যে কথা গুলো এখনো হয়নি বলা...

সেদিন শীতের এক রাতে
ফিরছিলাম আমার স্বেচ্ছাবন্দী
জীবনে আশ্রয়ে, আমার অলস আশ্রমে-
আমার এখনকার নিবাসে ।
বেরিয়েছিলাম বিকেলে।
ফিরতে অনেক রাত। হেঁটে হেঁটেই
আসছিলাম। ফেরার সময় এলোমেলো
আর অযৌক্তিক কথাগুলো বারবার
মনে হচ্ছিলো।
যে কথাগুলো কখনোই তোমাকে
বলা হয়ে ওঠেনি, সেই কথাগুলো
নিজের মন আউড়ে যাচ্ছিল ক্রমাগত।
অন্তত আমার কাছে বলা হয়ে
থাকলো আমার না বলা কথাগুলো।
তোমায় একমনে কতো কথাই না বলে
যাচ্ছিলাম।
অদ্ভুত এক সময়ে আমদের বসবাস, তাই
না ? এখানে আবেগের চেয়ে
বাস্তবতার কাঠিন্য যে অনেক
বেশী তা আমরা বুঝতে শিখে
গিয়েছি। মননের যে কোন অর্থহীন
আর পাগলামো এখন সিদ্ধান্তের
কাছে মার খেয়ে যায় নিয়ত।
যেখানে আমরা এখন টেকসই সব বস্তুর
দিকে ঝুঁকছি, সেখানে প্রতিটা
পা ফেলার আগে আমাদের দশদিক
ভাবতে হচ্ছে। তাই বাস্তবতা,
যুক্তি, বিকারহীনতার এই জগতে
আমাদের অনূভুতিগুলোকে
অনেকটাই আগাছা ভাবতে
শিখেছি। যদি কখনোবা মনটা
লাগামছাড়া হয়ে উঠতে চায়, সব
তথাকথিত সত্যগুলোকে ছুড়ে
ফেলতে চায়, তখনো আমরা
আবেগকে যুক্তি আর বাস্তবতার
ভারে চাপা দিতে শিখেছি।
আবেগের মতো অর্থহীন আর মূল্যহীন
বিষয় এখন গৌণ আর অপ্রয়োজনীয়-
তোমার নয়তো আমার কাছে।
আমরা এখনো কথা বলি
মুঠোফোনে.........এক মিনিট, দু
মিনিট, পাঁচ মিনিট আর কখনোবা
দীর্ঘ সময় নিয়ে। নিয়মিতই কথা হয়
অদৃশ্য তরঙ্গে না হয় সরাসরি
সশরীরে। আর খুদেবার্তার
লেনাদেনা তো চলছেই। কিন্তু
তুমি কি বলতে পারবে আমাদের
সম্পর্কটা কি, কেন আর কিভাবে ?
আমিও ঠিক জানি না কি বলা যায়
একে। তুমি তো নিজের অবস্থানের
ব্যাপারে অনেকটাই স্বচ্ছ ধারণা
রাখো। আমিও জানি আমার
অবস্থানটা কোথায় আর
সীমারেখার সমাপ্তিটাই বা
কোথায়। তবু বারবার আমি মাপজোক
করার মস্তিষ্কটা হারিয়ে ফেলি।
তখন আমার কি করতে হয় জানো, ওই
যে রোবটের মত নিজেকে বুঝাতে
হয়, এই বোকা তুই না হেরে যাবি,
তোর আবেগে তুই ছাড়া অন্য কোন
একটা মানুষ একটুকু কষ্টও পাবে
না......বোঝ, বোঝ, একটু বোঝার
চেষ্টা কর !!! অগত্যা ঠোঁটের ভেতর
হতে অনায়াসে দাঁত বের করে
হাসি দিয়ে আয়নার ভেতরকার
আমিকে বলি- আহ, এই তো বেশ
আছি !!! তুমিও ভালোই আছো।
আভাসে তুমই বলেছো একটা
মানুষের সাথে দীর্ঘসময় মিশতে
তোমার ভালো লাগে না। শিশুর মত
অনায়াস চিত্তে তুমি জানতে
চেয়েছ- এতে কি তোমার অন্যায়
হয়েছে? তুমি আরো বলেছো মানুষ
তার স্বার্থের জন্য আপোস করে,
তুমিও তাই করো। আর আমি তখন
এখনকার বাস্তবতার আলোয়
বুঝিয়েছি নাহ, তুমি ঠিকই আছো।
আর আমার সীমাবদ্ধতার কথাও তুমি
শুনেছো। শুনেছো আমার
কৈশোরের ভালোলাগা
মেয়েটার কথা, শুনেছো আমার
অসাধূ চোখের অবাধ বিচরণের।
আমি তোমায় আরো বলেছি জীবন
নিয়ে আমার ভয়ংকর রকমের আত্মমগ্ন
আর আমিত্ববোধের কথা। তুমিও
আমায় বলেছ, ভালো, শুভকামনা
রইলো ।
তোমাকে আমার ভালোলাগে।
একথা আমার জন্য ধ্রুবকসত্য। তুমিও
আমাকে তোমার অনেক
ভালোলাগার কথা জানিয়েছো,
ধরে নিয়েছি এটাও সত্য। আমরা
আমাদের ভালোলাগার ভালোটুকু
গ্রহণ করেছি সন্তর্পণে।
ভালোলাগা বেড়েছে
যোগাযোগটাও বেড়েছে। একটা
সময় আমরা ঠাট্টাচ্ছলেই নিজেদের
