“অরণ্য মন কাঁদে”


গতকালের প্রচন্ড দাবদাহের পর হয়তো আজ বৃষ্টি
হবে।প্রকৃতিতে আজ তারই প্রস্তুতি, আকাশ কালো
হয়ে আছে।একটু পরে পরে অস্থির হাওয়া দিচ্ছে।
আয়লান এখনই স্কুল থেকে বের হলো।সে কোনদিকে
যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না।কারণ, সে এ রাস্তা-ও
রাস্তায় এলোমেলো পা ফেলছে।খুব খেয়াল করলে
বোঝা যাবে সে আজ ভীষণ অস্থির।তার মনটা
আজকের আকাশের মতো মেঘময়, ইট পাথরের এই
শহরে তার মন বসছে না।এই স্কুলে তার কোনো বন্ধু
নেই!হয়তো সে মফস্বল থেকে সদ্য উঠে এসেছে বলে
অথবা সে এখনো শহুরে আদব-কায়দা রপ্ত করতে
পারেনি বলে।কেন যে হটাৎ করে তার বাবা এভাবে
একা করে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে!কেনই বা
তাকে এই দূষিত শহরে নির্বাসন দেওয়া হলো!হ্যাঁ,
একটা উদ্দেশ্য তো আছেই!শহরে মামার কাছে থেকে
ভালো স্কুলে পড়াশুনা করে সে মানুষ হবে।আয়লান
এই সমস্ত আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে এলোমেলো
পা ফেলছে।একটু পরেই বৃষ্টি হবে,হয়তো ঝড় হবে।
ভীষণ শব্দে গাছের ডালপালা ভাংবে।আয়লানের মনটা
যেন পাখি হয়ে উড়ে যায় ‘কীর্তন খোলা’র পাড়ে;
যেখানে নির্জন, জামিল তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ঝড় শুরু হলেই তারা নিধিদের বাগানের আম কুড়াতে
যাবে।
.
আয়লানের চোখ ভিজে যায় জলে।এই তো!কিছুদিন
আগেও বিকেল বেলা বন্ধুদের সাথে সে স্কুলের মাঠে
ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকতো।
সন্ধ্যের আগে আগে মাঠ পেড়িয়ে কে কার আগে বাড়ি
পৌঁছাতে পারে তাই নিয়ে বাজি ধরতো।ছুটির দিনে
নৌকা নিয়ে বন্ধুরা চলে যেত বিলের ধারে।বড়শি
আর মাছধরার জন্য খাবার থাকতো সাথে।গল্পে
গল্পে কখন যে বিকেল গড়িয়ে বিকেল হতো!!সোনালি
রঙ ছড়িয়ে কী অদ্ভুত ভাবে সূর্য ডুবে যেতো
চোখের সামনে!সন্ধ্যেবে
লা শাপলা আর ঝুড়ি ভরা
মাছ নিয়ে আয়লন ঘরে ফিরতো।
এই ইট-পাথরের চারদেয়াল, এই ধূসর শহর তার
মনটাকে একটা লোহার শৃঙ্খলে বেঁধে রেখেছে।খানে
তার দম বন্ধ হয়ে আসে।এখানে মাঠ নেই, অবারিত
ধান ক্ষেত নেই, সবুজ অরন্য নেই, নির্জন-জামিলের
মতো বন্ধু নেই।বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।অঝোর ধারায়
বৃষ্টি।মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।বৃষ্টির শব্দে
ক্রমশ আড়াল হয়ে যাচ্ছে এক কিশোর হ্রদয়ের
বোবা কান্নার শব্দ।বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাচ্ছে সেই
কিশোরের চোখের জল, তার স্বপ্ন তার ভালোলাগার
মুহূর্ত।
.
“সাইকোলজিক্যাল ইমব্যালেন্সড”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়