই আরিশা মুখ তুলে রেখেছিল দেখার জন্য কে কথা বলছে।তাই শিহাবের বউ দেখতে বেশি বেগ পেতে হলো না। কিন্তু হাসান মেয়েটাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।একটু একটু করে পিছিয়ে আসতে লাগলো সে। কারন এই সেই আরিশা যার জন্য হাসান আজ চাকরির পরিক্ষা দিতে গিয়েছিলো তার জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে লাথি মেরে। বৃষ্টির পানিতে হাসানের চোখের অশ্রু গুলো ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যাচ্ছে। শিহাবের চর্ম চক্ষুতে হয়ত সেটা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না
 কিরে,তর ভাবি কেমন?? (শিহাব)
 ভালো রে, অনেক ভাল...অনেক সুখী হবি রে তুই.......(হাসান)
 হা হা হা্,দেখতে হবে তো কার ভাবি
 হুমম,আজ যায় রে।
 কি বলিস!! আমার সাথে চল।
 নারে দোস্ত।মা অসুস্থ।কয়েকদিন পরে আসিস দেখতে। তোর ফোন নাম্বার টা দে
 ওকে, ০১৯৫৩৩*****
 ভালো থাকিস
 হা হা হা...
রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে মনে মনে হাসান বলল “হায় খোদা তুমি আসলেই অনেক রসিক। খেলা করতে তুমি অনেক ভালোবাসো................
 তারপর?? (আমি,নাহিদ)
 তারপর আর কি, আমি পি এইচ ডি করার জন্য এখানে চলে এলাম..আর যোগাযোগ করিনি ওদের সাথে/
কথাই কথাই হাসানের সব কাহিনি জানলাম আমি। চাকরির সুবাদে পরিচয় আমাদের।ওর বাসা থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। সিগারেট এর ধোয়া গুলো ছাড়তে ছাড়তে মনে মনে বললাম “তুমি আসলেই অনেক রসিক।আকেকবার একেকজনের সাথে রসিকতা করো তুমি। কখনো হাসান আবার কখনো আমার সাথে..............................

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়