জানাচ্ছি যে আমরা আমাদের এই
যে সম্পর্ক তাকে কিন্তু সবসময় একটা
সীমানার কাঁটাতারে আটকে
রাখবো। আমরা বললাম তথাস্তু।
এগোতে থাকলো আমাদের সবকিছু।
কিন্তু আমরা কখনোই ভালোবাসতে
পারবো না য়ামাদের আরোপিত
শর্ত, যুক্তি আর বাস্তব জগতের
ব্যবহারিকতার নিমিত্তে। তবুও
আমিও মাঝে মাঝে বেসামাল হই
আবেগে, আর কখনো বা প্রকাশ পায়
তোমার দুর্বলতা। সব শেষেও মানুষ
তো আমরা।কিন্তু ওই যে আমাদের
শিখে যাওয়া মন জানান দিচ্ছে
প্রতিক্ষণ। আবেগ আর মন দিয়ে
ভালবেসো না, ভালোবাসা হয়
বাস্তবতার মাপকাঠিতে সত্যকথন আর
যুক্তির জালের ঠাসবুননে!!!! কেননা
যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে আমাদের
বন্ধুত্ব, মনন আর ভালোবাসা।
তোমাকে আমি ভালোবাসি কি
না তা আমার জানা নেই। সত্যি
বলছি ।তবে যে অনুভূতিটা হয়
সেটাকে ভালোবাসা বলে কি
না তা পার্থক্য করার সাধ্য আমার
নেই। আমার এই অন্যরকম
ভালোলাগার নাম কি সেটাও
আমি জানি না। তবে আমার এই
ভালোলাগাটা যে শুধু তোমার
সংস্পর্শেই আসে সে কথা আমি
জোর দিয়ে বলতে পারি। নিজের
কাছে , তোমার কাছেও। তুমি
বলেছিলে যে ভালোলাগা আর
ভালোবাসার পার্থক্য আমি করতে
পারবো কি না ? আমার জবাব
ছিলো না।এখনো নেই। তবে তুমি
কিন্তু বলেছিলে যে কোন মেয়েই
নাকি বুঝতে পারে কোন ছেলে
তাকে ভালোবেসেছে কিনা। এই
ক্ষমতাটা নাকি মেয়েদের
প্রকৃতিপ্রদত্ত। আচ্ছা তুমি কি আমার
দিকে কখনো দেখেছিলে আমি
তোমায় ভালোবাসি কি না ???
নিজেকে তোমার কাছে দুর্বল না
ভাবানোর জন্য বলেছি অনেক
রকমের কথা। আমি বলিনি যে আমি
আমার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে
চেয়েছি।তোমাকে যা বুঝিয়েছি
আমার উচ্চাকাংখা বলে, সেটা
আমার স্বপ্ন। একসময়ের এক স্বপ্নবাজ
এই আমি এখন সবকিছুতেই বাস্তবতার
রঙ চড়াতে ব্যস্ত। কাউকে প্রকাশ
করি না। তুমিও কি তাই ???? তুমিও
কি নিজেকে ঢেকে রাখছো
তোমার অপারগতাটুকূ আড়াল করতে?
কে জানে ? ভুলও হতে পারে
আমার। তোবে তোমার
নিঃসংকোচ স্পর্শ আর প্রশ্রয়ের
কথাগুলো আমাকে সাহসী করার
জন্য নাকি নিছক অনিচ্ছাকৃত সেটা
কি তুমি নিজেও জানো? শুধু
প্রশ্নসূচক বাক্য আর জিজ্ঞাসা
দিয়ে কেন নিজেকে আর
তোমাকে বিভ্রান্ত করছি......।
যেভাবেই চলছে সেভাবেই চলুক
না। সত্যিকারের
ভালোবাসাহীনতার এই জগতে
কেন যে আমি, তুমি ভালোবাসা
খুঁজতে যাই। অনর্থক সব
কথোপকথন............।
ভাবনাগুলো একসময় ছিড়ে যায়।
পরণের পাতলা টি- শার্ট ভেদ করে
হিম হিম বাতাস শীত লাগিয়ে
দেয়। শরীরের আর মনের শীতলতা
কাটাতে সিগারেটে কষে টান
দেই আর আমার বেসুরো কন্ঠ গাইতে
থাকে শিরোনামহীন এর মন খারাপ
করে দেয়া ভালো লাগা গান-
সংলাপ সব পড়ে থাক
বৃষ্টিতে মন ভিজে যাক
ভালোবাসা মেঘ হয়ে
যাক...............।
ভালোবাসাকে মেঘে উড়িয়ে
দিয়ে, বর্ষণের প্রতীক্ষায় না
থাকা এই আমি হাঁটতে থাকি
আমার একলা পথে , যাত্রা গন্তব্যে
হলেও উদ্দেশ্য অনিশ্চিত। অনেকটা
এই যন্ত্রসময়ের কলকব্জাঅলা মানুষের
এলোমেলো মনের আনমনা ছুটে
চলার মতো.........।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দিশাহীন চোখে খুজে যাই

হায়রে জীবন আর তার কঠিনতম বাস্তবতা....

ভালোবাসা ভালোলাগা এক নয়